রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংশয় ও আতংকে ভুগছে যাত্রীরা  কুমিল্লা জুড়ে রেললাইনের নাট-বল্টু চুরির হিড়িক

সংশয় ও আতংকে ভুগছে যাত্রীরা কুমিল্লা জুড়ে রেললাইনের নাট-বল্টু চুরির হিড়িক

Views

            আবদুর রহমান\ ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লা অংশে বিভিন্ন স্টেশন এলাকায় নাট-বল্টুসহ যন্ত্রাংশ চুরির হিড়িক পড়েছে। এতে রাতে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এসব চুরির ঘটনায় মামলা হলেও কেউ শনাক্ত বা গ্রেপ্তার না হওয়ায় জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে।

            কুমিল্লা রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত ৩০শে অক্টোবর রাতে ময়নামতি রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় রেলপথের মেইন লাইনের আট সেট ¯ø­াইড চেয়ার প্লে­ট, লক প্লে­ট, টি বোল্ট কে ক্লিপ উইথ নাট ও ৪৮৮টি স্ক্রু স্পাইক খুলে নিয়ে যায় চোরের দল। এ ঘটনায় তদারকির দায়িত্বে থাকা কি-ম্যান জহিরুল ইসলাম তালুকদার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে লাকসাম রেলওয়ে থানায় মামলা করেন। তবে ২০ দিন পার হলেও ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

            সর্বশেষ গত ১৫ ও ১৭ই নভেম্বর রাতে ওই স্টেশনসহ আশপাশের এলাকায় কয়েক শ নাট-বল্টু খুলে নিয়ে গেছে চোররা। এর আগে মে মাসের বিভিন্ন সময়ে লাকসাম-আখাউড়া ডাবল রেললাইন প্রকল্পে পাঁচটি স্টেশনের ৬৭টি পয়েন্ট মেশিনের মধ্যে ২৫টির মোটর চুরি হয়ে যায়। লালমাই উপজেলার আলীশহর, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই ও ময়নামতি, কুমিল্লা সদরের কুমিল্লা এবং বুড়িচংয়ের রাজাপুর স্টেশন এলাকা থেকে মোটরগুলো চুরি হয়।

সবচেয়ে বেশি চুরির ঘটনা ঘটে লালমাই ও ময়নামতি স্টেশনে। লালমাইয়ে ১২টির মধ্যে আটটি এবং ময়নামতিতে ১০টির সব কটিই চুরি হয়ে যায়।

            লাকসাম-আখাউড়া ডাবল রেললাইন প্রকল্পের আওতায় এসব স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মেশিন স্থাপন করা হয়। সিগন্যাল পদ্ধতি আধুনিকায়নে প্রতিটি মেশিন কেনা হয় ১৫ লাখ টাকায়। সেই হিসাবে মোটরগুলোর দাম ছিল প্রায় চার কোটি টাকা। পরে নতুন করে মোটর বসাতে গিয়ে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীনে পড়তে হয় রেলওয়েকে।

            এদিকে গত ২৬শে আগস্ট লাকসাম রেলওয়ে জংশন এলাকা থেকে ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ডিপোর টুল ভ্যানের কোটি টাকার মালপত্র চুরি হয়ে যায়। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের বগি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বহন ও সংরক্ষণে এই বিশেষ বগি বা টুল ভ্যান ব্যবহার করা হয়। এটি রেলওয়ে ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ডিপোর ইনচার্জ ট্রেন এক্সামিনার (হেড টিএক্সআর) এবং ওই বিভাগের স্টোর মুন্সির দায়িত্বে থাকে। বগিটি দীর্ঘদিন ধরে লাকসাম রেলওয়ে জংশনের উত্তর পাশে সংরক্ষিত একটি পকেট লাইনে রাখা হয়।

            গত ২৬শে আগস্ট ৪ নম্বর আপ সমতট এক্সপ্রেস ট্রেনের ৪০১ নম্বর কোচ-এসের সেলভেজ করার জন্য ওই দিন দুপুরে মালপত্র আনতে এটিএক্সআর কফিল উদ্দিন ও ফিডার স্টাফ হরেকৃষ্ণ গিয়ে দেখেন, ভ্যানের তালা ভাঙা। পরে তালা খুলে দেখেন, টুল ভ্যানে জেনারেটর ও কাঠের কয়েকটি ¯িø­পার ছাড়া কিছুই নেই। রাতে ওই টুল ভ্যানের বিভিন্ন ধরনের ৫৬টি মাল চুরির ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা করেন লাকসাম রেলওয়ে জংশনের হেড টিএক্সআর জাকির হোসেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা থেকে ২৬ আগস্ট দুপুর ১২টার মধ্যে এই চুরির ঘটনা ঘটে।

            রেলওয়ে কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু রেল পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়ে বেশির ভাগ নাট-বল্টু চুরি হয়েছে মেইন লাইন থেকে। এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

            তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনার পর আমরা আবার সব যন্ত্র লাগিয়েছি। কিন্তু যেভাবে একের পর এক নাট-বল্টুসহ বিভিন্ন মাল চুরি হচ্ছে, তাতে এর পেছনে নাশকতার কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না সেটিও তদন্ত করে দেখতে হবে পুলিশকে। রাতে রেলপথে পুলিশের টহল বাড়াতে হবে।’

তদন্তে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে লাকসাম রেলওয়ে থানার ওসি মুরাদুল্লাহ বাহার বলেন, ‘সম্প্রতি কয়েকটি স্থানে রেললাইনের নাট-বল্টুসহ যন্ত্রাংশ খুলে নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে থানায় একটি মামলা হয়েছে এবং আরো একটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে। আমি এখানে সম্প্রতি যোগদান করেছি। তবে যতটুকু জানি, অতীতের কয়েকটি ঘটনায় মামলা, আসামি গ্রেপ্তার ও আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে।’

            তিনি আরো বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই রেলপথের নাট-বল্টু চুরির ঘটনা ঘটছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাদকসেবী ও টোকাইরা এগুলো চুরি করে ভাঙ্গারি দোকানে নিয়ে বিক্রি করে। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। টহল বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রæত সময়ের মধ্যে দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’

Share This