কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

ষ্টাফ রিপোর্টার\ আর মাত্র ৩ দিন পরই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচন। প্রচারনার শেষ মুহূর্তে প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোটারদের মাঝে চলছে ভোটের সমীকরণ। দলীয়ভাবে না হলেও দু’টি রাজনৈতিক ধারার একাধিক প্রার্থী ভোটের মাঠে থাকায় চার মেয়র প্রার্থীরই ব্যক্তিগত দোষ-গুণ, সক্ষমতা ও পারিবারিক-সামাজিক ঐতিহ্য ভোটারদের কাছে চুলচেরা বিশ্লেষন হচ্ছে। মনিরুল হক সাক্কু, তাহসীন বাহার সূচনা, নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম ও নিজাম উদ্দিন কায়সার- এই চার মেয়র প্রার্থীই নগরীর পরিচিতমুখ। যে কারণে ভোটারদের পাল্লা কার দিকে ভারী থাকবে- তা প্রমাণ হবে সুষ্ঠু ভোটের মধ্য দিয়ে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন জানান, সুশৃঙ্খল পরিবেশে নির্বিঘœভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আর ভোটাররা জানান, ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা ভালো থাকলে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে হাড্ডাহাড্ডি।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন উপ-নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী দুই বারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতিতে জেলায় উচ্চপদে সক্রিয় থাকলেও দলের অমতে গিয়ে নির্বাচন করায় ২০২২ সালে বহিষ্কৃত হন। তারপরও মহানগরের রাজনীতিতে তার একটি বড় প্রভাব রয়েছে। এছাড়া টানা দুই বার মেয়র ও এর আগে দুইবার পৌর চেয়ারম্যান থাকায় প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারি। তবে তার দলেরই আরেক নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার প্রার্থী হওয়ায় তিনি বেকায়দা আছেন। ২০২২ সালের নির্বাচনেও একই ফ্যাক্টে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কাছে হেরেছেন।
২০২২ সালে সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দল থেকে বহিষ্কৃত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা, বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন তাঁর ভগ্নিপতি এবং রাজনৈতিক নেতা। যে কারণে নিজাম উদ্দিন কায়সার দলের বেশির ভাগ নেতৃবৃন্দের সমর্থন পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সাক্কুর কাছে জনপ্রতিনিধিত্বের অভিজ্ঞতার কারণে পিছিয়ে আছেন কায়সার। যদিও কায়সারের দাবি, বিএনপির মূলধারার ভোটারদের প্রার্থী তিনিই। তবে মনিরুল হক সাক্কু জানান, দলমত নির্বিশেষে ভোটাররা তাকেই পছন্দ করেন- আগের মতো আবারো তার পক্ষেই আসবে জনমত।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সমর্থনে এগিয়ে আছেন তাহসীন বাহার সূচনা। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বাবা আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহার সিটি কর্পোরেশন এলাকাসহ সদর-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাই মহানগর আওয়ামী লীগের সবগুলো ইউনিটের নেতৃবৃন্দের এক বর্ধিত সভায় তিনি প্রকাশ্য সমর্থন পেয়েছেন এবং শক্তিশালী সাংগঠনিক শক্তি থাকবে তার পাশে। অন্যদিকে তিনি দীর্ঘদিন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও তরুণ উদ্যোক্তা সংগঠনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তবে এটিই তার প্রথম জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে অংশ নেয়া- তাই ভোটারদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা কেমন হবে তার প্রমাণ হবে ভোটে।
এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের আরেক নেতা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম ২০১২ সালের প্রথম সিটি নির্বাচনেও অংশ নিয়েছেন। সেখান থেকে নির্বাচনে অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। কলেজ জীবন থেকেই তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদের কমিটিতে তিনি থাকলেও বিভক্তির কারণে মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন তিনি। একটি বড় অংশের সমর্থন নেই তার। যে কারণে ভোটের মাঠে সাংগঠনিকভাবে কোনঠাসা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের অপর একটি অংশের পুরোপুরি সমর্থন পেয়ে গেলে তার নির্বাচনি ফলাফল জয়ের দিকে যাবার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এদিকে এবারের নির্বাচনে নগরীর সাড়ে ১১ হাজার নতুন ভোটার, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভোট, দক্ষিণ সিটির ৯টি ওয়ার্ডের ভোট, উপ-নির্বাচনের কারণে কাউন্সিলরদের পরোক্ষ অংশগ্রহণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে। যে কারণে চার প্রার্থীর জন্যই নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়া অনেকটাই কঠিন। এখনো পর্যন্ত সমানে সমানে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন চার প্রার্থীই। মন জয় করতে- নানা প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন ভোটারদের। এক্ষেত্রে বলা যায়, যার প্রচারণায় যত জোর হবে- তার দিকেও ঝুঁকতে পারেন ভোটাররা।
কুমিল্লা সিটিতে এবার ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার। ২৭টি ওয়ার্ডে ১০৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৯ই মার্চ।