মঙ্গলবার, ৬ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিশেষ সম্পাদকীয় অগ্রগতির ২৯ বছরে লাকসামবার্তা

<span class="entry-title-primary">বিশেষ সম্পাদকীয়</span> <span class="entry-subtitle">অগ্রগতির ২৯ বছরে লাকসামবার্তা</span>
৭২ Views

লাকসাম, কুমিল্লা ঃ বুধবার, ১লা জানুয়ারি ২০২৫ইং

মহান আল্লাহ পাকের অসীম কৃপায় এবং এলাকাবাসীর আন্তরিক সহযোগীতায় হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ ১লা জানুয়ারী ২০২৫ইং রোজ বুধবার সাপ্তাহিক লাকসামবার্তা পত্রিকা ২৯তম বছরে পদার্পণ করেছে।

বিশ্বব্যাপী তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে দিন দিন সর্বত্র প্রতিযোগিতা যেমন বাড়ছে, তেমনি জনসচেতনতাও বাড়ছে। অজানাকে জানার বা অন্যকে জানানোর এবং অদেখাকে দেখার বা অন্যকে দেখানোর কৌতূহল থেকেই আসলে মানুষ দিনের পর দিন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ার প্রতিই আকৃষ্ট হচ্ছেন। কিন্ত এমন সব তীব্র প্রতিযোগিতার যুগে একটি গণমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখা এবং সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা মূলত: মফস্বল এলাকা থেকে একটি কঠিন ও দুরহ কাজই বটে! তবু, আমরা বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়েই প্রাণপণ চেষ্টা করে আসছি- লাকসামবার্তা পত্রিকার বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে এবং সামনের দিকে আরো এগিয়ে যেতে। অর্থাৎ কারো পক্ষে পক্ষপাতিত্ব নয়; বিপক্ষেও নয়! দেশের মফস্বল এলাকায় বিশেষ করে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার আপামর মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত লাকসামবার্তা নিরলসভাবে এগিয়ে যাচ্ছে- উভয় পক্ষের জন্যই সম্পূর্ণ সত্য ও বাস্তবতার সাথে নিরপেক্ষতার সাথেই।           মূলতঃ নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠতার সাথে সংবাদ পরিবেশন করাটাই লাকসামবার্তা পত্রিকার অঙ্গীকার শুরু থেকেই। এমন ওয়াদা-অঙ্গীকার থেকে ব্যতিক্রম করার বা হওয়ার মতো লাকসামবার্তা বিগত ২৮ বছরে এক চুল পরিমানও সরে যায়নি। ভবিষ্যতেও যাবেনা বলেই আমরা আশা করি। কারণ আমরা মনে করি দেশকে এগিয়ে নিতে এবং এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে দলমত নির্বিশেষে বিশেষ করে অত্রাঞ্চলের সকলের একান্ত সহযোগিতা পাওয়া এবং সহযোগীতা প্রদান করা উভয়টাই একান্ত আবশ্যক। আশা করি সততা ও নিরপেক্ষতার সাথেই ভবিষ্যতেও আমরা আরো বহুদূর এগিয়ে যেতে। এতে আমাদের ঐকান্তিক যোগসূত্র হবে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সাম্য ও ন্যায়বিচার এবং এলাকার উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধন।

আসলে শুধু খবর সৃষ্টি করাই মিডিয়ার কাজ নয়; বরং খবর সঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়াও গণমাধ্যমের প্রধান কাজ। এ ব্যাপারে আমাদের নানা পদক্ষেপও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমরা সাধ্য অনুযায়ী সীমিতভাবে হলেও সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি।

আমরা চাই- মফস্বল পত্রিকা হলেও লাকসামবার্তা যেন আগামী দিনগুলোতেও তার ঐতিহ্য ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারে। এজন্য সারা দেশের বিশেষ করে অত্রাঞ্চলের রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের প্রতিও আমাদের শ্রদ্ধা আছে, সম্মান আছে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি এবং তদানুযায়ী আমরা দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছি। তেমনি ভবিষ্যতেও যেন একইভাবে বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষতার সাথে সেটুকু বজায় রাখতে এবং পালন করতে পারি- আমরা সে প্রত্যাশাই করছি।

