শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কুমিল্লার  লালমাই পাহাড়ে দেদারসে চলছে মাটি লুটের উৎসব

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে দেদারসে চলছে মাটি লুটের উৎসব

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ কুমিল্লায় অবৈধ মাটি লুট সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে অস্তিত্ব হারাচ্ছে সবুজঘেরা লালমাই পাহাড়। রাতের অন্ধকারে লালমাটির এ পাহাড়ে চলছে মাটি হরিলুটের মহোৎসব। সিন্ডিকেট সদস্যরা ড্রাম ট্রাক এবং ট্রাক্টরে মাটি লুট করছে। এদিকে লালমাই পাহাড়ের টিলা কাটা বন্ধে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলেও তা অমান্য করে প্রতিদিনই চলছে অবাধে লুটপাট। প্রায় প্রতিদিন পাহাড়ের বড় ধর্মপুর, ধর্মপুর, রতনপুর, বিজয়পুর, রাজারখোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় কাটা হচ্ছে মাটি। মাঝে মধ্যে প্রশাসন অভিযান চালালেও আবার শুরু হয় পাহাড় কাটা।

            কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের টিলা ও সবুজঘেরা মনোরম দৃশ্য পর্যটকদের কাছে দারুণ উপভোগ্য। আদিমকালের অসংখ্য স্মৃতিবিজড়িত এ পাহাড়ে পড়েছে অবৈধ মাটি সিন্ডিকেটের কালো থাবা। পাহাড়ের বিভিন্ন টিলায় রাতের আঁধারে মাটি কেটে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট সদস্যরা। বিশেষ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্কের গা ঘেঁষে এবং সালমানপুর এলাকায় দেদারসে চলছে মাটি কাটা। কিন্তু টিলার মালিকরা জানেন না কারা টিলা কাটছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ পাহাড়ের বাসিন্দারা। এদিকে লালমাই পাহাড়ের টিলা কাটা বন্ধে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা আমলে নিচ্ছেনা সিন্ডিকেট সদস্যরা। একের পর এক টিলা কেটে নিচ্ছে সিন্ডিকেট দল। লালমাই মৌজার সালমানপুর এলাকার একটি টিলা কাটা। টিলার অনেক অংশে মাটি নেই। সেখানে ড্রাম ট্রাক এবং ট্রাক্টরের চাকার ছাপ।

            স্থানীয় বাসিন্দা ওসমান গনি জানান, রাতের অন্ধকারে পাহাড়ের টিলা থেকে মাটি কাটা হয়। এরপর ট্রাক্টরে করে নেয়া হয় দূর-দূরান্তে। যারা মাটি কাটে তারা খুবই প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই।

            জানা গেছে, ৮ বছর আগে লাকসামের ইছাপুরা গ্রামের নাসির উদ্দিন ও সাইফুদ্দিন ২ ভাই এবং কুমিল্লা নগরের নোয়াগাঁও এলাকার ইউনুস মিয়া ওই টিলা কেনেন। কিছুদিন আগে খবর পান, তাদের টিলা থেকে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নাসির বলেন, হঠাৎ জানতে পারি, আমাদের টিলা কাটা হচ্ছে। বিষয়টি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেনকে জানাই। পাারভেজ হোসেন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু কোনো বিহিত ব্যবস্থা নেননি।

            বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, লালমাই পাহাড়ের মাটি কাটা বন্ধে বাপার পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে বহুবার লিখিত অভিযোগ করেছি। কোনো ফল হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা লালমাই পাহাড় রক্ষায় জেলা প্রশাসক, সদর দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলেছি। প্রশাসন আন্তরিক না হলে পাহাড় রক্ষা করা কঠিন। সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়া খানম বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে মাটিকাটা চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আবারও অভিযান চালানো হবে।

            কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, কোনোভাবেই লালমাই পাহাড়ের টিলা কেটে সাবাড় করতে দেয়া হবে না। শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।

            পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। খোঁজ নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Share This