শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সাপে কামড়ালে করণীয়

            অধ্যাপক কবিরুল বাশার\ বর্তমান সময়টাই এমন যে গ্রামাঞ্চলে সাপের আতঙ্ক রয়েছে। এমনকি যারা ট্যুরে যান কিংবা বনে-পাহাড়ে বর্ষায় ঘুরতে যান তাদের সাপ কামড়াতে পারে। সাপে কামড়ানোর উপদ্রবটি সম্প্রতি বেশ বেড়েছে। তবে অনেকে এ সময় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তারা বুঝতে পারেন না এ ক্ষেত্রে তাদের কি করার রয়েছে। সাপ কামড়ালে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ সময় ভয় থাকলেও ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। সাপে কামড়ালে কি কি করবেন না এবং কি কি করবেন এ বিষয়ে  কিছু পরামর্শ হলো:

            প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে সাপে কামড়ালে কি করা যাবে না। সতর্কতার এই জায়গাগুলো প্রথম মনোযোগের দাবিদার। যেমন: অনেকে প্রথমে শক্ত বাঁধন বা গিট দিয়ে ফেলেন। কিন্তু এমনটি করা যাবে না। হাত বা পায়ে কামড় দিলে, কামড়ানো জায়গা থেকে ওপরের দিকে দড়ি বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে শক্ত করে বাঁধা হয়, যাতে বিষ ছড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। বরং এতে হাত/পায়ে রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে রক্ত প্রবাহের অভাবে টিস্যুতে পচন (ঘবপৎড়ংরং) শুরু হতে পারে।

কামড়ানোর স্থানে বেø­ড, ছুরি দিয়ে কাটাকুটি করা যাবে না। অনেকে বিষ বের করার জন্য এমনটি করেন কিন্তু এটিও বিশেষজ্ঞ ছাড়া করা যাবে না।

            অনেক মানুষের ধারণা, আক্রান্ত স্থানে মুখ লাগিয়ে চুষে বিষ বের করলে রোগী ভালো হয়ে যাবেন। অন্তত অনেক সিনেমায় এমনটিই দেখানো হয়। এমনটি না করে দ্রæত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। সাপের বিষ রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা এভাবে বের করা সম্ভব নয়। কোনো অবস্থাতেই আক্রান্ত স্থানে মুখ দেবেন না। আপনার নিজের ক্ষতি হবে।

            মাইগ্রেনের যন্ত্রণা বাড়িয়ে তুলতে পারে যেসব খাবারমাইগ্রেনের যন্ত্রণা বাড়িয়ে তুলতে পারে যেসব খাবার কোনো ভেষজ ওষুধ, লালা, পাথর, উদ্ভিদের বীজ, গোবর, কাদা ইত্যাদি লাগানো যাবে না।

            কোনো রাসায়নিক পদার্থ লাগানো বা তা দিয়ে সেঁক দেয় ঠিক হবে না। যদি আক্রান্ত ব্যক্তির ঢোক বা খাবার গিলতে বা কথা বলতে সমস্যা হয় এবং এর পাশাপাশি বমি, অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ, নাসিক কণ্ঠস্বর ইত্যাদি দেখা দেয় তাহলে কিছু খাওয়ানো যাবে না। কিছু খাইয়ে বমি করানোর চেষ্টা করাও এ সময় উচিত নয়।

ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যাবে না ভুলেও।

এবার তাহলে করণীয়গুলো আমাদের জেনে নেয়া দরকার। সাপে কামড়ানোর পর প্রাথমিকভাবে আপনাকে প্রাণরক্ষার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রæত হাসপাতাল অভিমুখে যাত্রা করতে হবে। সেই প্রাথমিক চিকিৎসার ধাপ হলো:

আক্রান্ত ব্যক্তিকে বারবার আশ্বস্ত করতে হবে ও সাহস দিতে হবে। সাপে কামড়ানো ব্যক্তি আতঙ্কগ্রস্ত হলে সমস্যা। কারণ অনেকে আতঙ্কগ্রস্ত হয়েও মারা যান। কিন্তু মানসিক আতঙ্ক প্রাণঘাতী হতে পারে। বাংলাদেশের অধিকাংশ সাপই বিষহীন, অল্প কিছু সাপ বিষধর। আবার বিষধর সাপ পর্যাপ্ত বিষ ঢুকিয়ে দিতে ব্যর্থ হতে পারে। এসব জানানোর মাধ্যমে রোগীকে আশ্বস্ত করা যেতে পারে। তবে খুব বেশি চাপ প্রয়োগের দরকার নেই।

            আক্রান্ত অঙ্গ অবশ্যই স্থির রাখতে হবে এবং বেশি নড়াচড়া যেন না করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। হাতে কামড়ালে হাত নাড়ানো যাবে না। পায়ে কামড়ালে হাঁটাচলা করা যাবে না। স্থির হয়ে বসতে হবে।

            আক্রান্ত অঙ্গ ব্যান্ডেজের সাহায্যে একটু চাপ দিয়ে প্যাঁচাতে হবে। এই প্যাঁচানোকে প্রেসার ইমোবিলাইজেশন বলে। ব্যান্ডেজ না পাওয়া গেলে গামছা, ওড়না বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করা যেতে পারে।

            আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে। মূলত জীবাণু দূর করার জন্য এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

            ঘড়ি বা অলঙ্কার বা তাবিজ, তাগা ইত্যাদি পড়ে থাকলে খুলে ফেলুন। কারণ এগুলো রক্তপ্রবাহে বাধা তৈরি করে ও অনেক সময় চিকিৎসা প্রক্রিয়ার জন্য সমস্যা হয়ে যায়।

রোগীকে আধশোয়া অবস্থায় রাখুন। যদি রোগী শ্বাস না নেন তাহলে তাকে মুখে শ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

            যদি সাপটিকে ইতোমধ্যে মেরেই ফেলেন, তাহলে সেটি হাসপাতালে নিয়ে আসুন। তবে এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোনোভাবেই হাত দিয়ে ধরা যাবে না। কিছু সাপ মরার ভান করে থাকে। তবে সাপ মারতে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।

            যত দ্রæত সম্ভব আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

লেখকঃ অধ্যাপক, প্রানীবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Share This

COMMENTS