শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হারানো মায়ের খোঁজ পেয়েও ফিরিয়ে আনল না ছেলে, ঠাঁই হলো বৃদ্ধাশ্রমে

হারানো মায়ের খোঁজ পেয়েও ফিরিয়ে আনল না ছেলে, ঠাঁই হলো বৃদ্ধাশ্রমে

নিজস্ব প্রতিনিধি: রংপুরের পীরগাছা রেলস্টেশন ও মীরবাক বাজারে চাকচিক্য পোশাকে দীর্ঘ সময় ঘোরাফেরা করছিলেন ষাটোর্ধ্ব মহিলা মালেকা বেগম। তাঁর ঘোরাফেরার বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় দুই যুবক ফুয়াদ শাহরিয়ার ও বেলাল হোসেনের। মালেকা বেগমকে নাম ঠিকানা  জিজ্ঞেস করলে তিনি নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেননি। পরে ওই দুই যুবক ছবি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট করেন। এক পর্যায়ে বের করেন মালেকা বেগমের নাম ও ঠিকানা। মালেকা বেগমের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে তাঁর একমাত্র ছেলে তাঁকে ফিরিয়ে নেয়নি বাড়িতে। শেষে মালেকা বেগমের ঠাঁই হয়েছে পীরগাছার দেবী চৌধুরানী বয়স্ক পূনর্বাসন কেন্দ্র নামক বৃদ্ধাশ্রমে।

জানা গেছে, মালেকা বেগম দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার ৪নম্বর দিওড় ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের ধানঘরা গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও তাঁর ছেলে শামীম মিয়া।

ধানঘরা গ্রামের মালেকা বেগমের প্রতিবেশি আজমল হোসেন জানান, মালেকা বেগম দীর্ঘ দিন ধরে মানসিক রোগে আক্রান্ত। তাঁর ছেলের নাম শামীম মিয়া, পেশায় দিনমজুর। তিনি কখনো গ্রামে কখনও বাইরে দিনমজুর করে কোন রকমে সংসার চালায়। তাঁর মা দীর্ঘদিন থেকে  মানসিক সমস্যা সহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন এবং মাঝে মধ্যে বাড়ির কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ করেই এদিক সেদিক চলে যায়। কখনও একাই বাড়ি চলে আসেন আবার কখনো কেউ শামীমকে জানালে সে নিয়ে আসে। এবার যে কেন নিয়ে আসেনি সেটা জানা যায়নি।

উপজেলার ৪নম্বর দিওড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মন্ডল জানান, মালেকা বেগমের হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। তিনি  নাকি মানসিক সমস্যার রোগী।  গত ১৮ নভেম্বর  রংপুরের পীরগাছা থেকে মোবাইলে আমার কাছে  জানতে চাওয়া হয় মালেকা বেগমের বিষয়ে।  মোবাইলে কলের সূত্র ধরেই আমি জানতে পারি যে, মালেকা বেগমের বাড়ি আমার ইউনিয়নের ধানঘরা গ্রামে। এবং  মৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও শামীম মিয়ার মা ।

তিনি আরও বলেন, মালেকা বেগম নাকি মাঝে মধ্যে বাড়ির কাউকে না বলেই এদিক সেদিক চলে যান। অন্যদিকে ছেলে শামীম মিয়াও কিছুটা মানসিক রোগে আক্রান্ত। তাঁর তেমন আয় রোজগার নেই। নিজের সংসার চালাতেই হিমশিম খায়। মায়ের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতেও অক্ষম।

চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মন্ডল আরও বলেন, শামীমের সংসার অসচ্ছল হওয়ার তাঁকে ১৫ টাকা কেজি মুল্যের খাদ্য কর্মসূচীর চালের কার্ড ও পারিবারিক (টিসিবি) কার্ড দেওয়া হয়েছে। আগামীতে সরকারের আগত যেকোন কর্মসূচীর অনুদান প্রদান করা হবে।

মালেকা বেগমের ছেলে শামীম মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,  আমার মা একজন মানসিক রোগী। প্রায়ই বাড়ি থেকে বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়। তাঁকে ফিরিয়ে আনতে আনতে আমি ক্লান্ত। আমি তাঁকে বার বার ফিরিয়ে আনতে ও তাঁর চিকিৎসা করতে পারছিনা।

দেবী চৌধুরানী বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক রাজেকা বেগমের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘মালেকা বেগম মাঝেমধ্যেই তাঁর ছেলেকে দেখতে চান। এখানে আসার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর পরিবারের কেউ দেখতে আসেননি।’

Share This