শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দেবীদ্বার পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক

দেবীদ্বার পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক

নিজস্ব প্রতিনিধি\ কুমিল্লার দেবিদ্বারের পৌরসভা এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে যায় পানি, তলিয়ে যায় বিভিন্ন এলাকা। এতে প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তিতে পড়ছে এলাকার জনসাধারণ। রাস্তার দু’পাশে দোকানপাট ও বাসা বাড়ি উঁচু হওয়ায়, পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন সড়কে জমে যায় পানি। পৌরসভার প্রধান প্রধান সড়ক ও বাজারে পানি জমে থাকায় ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি যেন চরম আকার ধারণ করেছে। বর্ষাকাল আসতে না আসতেই এলাকার এ অবস্থায় নাজেহাল পৌরবাসী। দীর্ঘদিন ধরে সড়ক ও ড্রেনেজের এমন বেহাল দশা থাকলেও ব্যবস্থায় উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
গত শনিবার (৭ই জুলাই) সকালে দেবীদ্বার পৌর শহরের বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন অলিগলি সড়কগুলোতে পানি থৈ থৈ করছে। কোথাও কোথাও পানি হাঁটু সমান। পানি বের হওয়ার ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে গিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় পথযাত্রী, ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা চরম বিপাকে পড়েছেন। ময়লা পানির ভ্যাপসা দুর্গন্ধসহ পোকামাকর সৃষ্টি হচ্ছে, বাড়ছে স্বাস্থ্য-ঝুঁকিও।
জলাবদ্ধতা ও সড়কে কাদা পানি সৃষ্ট হওয়ায় পৌরসভার সব ক’টি এলাকার ভুক্তভোগীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আমরা পানিতে ডুবলেও তেমন কোন খোঁজ নিতে আসেন না কোনো কাউন্সিলর, এমনকি পৌর কর্তৃপক্ষ। এলাকাবাসী দীর্ঘ বছর ধরে এমন ভোগান্তি পোহালেও পৌর কর্তৃপক্ষ জমে থাকা পানি ও সড়ক সংস্কারে নিচ্ছেন না কোনো ব্যবস্থা।
বৃষ্টির পানি জমে দেবীদ্বার বাজারের প্রত্যেকটি সড়কে চলাচলের একদমই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সহকারী কমিশনার (ভুমি) কার্যালয় ও থানা প্রশাসনের প্রবেশদ্বার, দেবীদ্বার ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা ও পাঠান বাড়ির রাস্তায়, মাদ্রাসা পাড়া এলাকায়, বাজারে ঢোকার প্রধান সড়ক, মাছুয়াবাদ ডোন, মোহনা আবাসিক এলাকা, বানিয়াপাড়া, হামলাবাড়ি-বলিবাড়ি রাস্তার মাথা, দাসপাড়া শান্তি রোড, চাপানগর থেকে ফতেহাবাদ মোড়, বড়আলমপুর থেকে বিনাইপার, জিন্নতআলী হাজী বাড়ি রোড থেকে এসআই সাইফুলের বাড়িসহ প্রত্যেকটা সড়কের একই অবস্থা। ড্রেনেজগুলোর বেহাল দশার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ী ও পথচারীদের।
পৌর এলাকার পুরাতন বাজারের রাস্তা দিয়ে দিনের বেশির ভাগ সময়ই রোগী, পথচারী ব্যবসায়িরা যাতায়াত করে থাকেন। ড্রেনেজের এই বেহাল অবস্থার কারণে সামান্য বৃষ্টি এবং গাড়ির ঝাঁকুনিতে, রাস্তায় জমে থাকা পচা আবর্জনায় মেশানো পানিতে নষ্ট হয়ে যায় পরিধেয় কাপড়। এতে বিব্রত, অসুস্থ্য ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে পথচারী, ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী।
পৌরসভার অন্তর্গত ছোটআলমপুর মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ তমিজ উদ্দিন জানান, অপরিকল্পিত, ড্রেনেজ ব্যবস্থার ফলে পৌরবাসীর নানা অসুবিধা হচ্ছে। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পানি নিষ্কাশনের অভাবে পানি জমে গিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতায় পৌরবাসী ভোগান্তি পোহালেও পৌর কর্তৃপক্ষ সমস্যাটির সমাধানে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছেন না। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শ্রী সুদেব দত্ত বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে বর্ষাকালে ব্যবসায়ী ও স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করতে পারে না। একদিন বৃষ্টি হলেই রাস্তায়, বাজারে পানি জমে যায় কিন্তু পানি সরানোর কোন ব্যবস্থা নেই। ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে ড্রেনের ময়লা আবর্জনা উপচে পড়ে সড়কে উঠে যাওয়ায় বারোমাস সড়কে জলাবদ্ধতা থাকে। এতে করে রাস্তায়ও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।


দেবিদ্বার ইসলামীয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ আলাউদ্দিন হুজুর বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই পৌরসভার বিভিন্ন অলিগলির সড়কগুলো কাদা পানিতে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষ। অনেক এলাকায় বাড়িঘরেও পানি উঠে মানুষের কষ্ট ও বেড়ে যায়। চরম দুর্ভোগ নিয়ে চলতে হচ্ছে পৌরবাসীকে। তাই পৌরবাসীর জন্য প্রয়োজন সড়কগুলো সংস্করন ও আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার তৈরি করন। দেবিদ্বার পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ আবুল বাশার বলেন, পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ প্রতিনিয়ত চলছে। ইতিমধ্যেই বড় বড় ড্রেন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো পৌরবাসীদের মধ্যে কিছু লোকজন ময়লা আবর্জনা প্রতিদিন ড্রেনে ফেলে পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করছেন। আমরা পৌর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আন্তরিকভাবে ব্যাপক চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে অনেক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। আশাকরি দ্রæত এই সমস্যার সমাধান হবে। পৌরসভার কার্য-সহকারি মোঃ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের লোকজন প্রতিনিয়তই ড্রেন পরিষ্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দ্রæত সময়ের মধ্যেই পানি নিষ্কাশন হয়ে যাবে। আগের চেয়ে অনেকটা কমে গেছে।
দেবিদ্বার পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি, তারপরও পৌরসহরের বাজারসহ বিভিন্ন সড়কগুলোর খোঁজখবর নিয়েছি। তাছাড়া স্থানীয় লোকজন ময়লা-আবর্জনা ফেলে ড্রেন বন্ধ করে রাখে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি পানি নিষ্কাশনের।’ প্রকল্প আসলে প্রতিটি কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।

Share This

COMMENTS