বৃহস্পতিবার, ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

<span class="entry-title-primary">২৫২৯ কোটি টাকা বরাদ্ধের জন্য মন্ত্রনালয়ে চাহিদা পত্র প্রেরণ</span> <span class="entry-subtitle"> কুমিল্লায় বন্যা কবলিত এলাকায় এখনো কোনো পুর্নবাসন কার্যক্রম চালু হয়নি</span>

২৫২৯ কোটি টাকা বরাদ্ধের জন্য মন্ত্রনালয়ে চাহিদা পত্র প্রেরণ কুমিল্লায় বন্যা কবলিত এলাকায় এখনো কোনো পুর্নবাসন কার্যক্রম চালু হয়নি

৪৭ Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ কুমিল্লায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এখনো সরকারিভাবে পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়নি। বিশেষ করে গোমতী নদীর ভাঙ্গনকবলিত এলাকার গ্রামগুলোতে ঘরবাড়ি হারানো মানুষজনকে এখনো অতিকষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার কার্যালয় বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ ও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে পুনর্বাসনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলে পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা যাবে। বন্যার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১৮শ’ মেট্রিক টন টি আর চাল, শিশু খাদ্য হিসেবে ১৫ লাখ টাকা এবং গো খাদ্য হিসেবে ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে।

            জানা গেছে, গত ২০শে আগস্ট থেকেই কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হতে থাকে। এরপর সময় যতো গড়িয়েছে বন্যার ভয়াবহতাও ততোই বেড়েছে। এরই মধ্যে ২২শে আগস্ট রাত সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার কোল ঘেঁষে বয়ে চলা গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এরপর একে একে জেলার ১৭ উপজেলার মধ্যে ১৪ উপজেলায়ই প্লাবিত হয়ে যায়। বেশ কিছুদিন উপজেলাগুলো পানিবন্দি অবস্থায় থাকার পর বন্যার পানি কমলেও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষজন বলছেন, এবারের বন্যায় যে ক্ষতচিহ্ন এঁকে গেছে, তা সহজে মুছে যাবে না। অনেক মানুষ এখনো বাড়িঘরে ফিরতে পারেনি। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু সহায়তা পাওয়া গেলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। এসব মানুষকে পুনবার্সিত করতে হলে সরকারি সহায়তার বিকল্প নেই।

            জানা গেছে, এবারের বন্যায় ১৪টি উপজেলার ৮ হাজার ৬৭৪টি পাকা/ আধা পাকা এবং কাঁচা ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৪ হাজার ৮১টি ঘর। এসব ঘর পুননির্মাণে ১ হাজার ৮৪ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে । দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ব্রিজ কালভার্ট, সড়ক ও গ্রামীণ সড়ক সংস্কারে চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা, শস্য ক্ষেত ও বীজতলার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি খাতে চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে ১৪ কোটি ২৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, মৎস্য খাতে ৭৮ কোটি ৩৮ লাখ ৪২ হাজার ৫শ টাকা, সওজের সড়ক সংস্কারে ৫৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা, এলজিইডির সড়ক সংস্কারে ৭৪৪ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার টাকা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নলকূপ, ল্যাট্রিনের জন্য ৩৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ৩৭ কোটি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ৫৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৮ কোটি ৬৭ লাখ ৩১ হাজার ২ শ টাকা, মাধ্যমিক শিক্ষার স্কুল, কলেজ, কারিগরি ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১ কোটি ৪১ লাখ টাকা, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য ২৪ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ১ কোটি ৯৯ লাখ ১৫ হাজার ৯৮০ টাকা, বন অধিদপ্তরের ৭ লাখ ৩০ হাজার ৫৫৫ টাকা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ২৫২৯ কোটি ৮১ লাখ ৬৮ হাজার ২৩৫ টাকার চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে।

            এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবেদ আলী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে দপ্তর অনুযায়ী সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা তৈরি করেছি। সে তালিকা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ে চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, আমরা এখন পর্যন্ত জি আর চাল পেয়েছি ১৮শ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ১ হাজার মেট্রিক টন খরচ হয়েছে। শিশু খাদ্য হিসেবে আমরা ১৫ লাখ টাকা পেয়েছিলাম, যা ইতোমধ্যে সকল উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। গো খাদ্য হিসেবে ১৫ লাখ টাকা পাওয়া গেছে সেটিও বিতরণ করা হয়েছে। এর বাইরে আমরা ১ লাখ ৯১ হাজার ঢেউটিনের চাহিদা পাঠিয়েছিলাম। তা এখনো পায়নি। ৮ হাজার পিস তাবুর জন্য আমরা চেয়েছিলাম, তাও পায়নি।

            কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়সার জানান, কুমিল্লা জেলায় এবারের বন্যায় প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির বিষয়ে আমরা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সরকারের কাছে বরাদ্দ চেয়েছি। ইতিমধ্যে আমরা কিছু নগদ অর্থ ও জিআর চাল ও শিশু খাদ্য পেয়েছি। আমাদের গৃহ নির্মাণ মঞ্জুরী প্রয়োজন। গৃহ নির্মাণ খাতে আমরা ৫৭ কোটি টাকা চেয়েছি। তাবু চেয়েছি ৮ হাজার পিস এবং ঢেউটিন চেয়েছি ১ লাখ ৯১ হাজার বান্ডেল। আমরা আশা করছি মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের চাহিদার সরঞ্জামগুলো পেয়ে যাব। এগুলো পাওয়ার সাথে সাথেই যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করতে সক্ষম হতে পারবো।

Share This