শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সাম্প্রতিককালের দূর্যোগে কুমিল্লায় প্রায় ১১শ’ কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত

সাম্প্রতিককালের দূর্যোগে কুমিল্লায় প্রায় ১১শ’ কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত

ষ্টাফ রিপোর্টার\ তীব্র ¯্রােতের তোড়ে কুমিল্লায় এবারের ভয়াবহ বন্যায় প্রায় এক হাজার ১০০ কিলোমিটার পাকা সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এলজিইডি ও জনপথ বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর বাইরে গ্রামীণ জনপদের কাঁচা সড়ক ও রাস্তাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টিতে মানুষ বন্যার ভয়াল রূপ দেখেছে। কোনো কোনো সড়ক হাঁটু থেকে বুক সমান পানিতে তলিয়ে ছিল। টানা ১০ দিনের বন্যার পর অনেক জায়গাতেই সড়ক থেকে পানি নেমে গেছে। ভেসে উঠেছে বন্যার ক্ষত। বন্যায় জেলায় এলজিইডি’র সড়কগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৬টি ব্রিজ-কালভার্ট। কয়েকটি ব্রিজ একেবারে ভেঙে গেছে। এ ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ক্ষতি তো হয়েছেই।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর- এলজিইডি’র কুমিল্লা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সায়েদুজ্জামান সাদেক বলেন, ‘বন্যাকবলিত এলাকায় আমাদের বেশির ভাগ সড়ক এখনো পানির নিচে। এখন পর্যন্ত আমাদের ৯৬৮ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পানি পুরোপুরি না কমা পর্যন্ত আমরা ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করতে পারছি না। এজন্য আরেকটু সময় লাগবে। ‘এ ছাড়া দু’টি ব্রিজ ভেঙে যাওয়াসহ মোট ২৬টি কালভার্ট ভেঙে এবং বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি কমলে আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণসহ দ্রæত সড়ক মেরামতের বিষয়টি উপরের মহলে জানাবো।’
সড়ক ও জনপথ-সওজ বিভাগের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১০০ কিলোমিটার মহাসড়ক ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরইমধ্যে দু-একটি ছাড়া বাকি সড়কগুলো থেকে পানি নেমে গেছে। আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি দ্রæত ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামত করার।’ ২২শে আগস্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকা টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে প্লাবিত হয়। সে সময় মহাসড়ক কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমর সমান পানিতে ডুবে যায়। টানা কয়েকদিন পানি মহাসড়কে থাকার কারণে বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন সড়কে পানি না থাকলেও একটু বৃষ্টি হলেই গর্তগুলো পানিতে ভরে যায়। এতে গর্তগুলো এখন ব্যস্ততম মহাসড়কটির মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। মহাসড়কের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার এলাকা পড়েছে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জুড়ে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুমিল্লা-বুড়িচং সড়ক। বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া সড়কও বেহাল। লাকসাম-মনোহরগঞ্জের ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এলজিইডি’র সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটির বেশির ভাগ স্থানে এখনো হাঁটু পানি। বন্যার তীব্র ¯্রােতে সড়কটিতে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। লাকসাম-নাঙ্গলকোট-বক্সগঞ্জ সড়কের অবস্থাও নাজুক। পানি কমতে থাকায় লাকসাম-বাঙ্গড্ডা-চৌদ্দগ্রাম সড়কে জেগে উঠছে ক্ষতচিহ্ন।
নাঙ্গলকোট-বাঙ্গড্ডা-বাগমারা সড়কের অবস্থাও এখন ভয়াবহ। মনোহরগঞ্জ-শান্তির বাজার, চিতোষী-হাসনাবাদ, তুঘুরিয়া-উত্তর হাওলাসহ লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোটের প্রায় প্রতিটি সড়কের অবস্থাই বেহাল। গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে পুরোপুরি প্লাবিত হওয়া বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার প্রতিটি সড়কের অবস্থা আরও ভয়াবহ। বুড়িচং উপজেলার ভরাসার, ইছাপুরা, বুড়বুড়িয়া, কালিকাপুর, ভবানীপুর সড়ক ভেঙে খাদে পরিণত হয়েছে। এ উপজেলার বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়ক ঢলের পানিতে বিলীন হয়ে গেছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গোপালনগর সড়কটি ব্যাপকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। দেবিদ্বার উপজেলার খলিলপুর সাইচাপাড়া সড়কটি বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। এ সড়কে এখন বড় বড় গর্ত হয়ে খাদে পরিণত হয়েছে। চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি সড়ক বন্যার খর¯্রােতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পৌরসভার বালুজুড়ি এলাকায় নবনির্মিত টেকনিক্যাল স্কুল পাশের সড়কটি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। দেখলে মনে হবে, এখানে কোনো সড়কই ছিল না।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বালুজুড়ি, নোয়াপাড়া, রামচন্দ্রপুর, রামরায় গ্রাম পূর্ব বাইপাস ও সেনিরখিল সড়কগুলো ভেঙে গিয়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ার কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে লালমাই, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা আদর্শ সদর, বরুড়া, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, দাউদকান্দি ও তিতাস এই উপজেলাগুলোর বেশির ভাগ সড়ক বেহাল।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী বলেন, ভয়াবহ এই বন্যায় কয়েকশ’ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনো শেষ করতে পারিনি। দু-একদিনের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্তভাবে বলা যেতে পারে।

Share This