শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প বিতর্কে মুখোমুখি হচ্ছেন!!

            নিউইয়র্ক থেকে বিশেষ সংবাদদাতা প্রেরীত\ অবশেষে বিতর্কে অংশ নিতে যাচ্ছেন বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে তার প্রতিদ্ব›িদ্ব সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

            সে অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২৭শে জুন এবং ১০ই সেপ্টেম্বরে দুই দফায় মুখোমুখি বিতর্ক করতে সম্মত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার রিপাবলিকান প্রতিপক্ষ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হোয়াইট হাউজ কার দখলে যাবে তার অনেকটা নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে অনুষ্ঠেয় এই দুই বিতর্কের মধ্য দিয়েই।

            এ বিতর্কের প্রসঙ্গে বাইডেন সোশ্যাল মিডিয়ার এক পোস্টে বলেছেন, “আপনার (ট্রাম্প) কথামত- যে কোনও সময়, যে কোনও জায়গায়।

            ওদিকে, ট্রাম্প বাইডেনকে নিজের দেখা ‘সবচেয়ে খারাপ বিতার্কিক’ আখ্যা দিয়েছেন। ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছেন, “ধাউড় জো এর সঙ্গে জুন ও সেপ্টেম্বরে প্রস্তাবিত দুটি বিতর্ক করতে আমি ইচ্ছুক এবং প্রস্তুত।”

            সিএনএন এর ওয়ার্নার ব্রোস ডিসকভারি বিভাগ আগেই জানিয়েছেন, প্রথম বিতর্কটি তাদের আটলান্টা স্টুডিওতে অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী আমেরিকার সময় অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৭শে জুন রাত ৯ টায় জর্জিয়ার আটলান্টায় এই প্রথমবার মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তথা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন এবং তার রিপাবলিকান প্রতিœ্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ৫ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে চলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এটিই হবে প্রথম বিতর্ক। সিএনএনে তাৎপর্যপূর্ণভাবে ওই ৯০ মিনিটের বিতর্ক সভায় কোনও শ্রোতা উপস্থিত থাকবেন না। আর দুই প্রতিদ্ব›দ্বীর বক্তৃতায় ক্ষেত্রেও ‘কড়া সময়সীমা’ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। উভয় প্রার্থী, বাইডেন ( ৮১) এবং ট্রাম্প (৭৮) জাতীয় জনমত জরিপে ঘাড়ে-ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন। অনেক ভোটার এখনও নির্বাচনের পাঁচ মাস আগে অনিশ্চিত রয়েছেন- তারা কাকে ভোট দেবেন।

            তবে, লিবার্টারিয়ান পার্টির নেতা তথা চলতি বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্দলীয় আরেক প্রার্থী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র এই বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন না। আরকানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্যাট্রিক স্টুয়ার্টের মতে, এই বিতর্ক উভয় প্রার্থীকে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য দেবে বলে মনে হয় না বরং তাদের অনেক চ্যালেঞ্জিং প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।

            বহুল আলোচিত এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন উপস্থাপক জ্যাক ট্যাপার ও ডানা ব্যাশ। তবে এই বিতর্ক অনুষ্ঠানে কোনও দর্শকশ্রোতা উপস্থিত থাকবে না।

            মূলত: বিতর্কটি উভয় প্রার্থীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হবে। কারণ দু’জনেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট  পদের জন্য বেশ প্রবীণ প্রার্থী। স্টুয়ার্ট  রয়টার্সকে বলেছেন, ‘এটি দুই প্রার্থীর  জ্ঞানীয় দক্ষতার একটি অবিশ্বাস্য পরীক্ষা।

            এছাড়া, গণমাধ্যম এবিসি থেকেও আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন বাইডেন এবং ট্রাম্প। সেখানে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে ১০ই সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় বিতর্ক।

            এছাড়া, রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনের পর জুলাইয়ে আলাদাভাবে আরেকটি ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক অনুষ্ঠানেরও প্রস্তাব রয়েছে।

            বিতর্ক নিয়ে বাইডেন এবং ট্রাম্প ভিন্ন ভিন্ন শর্ত দিয়েছেন। ট্রাম্প চান, বড় হলরুমে বিতর্ক হোক যাতে তা অনেক বেশি প্রাণবন্ত হয়। তিনি দু’টির বেশি বিতর্ক করারও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

            অন্যদিকে, বাইডেন চান কড়া নিয়মবিধির মধ্য দিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠান করতে, যাতে বিতর্কের মাঝে বাধাবিঘœ কম ঘটে।

            ট্রাম্প এবং বাইডেনের বিতর্ক দু’টি যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করা হবে, যা সরাসরি দেখবেন লাখো দর্শক। দুই প্রার্থীর জন্যই এ বিতর্কে ঝুঁকি আছে।

            বাইডেনের সহযোগীরা মনে করেন, এ দুই বিতর্কের মাধ্যমে গর্ভপাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান প্রকাশ হয়ে রাজনৈতিকভাবে তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। অন্যদিকে, ট্রাম্পের সহযোগীরা মনে করেন, ৮১ বছর বয়সী বাইডেন মুখ ফস্কে যেসব ভুল কথা বলে ফেলেন- তা তার বয়স নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগ আরও বাড়াবে।

            প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠানের সময় ট্রাম্পেরও বয়স হবে ৭৮ বছর। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালান শ্রোডার বলেছেন, “বয়সের কারণে বাইডেন ও ট্রাম্প দুইজনই আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি পরীক্ষার মুখে থাকবেন। কারণ, বিতর্ক এমন এক মুহূর্ত যেখানে অংশগ্রহণকারীদের নিজেদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

            উল্লেখ থাকে যে, কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে বিতর্ককে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়।  এ বিতর্কের মধ্য দিয়ে প্রার্থীদের প্রতি ভোটারদের ধারণা তৈরি হয়। এসব বিতর্কে প্রার্থীরা পরস্পরকে বিভিন্ন নীতি নিয়ে আক্রমণ করার সুযোগ পান।

            ট্রাম্প ইতিমধ্যে চিরাচরিত প্রস্তুতির পরিবর্তে  বাইডেনের বিরুদ্ধে ‘জাতীয় নিরাপত্তায় অবহেলা’, ‘কূটনৈতিক ব্যর্থতা’ এবং ‘আমেরিকার আদি বাসিন্দাদের স্বার্থরক্ষায় অনীহা’- এর মতো  বিষয়গুলো বেছে নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। আসলে এই বিতর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে, যা ভোটারদের দেশের জন্য দুই নেতৃস্থানীয় প্রার্থীর দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে থাকবে।

            অথচ, এর আগে বেশ দীর্ঘ সময় ধরেই বাইডেনের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছিল। অত:পর, দর্শকদের সামনে প্রথিতযশা কোনো সাংবাদিক মডারেট হিসেবে এ বিতর্ক পরিচালনা করে থাকবেন। সুত্র: রয়টার্স এ আইবিটিভি নিউজ

Share This