চান্দিনায় কৃষি জমি থেকে ড্রেজিংয়ে মাটি উত্তোলন চলছে দেদারসে
নিজস্ব প্রতিনিধি\ কুমিল্লার চান্দিনায় কৃষি মাঠে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু-মাটি উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নিরব থাকায় প্রভাবশালী বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভয়ে কথা বলতে পারছেনা ভুক্তভোগীসহ স্থানীয় কৃষকরা।
জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মী প্রভাব বিস্তার করে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষি জমি থেকে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চালাচ্ছে। এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলনে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ওই সময়ে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ড্রেজার মেশিন ভেঙে দেয়াসহ বালু-মাটি উত্তোলনে জড়িত অনেককেই অর্থদন্ডের পাশাপাশি কারাদন্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপজেলা প্রশাসনের কঠোর অভিযান অব্যাহত থাকায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন।
দীর্ঘদিন ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু-মাটি উত্তোলন বন্ধ থাকলেও গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর আবারো অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। ক্ষমতার পালাবদলে শুধু চেহারা বদল হয়েছে তাদের। এই ঘটনার সাথে জড়িতরা আগে নিজেদের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বলে দাবি করলেও ক্ষমতার পট পরিবর্তনে ¯্রােতে গাঁ ভাসিয়ে দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে পুর্বের ন্যায় চালাচ্ছে নিজেদের আধিপত্য।
চান্দিনা উপজেলার শুহিলপুর, বাতাঘাসী, মাধাইয়া, মহিচাইল ও গল্লাই ইউনিয়নের কৃষি মাঠের বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অন্তত ১২-১৫টি অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু কউত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডেকেটের সদস্যরা।
দীর্ঘদিন বিরোধী দলে থাকা নেতা-কর্মীদের সাথে সাবেক কিছু জনপ্রতিনিধিও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কৃষি জমি বিলীনের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। এসব ঘটনা জেনেও না দেখার ভান করায় প্রভ্রাবশালী ওই ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কেউ কোনো বাঁধা দিচ্ছেনা। যেকারণে স্থানীয়রা এদের বিরুদ্ধে ভয়ে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষকরা বলেন, বর্তমানে দেশের এমন পরিস্থিতি যে, এদের বিরুদ্ধে বাঁধা কিংবা প্রতিবাদ করলেই মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছে। তার উপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও এ বিষয়ে জানালে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জীবন যাপন করতে হবে। কিন্তু এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বা দেখার কেউ নেই। এভাবে চলতে থাকলে ফসল উৎপাদনের জন্য এই মাঠে কৃষি জমি খোঁজে পাওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে চান্দিনা উপজেলায় সদ্য যোগদান করা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজিয়া হোসেন বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। আমরা কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। বাকিগুলোর বিরুদ্ধেও অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।