মূলত: সাপ্তাহিক লাকসামবার্তা অসত্যের কাছে, অন্যায়ের কাছে, অন্ধকারের কাছে অমানবিকতার কাছে মাথা নোয়াতে জানে না। জানে না ভালো হোক বা মন্দ হোক- কোনো সমাজকে অবহেলা করতে। কারণ সাংবাদিকতা বা গণমাধ্যম যে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, লাকসামবার্তা সেই মহাসত্য থেকেও মুহূর্তমাত্রও বিস্মৃত হয়নি। সংবাদের গুরুত্ব, সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা, সংবাদসূত্রের বিশ্বস্ততা আমাদের সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্যই বটে! উপরন্ত, বিশ্ব শান্তি, সভ্যতা ও মানবাধিকার রক্ষায় সাপ্তাহিক লাকসামবার্তা যেমন সব সময় সোচ্চার- তেমনি যেখানে অন্ধকার সেখানেই আলোকপাত করাটাই হলো এ পত্রিকার উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য। যতটুকু সম্ভব- সর্বোতভাবে সর্বাত্মক সততার সাথে পাঠকের চাহিদা মেটানোই আমাদের সকল কর্মীদেরও প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য বলেই আমরা মনে করে আসছি।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে এই সাপ্তাহিক ‘‘লাকসামবার্তা” পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করা হয়েছিলো। বহুল প্রচারের ভিত্তিতে ২/৩ বছরের মধ্যেই লাকসামবার্তা সরকারী ডিএফপিভুক্ত হওয়ার মর্যাদা লাভ করে। লাকসামবার্তা বর্তমানে সমগ্র বাংলাদেশের মফস্বল এলাকায় (ঢাকা ও চট্রগ্রাম ব্যতীত) সর্বাধিক প্রচারিত সাপ্তাহিক হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। লাকসামবার্তা পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক শহীদুল্লাহ ভূঁইয়ার বাস্তবধর্মী জনসেবামূলক সুদূর প্রসারী এক চিন্তা-চেতনারই ফসল এটি। আসলে দেশের বিশেষ করে বৃহত্তর লাকসাম অঞ্চলের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার তাড়না মেটাবার একমাত্র বাহন হতে পারে একটি পরিপূর্ণ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদপত্র- এ ধরণের ভাবনা থেকেই তৎকালের কথিত জলা অঞ্চলে অবস্থিত কেয়ারী গ্রামের বাসিন্দা শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া এই লাকসামবার্তা পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। অত:পর, তাঁর সকল মেধা শ্রম আর সম্বল উজাড় করে, পাহাড় সমান প্রতিকূলতা ঠেলে আর সাত সাগর তের নদী পাড়ি দিয়েও গড়ে তোলেন আজকের এলাকাবাসীর প্রিয় পত্রিকা মফস্বলের বহুল প্রচারিত এই লাকসামবার্তা।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আজ পর্যন্ত সেই অঙ্গিকার নিয়েই ঝড়-ঝঞ্ঝা, নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর সমস্যা-সংকটকে তুচ্ছ করেই নিরবচ্ছিন্ন প্রকাশনায় মফস্বল এলাকাবাসীকে তথা দেশ ও জাতিকে সেবা দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গৌরবের এ অভিযাত্রায় লাকসামবার্তা সবসময় লাকসামের মাটি ও মানুষের কথা বলেছেন, এ অঞ্চলের সংকট ও বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন। বৃহত্তর লাকসামের মানুষের সাফল্য ও সম্ভাবনাকে প্রচার করা হচ্ছে নিজেদের প্রয়োজন আর গৌরব মনে করেই। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও আমাদের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা এগিয়ে যেতে চাই আপনাদেরকে সাথে করেই। আপনাদের সুহৃদ সহযোগিতা নিয়েই। আমরা জানি- বিশেষ করে লাকসাম অঞ্চলের মানুষ লাকসামবার্তাকে ভালবাসেন। তাঁরা বিশ্বাস করে থাকেন- লাকসামবার্তা মানেই লাকসাম আর লাকসাম মানেই লাকসামবার্তা। এটাই আমাদের বিরাট পাওয়া এবং বড় অর্জন।

