শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

লাকসাম পৌরসভার উপকন্ঠে অবস্থিত ‘হাউজিং এস্টেট’  এলাকার রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কিছু খন্ড চিত্র!!

লাকসাম পৌরসভার উপকন্ঠে অবস্থিত ‘হাউজিং এস্টেট’ এলাকার রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কিছু খন্ড চিত্র!!

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ লাকসাম হাউজিং এস্টেট-এ সরকারী জমিতে প্লট বরাদ্দের দীর্ঘ ৩৬ বছর পরেও এর চতুর্দিকে কোনো সীমানা প্রাচীর নির্মাণ না হওয়ায় বাসিন্দারা নানাভাবে ভোগান্তি পোহাচ্ছন। দুর্ভোগ চলছে অসমাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থাতেও। পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাও খুবই দুর্বল। একটু বৃষ্টি হলেই কতেক বাসা-বাড়ির আঙ্গিনায়ও পানি ঢুকে পড়ে। বিশেষ করে দীর্ঘদিনেও ড্রেন নির্মাণের কাজ অসমাপ্ত থাকার কারণে সি বøকের ২৯, ৩০ ও ৩১ নং প্লটে ময়লা-আবর্জনার পানি জমে থাকে প্রায় আল্লাহর বারো মাসই।

জানা গেছে যে, প্রসিদ্ধ দৌলতগঞ্জ বাজারের উপকন্ঠে লাকসাম উপজেলা পরিষদ কর্তৃক ১৯৮৮ সালে লাকসাম হাউজিং এস্টেট-এ প্লট বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তদানুযায়ী, ক্রমে ক্রমে ৫ বা ৬ কাঠার ২৪টি, সাড়ে ৩ কাঠার ৪৭টি (আবাসিক) এবং ২০ ফুট বাই ৩৭ ফুট ৪টি ও ২২ ফুট বাই ৮০ ফুটের ২টি (বানিজ্যিক) প্লট বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

যারা এসব প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন, তারা হলেন: সরকারি কর্মচারী, আধা সরকারী অথবা স্বায়ত্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠানিক কর্মচারী, বে-সরকারী চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী, বিদেশে কর্মরত ওয়েজ আর্ণার, মুক্তিযোদ্ধা, গৃহ সংস্থান পরিদপ্তর কর্তৃক লাকসামে জমি অধিগ্রহণ জনিত ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন, বিশেষ পেশাদারিত্বের (যারা চাকুরে নন) চিকিৎসক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, আইনজীবি, স্থপতি ও কৃষিজীবি।

এ ক্ষেত্রে বিশেষ পেশাদার ও অন্যান্য সকল আবেদনকারীদের প্রতি শর্ত ছিল যে,  তার পেশা শুরু করার তারিখ সম্পর্কে সঠিক প্রমান পত্র (গেজেটেড অফিসার কর্তৃক দলিল পত্রের সত্যায়িত কপি) প্লটের আবেদন পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।

আরেক দিকে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত প্লট বরাদ্দ প্রাপ্তদের নামে দেয়া রেজিষ্ট্রিকৃত ইজারা দলিলে শর্ত ছিল যে, ইজারা গ্রহীতা ইজারাকৃত সম্পত্তির উপর নির্মাণ কার্য্যে উক্ত সম্পত্তি এলাকার দুই তৃতীয়াংশের অধিক স্থান আবৃত করতে পারবেন না এবং ইজারা প্রবর্তনের তারিখ হতে দুই বছরের মধ্যে কিংবা ইজারাদাতা তদীয় ইচ্ছানুযায়ী বর্ধিত যে সময়ের অনুমতি প্রদান করবেন- সেই সময়ের মধ্যে সম্পত্তিতে বসবাসের উদ্দেশ্যে ১৯৫২ সালের ইমারত নির্মাণ আইন অনুযায়ী সকল নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করবেন। অন্যথায়, উক্ত ইজারা চুক্তি/ দলিল ইজারাদাতা কর্তৃক অবসানযোগ্য হবে এবং অনুরূপ অবসানের পর ইজারা গ্রহীতা অবিলম্বে ইজারাকৃত সম্পত্তি ইজারাদাতার নিকট সমর্পণ করবেন।

অথচ, লাকসাম হাউজিং এস্টেট এলাকায় যে বা যারা উল্লেখিত শর্ত মোতাবেক বরাদ্দপ্রাপ্ত প্লটে কেবল ২ বছর নয়; ২ যুগেও কোনো বাড়িঘর নির্মাণ করেননি- তাদের বিরুদ্ধে আজও কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে কোনো খবর মেলেনি।

