বুধবার, ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বেশি করে গাছ লাগাই পরিবেশ সুন্দর রাখি

বেশি করে গাছ লাগাই পরিবেশ সুন্দর রাখি
৭২ Views

মোঃ জামাল হোসেন\ মানুষের জীবন ও জীবিকার সাথে উদ্ভিদের সর্ম্পক গভীরভাবে জড়িত। মৌলিক মানবিক চাহিদার সবগুলোই মানুষ উদ্ভিদ থেকে পেয়ে থাকে। শুধু মানুষ নয়; প্রাণী জগতের প্রায় জীবই উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। প্রাণী বা মানুষ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করে ফল ফলাদির মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি দেশের ২৫% বনভুমি থাকা প্রয়োজন। প্রাণিকুল যে পরিমাণ অক্সিজেন রক্ত সঞ্চালন ও পরিশুদ্ধির জন্য গ্রহন করে তা পুরোটাই উদ্ভিদ থেকে পেয়ে থাকে। বায়ু মন্ডলে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য গাছের বিকল্প নেই। আবার মানুষ প্রাণী প্রশ্বাসের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই- অক্সাইড ত্যাগ করে। উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও ফল ফলাদির জন্য কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রয়োজন পড়ে। এ জন্য উদ্ভিদের জীবনের সাথে প্রাণীর জীবন গভীর সর্ম্পকভাবে সর্ম্পকযুক্ত। আবার মরুভুমিতে গাছপালা তেমন না থাকায় মানুষের আনাগোনা নেই বৃষ্টিপাতও হয়না। অতি প্রাচীন কাল থেকে মানুষের রোগব্যাধির চিকিৎসায় উদ্ভিদের পাতা লতা শিকড় বাকল মূল ব্যবহার করে আসছে। যেখানে সাধারণত গাছপালা থাকে না সেখানে বৃষ্টিপাতও হয়না। ফসল শস্যদি হয়না। গাছপালাকে অক্সিজেন তৈরির কারখানাও বলা হয়। আমাজান বনভুমি ৯টি দেশব্যাপী বিস্তৃত। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করে। উদ্ভিদ নদীভাঙ্গন মাটির ক্ষয়রোধ উর্বরতা রক্ষা পরিবেশ সংরক্ষণ এবং আবহাওয়ার সুশীতলতা দান করে। প্রখর রোদের তাপদাহ নিদাঘ রোধের জন্য গাছপালা রোপণের বিকল্প নেই। গ্রীষ্মের প্রচন্ড রৌদ্রে বৃক্ষ ছায়া ও শীতলতা দান করে।মাত্রাতিরিক্ত বৃক্ষ ছেদনের ফলে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে বরফঘন এর্ন্টাটিকা মহাদেশের দ্রæত বরফ গলে পৃথিবীর নি¤œাঞ্চল ধীরে ধীরে নিমজ্জিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক ভাটি ও সমুদ্র উপকুলের দেশ পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। বিশ্বের নিরক্ষীয় ও মৌসুমী অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। নিয়মিত বৃষ্টিপাতের নিশ্চয়তার জন্য প্রচুর পরিমাণে কৃত্রিম বন সৃষ্টি ও গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। বৃষ্টিপাতের জন্য বায়ুমন্ডলে প্রচুর জলীয় বাষ্পের সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়। প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানোর মাধ্যমে তা সম্ভব। গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত আদ্রতা রাখতে পারলে সারা বছরই গাছ লাগানো সম্ভব। বর্ষাকালই গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। জুন, জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে গাছ লাগালে বর্ধন ভালো হয়। সরকারি বেসরকারি নার্সারীতে প্রচুর পরিমাণে ফলজ বনজ ভেষজ এবং বৃক্ষজ বীজ উৎপাদন সরবরাহের মাধ্যমে চারা গাছ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রতি বছর বর্ষায় লক্ষ লক্ষ চারা গাছ বিনা মূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ বাতাস পরিশোধন করে মাটির গুনাগুন উন্নত করে। বুনো পশুপাখির নিরাপদ আবাসনের জন্য বনভুমি সৃষ্টির বিকল্প নেই। গাছ সৌর্ন্দয বৃদ্ধি মনোরম পরিবেশ তৈরি করে। গাছ থেকে খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান ফুলফল কাঠ অক্সিজেন (অ¤øজান) আঁশ বিভিন্ন ভেষজ উপাদান পাওয়া যায়। একটি পুনাঙ্গ বৃক্ষ বছরে ২৫০ পাউন্ড অক্সিজেন বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে দেয়। সালোক সংশ্লেষণের