সরকারী মিডিয়াভুক্ত বাংলাদেশের মফস্বলে সর্বাধিক প্রচারিত এই সাপ্তাহিক লাকসামবার্তা পত্রিকার ২৯তম বর্ষ শুরুতে আমরা গৌরবের সাথে বলতে চাই, শুধু দেশে নয়; বিশ্বেও কোনো সংবাদপত্রের জন্য যুগের পর যুগ এভাবে সমান জনপ্রিয়তা ধরে রেখে টিকে থাকার নজির খুব একটা বেশী নেই।

আর এ ক্ষেত্রে দেশের হাজারও গণমাধ্যমের ভিড়ে মফস্বল এলাকায় স্বমহিমায় উদ্ভাসিত এবং আদর্শিক মর্যাদার আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত লাকসামবার্তা বিগত ২৮ বছর চলার দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় সংবাদ প্রকাশে কখনোই কারো সঙ্গে কোনো আপোস করেনি। করেনি কোনো পক্ষপাতিত্বও।

এলাকার স্বার্থের ব্যাপারে লাকসামবার্তা সবসময়ই সোচ্চার থেকেছেন, রেখেছেন নিরপেক্ষ ভূমিকা। কোনোদিন কারো সঙ্গে কোনো আপোষ করেনি। মানুষের ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং আস্থা লাকসামবার্তা’কে উৎসাহিত করেছে, করেছে অনুপ্রাণিত। লাকসামবার্তা আজ শুধু একটি সংবাদপত্র নয়; এটি এখন অত্রাঞ্চলের একটি মুখপত্র হিসেবেই স্বীকৃত। তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে বর্তমানে অনলাইনেও প্রিয় পাঠকগণ লাকসামবার্তা পত্রিকাটি পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

লাকসামবার্তা’র আজ ২৯ বছরে বর্ষ শুরুর গৌরবের এই দিনে আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এ পত্রিকার সকল গ্রাহক, পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের। অভিনন্দন ও প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এই প্রকাশনার সকল কলা-কুশলীদের প্রতি। সাপ্তাহিক লাকসামবার্তা পত্রিকার প্রতি আন্তরিক সহযোগীতা অব্যাহত রাখার জন্যে আমরা আরো কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি- কুমিল্লার বিজ্ঞ জেলা ম্য্যজিষ্ট্রেট, তথ্য অধিদপ্তর এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতিও।

আমাদের সংকটে বা সাফল্যে, সুদিনে কিংবা দুঃসময়ে লাকসামের মানুষ লাকসামবার্তার সাথে থেকেছেন। ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে আমরা আশাবাদী। এ জন্য আজকের লাকসামবার্তা পত্রিকার ২৮ বছর পূর্তি এবং ২৯ বছরে অগ্রগতির এই দিনে আমরা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের দরবারে লাখো শুকরিয়া আদায় করছি। আমরা আশা রাখি, সকল মহলের সাথে ভবিষ্যতেও আমাদের এমন কর্মতৎপরতা অব্যাহত থাকবে। এ ক্ষেত্রে সামনের দিনগুলোয় পথচলা যাতে আমাদের আরো সুন্দর হয় সেজন্য আমরা সকলের আরো আন্তরিক সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি।

সরকারি ডিএফপিভুক্ত সাপ্তাহিক লাকসামবার্তা পত্রিকার আগামীর পথচলা আরো সুন্দর হোক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। নতুন ২০২৫ সাল বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য বয়ে আনুক শান্তি, সমৃদ্ধি, কল্যান ও সাফল্য- এ প্রত্যাশাই করছি। মহান আল্লাহ পাক আমাদের বাংলাদেশ এবং দেশের ১৮ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ আরো সুন্দর রাখুক- আমীন।

Share This