রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Editorial  23.08.2023  ডিমে সিন্ডিকেটের ছোবল

Editorial 23.08.2023 ডিমে সিন্ডিকেটের ছোবল

Views

বাজারের কোনো কিছুতেই যেন নিয়ম থাকছে না। নিয়ম ছাড়াই চলছে বাজার ব্যবস্থাপনা। এ ব্যাপারে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। অথচ সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের চাপে চিড়ে চ্যাপ্টা। অন্য দ্রব্যের পর এবার আলোচনায় ডিম। ডিমের বাজারে কারসাজি ও সিন্ডিকেট চক্রের বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসলেও এ থেকে পরিত্রাণ মিলছে না। কিছু সময় স্থিতিশীল থাকার পর ডিমের বাজার আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মাত্র ২ সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে অতীতের রেকর্ড ভেঙে বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিমের দাম ১৬৫ টাকায় ঠেকেছে। হঠাৎ এমন মূল্যবৃদ্ধিতে গরিবের প্রোটিনখ্যাত ডিম এখন আর সহজলভ্য পর্যায়ে নেই। হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্তরাও।

এদিকে বিক্রেতারাও দু’টির নিচে ডিম বিক্রি করছেন না। ২ সপ্তাহ ধরেই দাম বাড়ছে। আগেও পাইকারি বিক্রেতারা ১০০ পিস বাদামি ফার্মের ডিম বিক্রি করেন ১ হাজার ১৬০ টাকায়। এরপর তা এক লাফে বেড়ে ১ হাজার ২০০ টাকা হয়। এরপর আরও ২০ টাকা বাড়ে এবং পরবর্তী সময়ে ১ হাজার ২৫০ টাকা হয়। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৬০ টাকা পর্যন্ত। এখন একটি করে ডিম বিক্রিতে অনীহা অনেক বিক্রেতার। অনেকেই প্রতি পিস ১৪ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন।

ডিম উৎপাদনকারীদের বক্তব্যের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে ডিমের উৎপাদন খরচ ৯ টাকা ৫০ পয়সা। খামারিরা বিক্রি করছেন ১০ টাকা ৭৫ পয়সা পর্যন্ত। এ ডিম খুচরায় ১২ টাকার বেশি দামে বিক্রি হওয়ার কথা নয়। অথচ হাতবদল আর সিন্ডিকেট হয়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪-১৫ টাকায়।

এর আগে গত বছর সেপ্টেম্বরেও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে রেকর্ড ডজন ১৫৫ টাকা ছাড়ায় ডিমের দাম। সে সময় ডিমের বাজারে সরকারি সংস্থার বিশেষ অভিযান ও অনুসন্ধানে উঠে আসে কারসাজির তথ্য।

ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে নয়; ডিমের বিক্রয়মূল্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতারাই ঠিক করে দেন। বাজার অভিযানের পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিম আমদানির হুশিয়ারিতে রাতারাতি ডিমের দাম কমে যায়। এরপর অনেকটা সময় ডিমের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বদলায়নি বাজার পরিস্থিতি। আগের ‘সিস্টেমেই’ চলছে। দাম বাড়লেও খামারির লাভ বাড়ছে না।

কিন্তু মধ্যস্থভোগীরা ঠিকই অল্প সময়ে বিপুল মুনাফা করে নিচ্ছে। ১৪ দিনে দাম লাফিয়ে বাড়লেও এর কারণ জানেন না পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। বিভিন্ন এলাকার ডিমের পাইকারি বাজার ঘুরে একাধিক ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাওয়ার পরও যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। বরাবরের মতো ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ কম। কেউ বলছেন বৃষ্টিপাতের কারণে, কেউ বলছেন প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে।

তবে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী জানান, ঠিক কী কারণে দাম বেড়েছে তা তারা জানেন না। মোবাইল ফোনে ‘গায়েবি’ এসএমএসের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সে দামেই সারাদেশে বিক্রি হয়। অর্থাৎ বাজারে এখনও সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় রয়েছে।

সবখানে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম থাকায় লাভবান হচ্ছে মধ্যস্থভোগী। জনগণ হচ্ছে চিড়ে চ্যাপ্টা। সিন্ডিকেট করে যারা বাজার মূল্য বাড়ায় সেইসব দুর্বৃত্তদের শাস্তি না হওয়ায় এমনটা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের পেছনের ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এ পরিস্থিতির বদল হবে না।

Share This