নাঙ্গলকোটে কৃষি বিভাগের ব্রি-৯২ বীজে কৃষকের সর্বনাশ
আবুল কাশেম গাফুরী\ ইরি-বোরো মৌসুমে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পাওয়া প্রণোদনার ব্রি-৯২ বীজ ধান রোপন করে কৃষকদের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। এতে লাখ-লাখ টাকার ক্ষতিসহ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহতের আশংকা রয়েছে।
কৃষকদের মাঠে রোপন করা ব্রি-৯২ ধান কাটার সময়ে কিছু ধান পেকে খেতে নুড়ে পড়েছে। আবার কিছু ধানের থোর বের হচ্ছে। কিছু ধান পাকছে আবার কিছু কাঁচা রয়েছে। পাকা-কাঁচা ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়ছে কৃষকরা। তাই ধান কেটে ফসল ঘরে উঠা নিয়ে কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, ইরি-বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ৯০ হাজার ৯২০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে মাঠের ফসলের অবস্থা খারাপের কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে কৃষকরা জানান।
উপজেলার রায়কোট উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের শ্যামেরখিল, অলিপুর, মালিপাড়া, মন্তলী গ্রামের কৃষকরা ইরি-বোরো ধান খেতে ব্রি-৯২ ধান রোপণ করে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মাঠের ধান ঘরে তোলা নিয়ে তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা আর আহাজারি। কৃষকরা তাদের মধ্যে প্রণোদনায় বিতরণকৃত ব্রি-৯২ বীজ ধানকে মিশ্র বীজ ধান বলছেন।
শ্যমেরখীল গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শামছুল হক বলেন, তার ৮৪ শতাংশ জমিতে ব্রি-৯২ ধান রোপণে বীজতলা তৈরী থেকে শুরু করে পানি দেয়া, সার, কীটনাশক প্রয়োগ এবং বদলা বাবদ তার অন্তত ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ফসলে অবস্থা খারাপ হওয়া নিয়ে তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। তিনি আরো বলেন, আমার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে এটা ব্রি-৯২ ধান নয়। একইভাবে কৃষক মোস্তফা কামাল, আবদুল মন্নান, খোরশেদসহ কয়েকজন কৃষক ব্রি-৯২ ধান রোপণ করে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে জানান। কৃষকরা জানান, বীজতলা তৈরী থেকে শুরু করে ধানের চারা রোপণ, আগাছা পরিষ্কার, সার, কীটনাশক প্রয়োগ, পানি দেয়া পর্যন্ত তাদের একেক জনের অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। ফসল হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। কৃষকরা অভিযোগ করেন, উপজেলা কৃষি অফিস তাদের এলাকার এয়াকুব মেম্বারসহ বিভিন্ন কৃষকের নিকট থেকে বীজ সংগ্রহ করে বস্তা ভর্তি করে প্রণোদনা হিসাবে আবার কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেন। ফলে ভালো বীজ না পেয়ে কৃষকরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন এলাকায় ব্রি-৯২ বীজ ধানে সমস্যা হয়েছে। আমরা বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএডিসিকে বিষয়টি জানিয়েছি। সুযোগ থাকলে সামনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব।