শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিক্ষামন্ত্রীর সুযোগ্য পিএস ‘শাহগীর আলম’

শিক্ষামন্ত্রীর সুযোগ্য পিএস ‘শাহগীর আলম’

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ নব নিযুক্ত শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলেরর একান্ত সচিব (পিএস) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. শাহগীর আলম।

            জানা গেছে যে, গত ১৪ই জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কানিজ ফাতেমা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে শাহগীর আলমকে শিক্ষা মন্ত্রীর পিএস পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি এর আগে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব পদে কর্মরত ছিলেন। তার আগে মো. শাহগীর আলম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

            ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হওয়ার আগে মহিবুল হাসান চৌধুরী শিক্ষা উপমন্ত্রী থাকাকালীন সময়েও তাঁর একান্ত সচিব ছিলেন শাহগীর আলম।

            মো. শাহগীর আলম চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নের রশিদপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের একজন কৃতি সন্তান। গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সাবেক প্রকৌশলী মৃত মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ এর একমাত্র গর্বিত সন্তান মো. শাহগীর আলম ২৪তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে উর্ত্তীন হয়ে ২০০৫ সালে মাগুরায় ম্যাজিষ্ট্রেট পদে যোগদান করেন। এর পর তিনি খুলনা জেলায় এনডিসি, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি ও শ্রীপুর উপজেলায় এসিল্যান্ড হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এর পর ২০১১-২০১২ সালের দিকে কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলায় সুযোগ্য নির্বাহী অফিসার হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্বে থাকা কালীন সময়ে শাহগীর আলম সরকারিভাবে জাপানে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান।

            পরবর্তিতে ২০১৬ সালে দেশে ফিরে জনাব শাহগীর আলম ঢাকা আগারগাঁওতে আইসিটি ডিভিশনে যোগদান করেন। এর পর বাংলাদেশ সচিবালয়ে উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০২০ সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে তৎকালীন শিক্ষা উপ-মন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত থাকাকালে মোঃ শাহগীর আলম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।

            শাহরাস্তি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সূচীপাড়া ডিগ্রি কলেজের এসিস্টেন্ট প্রফেসার ও লাকসামবার্তা পত্রিকার খন্ডকালীন সংবাদদাতা মো. আবুল কালাম জানান, ‘মূলত: মো. শাহগীর আলম ছাত্র জীবন থেকেই স্বদেশ প্রেমী মানুষ ছিলেন। জানা মতে, ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাষ্টার্স সমাপ্ত করেই তিনি বিসিএস পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারে উর্ত্তীন হয়েছিলেন।

            মো. শাহগীর আলম-এর সুযোগ্য পিতা মৃত আবদুল ওয়াহেদও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে চাকুরী জীবন সমাপ্ত করেছেন। মো. শাহগীর আলমও ঠিক সেভাবেই সরকারি চাকুরী জীবনে সবখানেই জনসাধারণের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কায়েম রেখে চলেছেন। দায়িত্ব পালনের সকল কর্মক্ষেত্রেই তিনি বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন বলে ইতিমধ্যে কয়েকটি পত্র-পত্রিকার পাতায়ও তাঁর প্রশংসা করে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বর মাসেও একটি দৈনিকে খবর ছাপা হয়েছে যে, ”আর্থিক সহায়তা নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ কৃতি শিক্ষার্থী আনিকা আক্তারের পাশে দাঁড়ালেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ডিসি মো. শাহগীর আলম।” তিনি পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য এই কৃতি শিক্ষার্থী ও তার মায়ের হাতে নগদ ২০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলেন। জানা যায় যে, আনিকা বি.বাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শালকান্দি গ্রামের মৃত মো: ফারুকুল ইসলামের মেয়ে। বাবাকে হারানোর পর মায়ের ত্যাগ আর লড়াইয়ের জীবনের সংগ্রামে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছিল আনিকা। শ্বশুরবাড়িতে স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির মধ্যে মাত্র ১ শতক জায়গায় জরাজীর্ণ ও ভাঙাচোরা একটি টিনের ঘরে মেয়েকে নিয়ে বসবাস করে যাচ্ছেন আয়েশা খাতুন। আনিকা আক্তার যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত- তখন না ফেরার দেশে চলে যান তার বাবা মো. ফারুকুল ইসলাম। এরপর দারিদ্রোর সংসারে আনিকাকে নিয়ে একাই পাঁচটি বছর জীবন যুদ্ধ চালান মা আয়েশা খাতুন। বই কেনা, বিদ্যালয়ের বেতন, পরীক্ষার ফি ও ফরম পূরণের টাকা দেয়ার মতো টাকাও ছিল না তাদের হাতে। বড় কষ্টের সংসারে দারিদ্রতা কাছ থেকে দেখে বড় হয়েছে আনিকা। তবে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি সংগ্রামী আনিকার অদম্য লড়াইয়ের সামনে।

            এর মধ্যে ২০২৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ভোলাচং উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে সকল বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে আনিকা। এতে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে এই কৃতি শিক্ষার্থী। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে এইচএসসি পর্যায়ের পড়াশোনার খরচ চালানোর ভবিষ্যৎ নিয়ে।

            এর মধ্যে সামান্য সহায়তা পাওয়ার ভাগ্য খোলে তার। সুনজর পড়ে ডিসির। এ প্রসঙ্গে তৎকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ডিসি মো. শাহগীর আলম জানিয়েছেন যে, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই কৃতি শিক্ষার্থীকে ২০ হাজার টাকার সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু এই শিক্ষার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, তাই সেখানে পড়াশোনার খরচ তেমন হবে না। নিয়মিত ক্লাশে উপস্থিত থাকলে এবং মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে এই শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল করতে পারবে।’ পাশাপাশি তিনি এই শিক্ষার্থী ও তার মাকে সহায়তা ববাদ দেয়া টাকা কেবল পড়াশোনার জন্যই খরচ করার পরামর্শ দিয়েছেন। আর আনিকা খুব খুশী হয়ে বলেছিলেন যে, ‘সহায়তা পেয়েছি। ডিসি স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ। সামনে পথটা আরো সংগ্রামের। এই সংগ্রামে যে করেই হোক জয়ী হতেই হবে। এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের হোস্টেলে একটি সীট পেলেই হয়। প্রয়োজনে টিউশনি করবো, তবুও পড়াশোনা চালিয়ে যাব।’ এ ব্যাপারে আনিকার মা আয়েশা খাতুনও বলেছেন যে, ‘মেয়ের বাবা বেঁচে নেই। আমার আয়ের কোনো উৎসও নেই। এমতাবস্থায় নগদ টাকার সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য অত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহৃদ জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম সাহেবকে আমরা অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।’

Share This