বৃহস্পতিবার, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন, গণভোটে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ইসি

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন, গণভোটে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ইসি
২৮ Views

নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে। চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যেই প্রাক্‌–প্রস্তুতির কাজ শেষ করে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত গণভোট আয়োজন নিয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি নেয়নি ইসি। সরকার এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত দেবে, কমিশন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিন একসঙ্গে হোক বা আগে হোক—এ জন্য কিছু অতিরিক্ত প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকারের নির্দেশনা পাওয়ার পরই সেই প্রস্তুতি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।

সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট আয়োজনের দিকেই প্রস্তুতি এগোচ্ছে।

বর্তমানে নির্বাচনের বড় প্রস্তুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে—ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ, আসনসীমা পুনর্নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র চূড়ান্তকরণ, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম কেনা, কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, নতুন রাজনৈতিক দল ও দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন প্রদান ইত্যাদি। এসবের অনেকটাই এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

খসড়া অনুযায়ী এবার ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৩৮৪ জন। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হতে পারে ১৮ নভেম্বর। একই দিন উদ্বোধন হতে পারে প্রবাসী ভোটারদের জন্য ইসির বিশেষ অ্যাপ, যার মাধ্যমে তারা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।

ইতিমধ্যে ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে; কয়েকটি আসনে রিট থাকলেও ইসি আশা করছে নভেম্বরের মধ্যেই সেগুলো নিষ্পত্তি হবে। নির্বাচনের জন্য ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি বুথ নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও চলছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ নজর দিচ্ছে ইসি। এ বিষয়ে এক দফা বৈঠক হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর আরও বৈঠক হবে।

এদিকে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার, যা ইসিকে প্রার্থীদের আচরণবিধি চূড়ান্ত করতে সহায়তা করবে।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কিছুটা দেরি হলেও ইসি ইতিমধ্যে তিনটি নতুন দল—এর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)—কে নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দাবি–আপত্তি নেওয়া হবে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত।

নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে, তবে নতুন দলের নিবন্ধন চূড়ান্ত না হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ এখনো শুরু হয়নি। ইসি পরিকল্পনা করছে চলতি মাসেই সংলাপ শেষ করবে।

কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি পুরোদমে নেওয়া হচ্ছে।

জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান–সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে গণভোটের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, তবে এর সময় নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে—বিএনপি চায় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হোক, আর জামায়াতে ইসলামী চায় গণভোট আগে হোক

ইসি জানায়, সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে তারা। গণভোট জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে হলে খরচ কিছুটা কম হবে, তবে বুথ ও ব্যালট বাক্স বাড়াতে হবে। আর আগে হলে ব্যয় ও প্রশাসনিক চাপ দুটোই বাড়বে।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “গণভোট বিষয়ে এখনো সরকারের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। আপাতত জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিই আমাদের মূল লক্ষ্য।”

Share This

COMMENTS