সময় গাছ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহন করে অক্সিজেন উৎপন্ন্ করে। বিস্তৃত বনাঞ্চলের গাছপালা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুকে ঘনীভূত করে বৃষ্টিপাত ঘটায়। গাছ ঝড় তুফানকে বাধা দিয়ে ঘরবাড়ি জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে। বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ রক্ষা আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে এখনো গ্রামাঞ্চলে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহৃত হয়। মৌরি নিম তুলসী অশ্বগন্ধা হলুদ অর্জুন ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) সর্পগন্ধা শুন্ঠি (আদা) জায়ফল কালামেঘ হরিতকী যত্রিক থানকুনি বহেড়া শতমুলী বাসক পুদিনা ভৃঙ্গরাজ পুর্ননবা ব্রাক্ষী আমলকী তূঁত প্রভৃতি গাছ উপকারী ভেষজ। এগুলো দিয়ে বিভিন্ন উপকারী আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরি হয়ে থাকে। তাছাড়া কিছু কিছু বৃক্ষ থেকে ধূনা গদঁ লাক্ষা কার্পুর তারপিন তৈল ও রবার পাওয়া যায়। সুগন্ধী এবং আসবাবের ভার্নিশের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বনাঞ্চল থেকে ফল, ফুল, মোম, মধু ও কাঠ পাওয়া যায়। গাছ থেকে কাগজ তৈরির মন্ড রেয়ন শিল্পের কাচাঁমাল ও দিয়াশলাই তৈরি করা হয়। সৌখিন গৃহ সাজানোর জন্য কাঠের আসবাবের বিকল্প নেই। প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য গাছ রোপণের বিকল্প নেই। বাংলাদেশে কৃত্রিম বনাঞ্চল সৃষ্টির মাধ্যমে বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হবে। বুনো পশুপাখির নিরাপদ আবাস সৃষ্টি করে তাদের বংশ বিস্তারে সহযোগিতা করতে হবে। বাঁধ বসতবাড়ির আঙিনা পতিত স্থান পুকুরের পাঁড় খাসজমিতে ব্যাপকভাবে গাছ লাগাতে হবে। আমাদের ক্রমবধর্মান জনসংখ্যার জন্য বন ও পতিত ভুমিতে গৃহ নির্মাণ এবং ফসল উৎপাদনের জন্য গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। কাঠের চাহিদা পূরণের জন্য স মিলগুলোতে লক্ষ লক্ষ গাছ কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধির ফলে অধিক সংখ্যক গাছ বিনষ্ট হচ্ছে। সামাজিক বনায়নে দেয়া হচ্ছে না কোন প্রশিক্ষণ। বন সংরক্ষণ আইনের কোন যথাযথ ব্যবহার হচ্ছেনা। তাছাড়া সরকারি বন ডাকাতদের দৌরাতেœ্য বনভুমি দ্রæত নিঃশেষ হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে বনভুমির পরিমাণ মাত্র ৮%। দেশে গাছের অপ্রতুলতায় গৃহস্থালি কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারে দিন দিন পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন নির্মাণ কাজ এবং আসবাবের জন্য গাছ কেটে পরিবেশ নষ্ট করছে। অধিক হারে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কলকারখানার ধোঁয়া ইটের ভাটার ধোঁয়া অধিক কার্বন নিঃসরণ করে পরিবেশ দূষিত ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করছে। পরিশেষে বাংলাদেশের মত মৌসুমী জলবায়ুর অঞ্চলে পর্যাপ্ত বনভুমি ও গাছপালার অভাবে অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি খরা ঘুর্ণিঝড় জলোচ্ছ¡াস প্রতিবছর লেগেই আছে। বৃক্ষ হ্রাস গ্রীন হাউজ এফেক্ট ও পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করছে। শহর অঞ্চলে গাছ কম থাকায় উচ্চ মাত্রার শব্দ দূষণ হচ্ছে। গাছ কেটে পরিবেশের সৌর্ন্দয ও নয়নাভিরাম দৃশ্য বিলীন হচ্ছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ‘ইকো সিস্টেম’ সচল রাখার জন্য বিশেষ করে জলবায়ুর রুদ্র মূর্তি সামাল দেয়ার জন্য বৃক্ষ রোপণের বিকল্প নেই। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুষ্ঠু নিরাপদ আবাস ভূমি প্রদানের জন্য আমরা সবাই বেশি বেশি করে গাছ লাগাই এবং এটাকে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলি।
লেখকঃ শিক্ষক, ফুলগাঁও ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, লাকসাম কুমিল্লা

Share This

COMMENTS