রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মনোহরগঞ্জ এলাকায় কয়েকটি ব্রীজে  যানবাহন চলাচলে নিদারুন ভোগান্তি

মনোহরগঞ্জ এলাকায় কয়েকটি ব্রীজে যানবাহন চলাচলে নিদারুন ভোগান্তি

Views

            এম.এ মান্নান\ মনোহরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গুরুত্বপুর্ন সেতু সংস্কার ও সম্প্রসারনের অভাবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে জনসাধারন প্রতিনিয়তই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিশেষ করে মনোহরগঞ্জ বাজারের দক্ষিন পাশে মেল্লা খালের উপরের ব্রীজটি অত্যন্ত সংকীর্ন। এতে করে ২টা গাড়ী ক্রস করা অসম্ভব হওয়ায় যানবাহন চলাচলে দীর্ঘ যাজটের সৃষ্টি হয়।

এছাড়া, চিতোষী ডাকাতিয়া নদীর উপরে স্থাপিত ষ্টীলের ব্রীজটিও অত্যন্ত সংকীর্ন ও বিপদজনক। এই ব্রীজেও ২টা গাড়ী ক্রস করা যায়না। ফলে নিত্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাজারো জনসাধারন।

মনোহরগঞ্জ ও শাহারাস্তি উপজেলার মধ্যবর্তী ডাকাতিয়া নদীর উপরের এই ষ্টীলের ব্রীজটি অবিলম্বে ২ লেনে যানবাহন যাতায়াতের উপযোগী করে নির্মানের জন্য এলাকাবাসীর দাবী দীর্ঘদিনের।

অপরদিকে, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ভেঙ্গে পড়ে আছে মনোহরগঞ্জ উপজেলার সরসপুর ইউনিয়নের কিছমত খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটি। কুুুমিল্লা-নোয়াখালী ২ জেলার সীমান্তবর্তী মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষণপুর-জনতা বাজারের গুরুত্বপূর্ন এই ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিনই ছোট-বড় যানবাহন ও সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। স্থানীয়দের জন্য এটি এখন একটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এভাবে জীবন বাজি করেই চলাচল করছে ৬ গ্রামের প্রায় ১৪ হাজার মানুষ। দীর্ঘদিন থেকে স্কুল শিক্ষার্থী, শিশু-নারী, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিরা মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। বর্তমানে মাঝারি বা ছোট যানবাহন উঠলেই থরথর করে কেঁপে ওঠে, যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার মধ্যেই চলছে কৃষকের জমির ধান নেয়া, শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে বিদ্যালয়ে। ব্রিজটি নতুুন করে নির্মাণ ও দ্রæত মেরামতের কোন উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জনতা বাজার থেকে লক্ষনপুর সংযোগ সড়কের সরসপুর ইউনিয়নে দক্ষিণ সরসপুর এলাকায় কিছমত খালের ওপর ১৯৯৪-৯৫ সালে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় ১২ বছর ধরে  ব্রিজের অধিকাংশ স্থানের ভেঙে যায় রেলিং। এছাড়াও ৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে ব্রিজটি মাঝখানের একটি অংশ ভেঙে যায়। অথচ, নড়বড়ে এ ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিনই শত শত যানবাহন ও সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ব্রিজটির মধ্যভাগের লোহার অ্যাঙ্গেল ও সিমেন্টের ¯ø­াব ভেঙে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন  স্থানীয়রা ব্রিজের মধ্যভাগের ভাঙা অংশে লোহার পাটাতন দিলেও পাশের ¯ø­াব ভাঙা খালি অংশ দিয়ে চলাচল করেন। কিন্তু এ ব্রিজটি দিয়ে ভারি কোনো মালামাল নিয়ে গাড়ি আনা-নেয়া করতে পারেন না। ব্রিজটি দিয়েই জনতা বাজার সোলাইমান উচ্চ বিদ্যালয়, সরসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জনতা বাজার মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে এতে। বড় কোনো দুর্ঘটনার আগেই ব্রিজটি মেরামতের দাবি জানান এলাকাবাসী।

জনতা বাজার সোলাইমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সেতুর মাঝখানের অংশ ভেঙে পড়ে আছে। মানুষের যাতায়াতে কষ্ট হচ্ছে। স্কুল-মাদরাসার ছোট ছোট শিশুদের জন্য বেশি ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সেতুটি দ্রæত মেরামত করা প্রয়োজন মনে করি।

স্থানীয় কৃষক বরকত আলী জানান, এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে এই সেতু দিয়ে বাজারে যেতে হয়। সেতুর দূরবস্থায় তারা দারুন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

শিক্ষার্থী কামরুল হাসান, শারমিন আক্তার ও তরিকুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পার হয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করতে খুব ভয় লাগে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনতা বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, কুমিল্লা-৯ আসনের  সাবেক এমপি এটিএম আলমগীর সাহেব ১৯৯৫ সালে এ ব্রিজটি নির্মাণ করেন। ব্রিজ হওয়ার পর থেকে রিকশা, ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন প্রতিনিয়তই সেতুটি দিয়ে চলাচল করতো। প্রায় ১২ বছর আগেই ব্রীজটি ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়ে। এর পর থেকে কোন এমপি-মন্ত্রী, চেয়ারম্যান মেম্বার এ ব্রীজটি সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়নি। এতে করে দিন দিন ব্রীজটি আরও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সাধারণ রিকশা ও অটোরিকশা ছাড়া অন্য কোনো ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারে না। কয়েকদিন আগে রিকশা নিয়ে ব্রীজ পারাপারের সময় পড়ে গিয়ে কয়েকজন আহত হয়েছেন।

সরসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা ভাঙা অংশটুকু সংস্কার করার আশ্বাস দিয়েছিলেন এবং নতুন একটি ব্রীজ নির্মাণের জন্য দরপত্র পাঠিয়েছেন বলে তারা জানান।

মনোহরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী শাহ আলম বলেন, ব্রীজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ শুনে পরিদর্শন করেছি। ব্রীজটি পুণনির্মাণের জন্য চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করি।

Share This

COMMENTS