            তাছাড়া, আরেক শর্তে বলা হয়েছে যে, ইজারাকৃত সম্পত্তিতে ইজারা গ্রহীতা পূর্ব বর্ণিত অনুরূপ সম্পত্তি ব্যতিরেকে কোনো প্রকার ব্যবসা-বানিজ্য পরিচালনা করবেন না বা অনুরূপ ব্যবসা-বানিজ্য পরিচালনায় অনুমতি প্রদান করবেন না কিংবা আবাসিক ইমারত ছাড়া উক্ত সম্পত্তি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবেন না বা ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করবেন না।

  কিন্ত প্রাপ্ত অভিযোগে বলা হয়েছে যে, উক্ত শর্ত ভঙ্গ করে লাকসাম হাউজিং এস্টেটে কেউ কেউ দোকান-পাটও খুলে বসেছেন। কিন্ত তাতে করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি।

            এছাড়া, লাকসাম হাউজিং এস্টেট এলাকাটি অত্যন্ত ব্যস্ততম কুমিল্লা- নোয়াখালী ৪ লেনের আঞ্চলিক মহাসড়কের দু’পাশে অবস্থানের কারণে এখানে সুষ্ঠভাবে বসবাসের লক্ষ্যে এখন থেকে ১৫ বছর পূর্বে ২৭/০৯/২০০৯ সালে “লাকসাম হাউজিং এষ্টেট কল্যাণ সমিতি” কর্তৃক এই হাউজিং এস্টেট এলাকায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও লাকসাম হাউজিং এষ্টেট উন্নয়ন কমিটির সভাপতি বরাবরে লিখিতভাবে দরখাস্ত দাখিল করেছিলেন। সদয় অবগতি ও আশু দৃষ্টি আকর্ষণের নিমিত্তে আবেদনের কপি পৌঁছানো হয়েছিল- ততকালীন কুমিল্লা-৯ আসনের সংসদ সদস্য, লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও লাকসাম পৌরসভার (ভারপ্রাপ্ত) মেয়র সাহেবকেও। এসব দরখাস্তের পরেও কোনো ভূমিকা না থাকার কারণে একই দাবীর ব্যাপারে ‘লাকসাম হাউজিং এষ্টেট কল্যাণ সমিতি’র কর্মকর্তাগণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কল্যাণ সভাপতি আবদুল মালেক কাননগু।

  তাছাড়া, প্লট বরাদ্দের পর দীর্ঘ ৩৬ বছর অতিবাহিত হলেও লাকসাম হাঊজিং এস্টেট এলাকায় কোনো সীমানা প্রাচীর নির্মিত না হওয়ায় কতেক বাসিন্দারাও দারুন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অবিলম্বেই এখানকার ড্রেনেজ সমস্যার সমাধান এবং সীমানা প্রাচীর নির্মানের জন্য আবারও জোর দাবী জানিয়েছেন।

            বাস্তবিক পক্ষে, আবাসিক প্রকল্প এলাকায় কিংবা কোনো বাড়ির সীমানা প্রাচীরের কয়েকটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে। সামগ্রিক সম্পত্তি রক্ষা ছাড়াও এটি এর সৌন্দর্যকেও বাড়িয়ে তোলে। এই কারণেই সীমানা প্রাচীরের নকশা, যাকে যৌগিক প্রাচীর হিসাবেও বলা হয়ে থাকে। এটি নিশ্চিত হওয়া উচিত যে সীমানা প্রাচীর উভয় উদ্দেশ্যই পূরণ করে থাকে।

            উল্লেখ থাকে যে, লাকসাম হাউজিং এস্টেট এলাকাটির অবস্থান হলো- অত্যন্ত ব্যস্ততম কুমিল্লা-নোয়াখালী ৪ লেনের আঞ্চলিক মহাসড়কের দু’পাশে। অন্যদিকে, বিখ্যাত দৌলতগঞ্জ বাজারের মাঝখানে। এমতাবস্থায়, একটু শান্তিতে বসবাসের স্বার্থে লাকসাম হাউজিং এস্টেট এলাকায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা সত্যিকার অর্থেই একান্ত আবশ্যক বলে জানিয়েছে হাউজিং এস্টেটের কতেক বাসিন্দারাও।

   মূলত: নগরায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘সকলের জন্য পরিকল্পিত আবাসন’ মূলনীতিতে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তপক্ষ সর্বস্তরের মানুষের জন্য সমগ্র বাংলাদেশেই আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দিয়েছেন।

            প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর থেকেই তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগণের জন্য পরিকল্পিত আবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারাদেশেই বিভাগ হতে উপজেলা পর্যন্তও প্লট ও ও ফ্লাট নির্মাণ করে স্বল্প মূল্যে এবং কিস্তি সুবিধায় বরাদ্ধ প্রদান করে যাচ্ছেন। যা কিনা স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ সমূহের জন্য মডেল প্রকল্প হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অথচ, সে ক্ষেত্রে লাকসাম হাউজিং এস্টেটে পরিকল্পিত ড্রেন এবং সীমানা প্রাচীর নির্মাণের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যথাযথ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা আবারও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Share This