রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লার নিমসার বাজারে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের ওপর অবৈধ স্থাপনা

কুমিল্লার নিমসার বাজারে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের ওপর অবৈধ স্থাপনা

Views

            আবদুর রহমান\ কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নিমসার বাজার এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জায়গা দখল করে অর্ধশতাধিক দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গা দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব দোকারঘর বানিয়েছে। মোটা অঙ্কের টাকা অগ্রিম নিয়ে দোকানঘরগুলো ভাড়া দেয়া হয়েছে।

            স্থানীয়রা জানায়, ২০১৬ সালে চালু করা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয়মুখী লেন গেছে নিমসার বাজারের ওপর দিয়ে।

এর পর থেকে সওজের জমি জবরদখল শুরু হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী লেনের মাঝখানের জমিও দখল করা হয়। পর্যায়ক্রমে সেখানে টিনের অর্ধশতাধিক ঘর নির্মাণ করা হয়। এর বাইরেও মহাসড়কের আশপাশে দু’শতাধিক দোকানঘর বানানো হয় সওজের জমিতে। এসব দোকানের বেশির ভাগ ব্যবহার হচ্ছে সবজিসহ কাঁচামালের আড়ত হিসেবে।

            জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৯শে ডিসেম্বর উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে সওজের জমি থেকে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। কিন্তু সেই অভিযানের এক মাসের মধ্যেই একের পর এক দোকানঘর তোলে প্রভাবশালীরা। ক্রমশঃ দখলদারি বাড়তে থাকে।

            স্থানীয়রা জানায়, বুড়িচং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. গোলাম ফারুক প্রভাব খাটিয়ে সওজের জমি দখল করেছেন। গোলাম ফারুক নিমসার এলাকার বাসিন্দা। তিনি ছাড়া পাশের পরিহলপাড়া এলাকার রুহুল আমিনও জবরদখলের সঙ্গে জড়িত। এই দু’জন বাদে আরো অন্তত ২৩ জন সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছেন। এসব দোকান থেকে মাসে ৩০ লাখ টাকার বেশি ভাড়া ওঠে।

            সরেজমিনে দেখা গেছে, নিমসার উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে চট্টগ্রামের দিকে অন্তত ৩শ’ মিটার জায়গাজুড়ে মহাসড়কের চার লেনের মাঝখানের ওই জায়গায় অর্ধশতাধিক আড়ত ও দোকান। খাবারের কয়েকটি হোটেলও আছে। বিভিন্ন ধরনের সবজির পাশাপাশি সেখানকার আড়ত ও দোকানে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ফল ও কাঁচামাল। ওই দোকানগুলোর বিষয়ে কারো সঙ্গে কথা বলতে ‘নিষেধ’ করেছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যবসায়ী।

            নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সবজি ব্যবসায়ী জানান, আড়াই লাখ টাকা অগ্রিম ও মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় দোকানটি ভাড়া নিয়েছেন তিনি। এখানে প্রতিটি দোকানের ভাড়া ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। প্রতিটি দোকান বাবদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রিম নেয়া হয়েছে এক থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত।

            বাজারে অন্তত ১০ জন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একের পর এক অবৈধ দখলের কারণে বাজারজুড়ে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা। এসব কারণে নিমসার এলাকায় প্রায় সময়ই যানজট লেগে থাকে।

            জানতে চাইলে রুহুল আমিন বলেন, ‘সিএস খতিয়ানে এসব সম্পত্তি আমাদের বাপ-দাদাদের। ১৯৫৬ সালে সওজ কর্তৃপক্ষ এই সম্পত্তি রিকজিশন করেছিল, অধিগ্রহণ নয়। যত দিন পর্যন্ত সরকারের কাজে না লাগবে তত দিন আমরা এই সম্পত্তি ভোগ করব। ২ মহাসড়কের মধ্যখানের ওই স্থানে বর্তমানে আমার দখলে ১০টির মতো দোকান রয়েছে। বুড়িচং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. গোলাম ফারুকের ৩০টার বেশি দোকান আছে। মূলত আমরাই তো এই সম্পত্তির মালিক ছিলাম। যত দিন এই সম্পত্তি ফাঁকা থাকবে, তত দিন আমরাই ভোগদখল করব।’

            উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বলেন, ‘সওজ নেয়ার আগে এসব সম্পত্তি ছিল আমাদের এবং যাঁরা দোকান তুলেছেন সেসব ব্যক্তির পূর্বপুরুষদের। অধিগ্রহণের কয়েক বছর পর থেকেই সেখানে এভাবেই দোকান তোলা হচ্ছে। পুরো বাজারে টিনের চালার যতগুলো দোকান ঘর আছে, তার সবই সওজের সম্পত্তির ওপর নির্মিত হয়েছে। সরকার প্রয়োজনে যেকোনো সময় দোকান ভেঙে ফেলতে পারবে- এমন শর্তেই আমরা দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছি।’

            সওজ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, ‘মহাসড়কের নিমসার বাজার ও আশপাশের অংশে যেসব অবৈধ স্থাপনা আছে সবই আমাদের অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তিতে। আমরা এর আগেও একাধিকবার সম্পত্তি উদ্ধার করেছি। বর্তমানে ওই বাজারে একটি পদচারি সেতু নির্মিত হচ্ছে। সেটির কাজ শেষে স্থানীয় প্রশাসনসহ যত দ্রæত সম্ভব আমাদের সব সম্পত্তি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’

            জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহিদা আক্তার বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সওজ থেকে কোনো চিঠি দেয়া হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। সওজের চিঠি পেলে দ্রæত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

Share This