বুধবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভারতে অবৈধ বাংলাদেশীদের ধর-পাকড় অভিযান বাড়ছে!

১১৭ Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার॥ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। গেলো মঙ্গলবার সকালেও দিল্লির কালিন্দ কুঞ্জ এলাকায় বাংলাদেশিদের শনাক্তে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। গত কয়েক দিনের অভিযানে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশ।

            জানতে চাওয়া হলে সেখানকার একজন বাসিন্দা বলেছেন, পুলিশ বাসিন্দাদের কাছে সরকারি পরিচয়পত্র ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য চেয়েছে। এ সময় বাসিন্দাদের বিভিন্ন বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকছে পুলিশ।

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সেখানে প্রায় ৫ থেকে ৬ বার তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তারা এখানে বসবাসের এবং সরকারি পরিচয়পত্রের বিষয়ে তথ্য চেয়েছে। এখানে কোনও বাংলাদেশি বসবাস করেন না।’

            নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশিদের অবৈধ আধার কার্ড ও জাল নথি তৈরি করে দেওয়ার কাজে জড়িত সন্দেহে অন্তত ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আধার কার্ডের অপারেটর ও ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরিতে জড়িত প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞও রয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশিও আছেন।

            দিল্লি পুলিশের দক্ষিণ জোনের ডেপুটি কমিশনার (ডিসিপি) অঙ্কিত চৌহান বলেন, অভিযুক্তরা ভুয়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জাল আধার কার্ড, ভোটার আইডি এবং অন্যান্য ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে বাংলাদেশি নাগরিকদের সহায়তা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসীরা ভারতে প্রবেশের জন্য জঙ্গল পথ ও এক্সপ্রেস ট্রেন ব্যবহার করেছেন। দিল্লি পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, জাল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভুয়া নথি সরবরাহের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

            অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে দুই মাসের বিশেষ অভিযান চালানোর নির্দেশও দেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর। দিল্লি পুলিশের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে এএনআই বলেছে, দিল্লিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার অবৈধ বাংলাদেশিকে শনাক্ত করা হয়েছে।

            ওদিকে, ভারতের মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বলেছেন যে, ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের মহারাষ্ট্র থেকে তাড়ানো হবে। যারা বৈধ নথি ছাড়া মহারাষ্ট্রে বসবাস করছে, তাদের চিহ্নিত করার জন্য রাজ্যজুড়ে তল্লাশি অভিযান চলছে।’ বুধবার রাজ্যের নাগপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান তিনি। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।

            তিনি বলেন, ‘ অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজ্যে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের খুব শিগগিরই ফেরত পাঠানো হবে।’ সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে কল্যাণ শহর ও এর আশপাশের এলাকা থেকে কয়েকজন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে আটক করে মুম্বাই পুলিশ। রাজ্যের অন্যান্য এলাকাতেও বাংলাদেশি নাগরিকরা অবৈধভাবে বসবাস করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দিল্লিতে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় অভিযানের খবর একাধিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শতাধিক সন্দেহভাজন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে আটক করা হয়।

  উল্লেখ্য, দিল্লিতে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের চিহ্নিত করতে গত ১১ই ডিসেম্বর থেকে অভিযান শুরু করে পুলিশ। মূলতঃ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বৈধ নথিপত্র ছাড়াই বসবাসকারী বাংলাদেশি অভিবাসীদের শনাক্ত, আটক এবং প্রত্যাবাসনের ব্যাপক প্রচেষ্টা চলছে। অর্থাৎ অবৈধ বাংলাদেশিদের ধরতে কোমর বেঁধে নেমেছে ভারত। দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের শনাক্ত করা হচ্ছে। রোববার দেশটির সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে দিল্লি পুলিশ বলেছে, ‘‘বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবৈধ বসবাসের বিষয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায় আউটার ডিস্ট্রিক্ট পুলিশ দিল্লিতে বৈধ নথিপত্রবিহীন ব্যক্তিদের সনাক্ত, আটক এবং প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা জোরদার করেছে।’’

            সম্প্রতি আউটার ডিস্ট্রিক্টের আওতাধীন এলাকায় দিল্লি পুলিশ একাধিক যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পুরো জেলাজুড়ে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের শনাক্তের ল্েয নিবিড় তল্লাশি অভিযান পরিচালনা ও তথ্য সংগ্রহের জন্য ডিস্ট্রিক্ট ফরেইনার সেলের কর্মকর্তাসহ থানা পুলিশ ও পুলিশের স্পেশাল শাখার সমন্বয়ে একাধিক টিম গঠন করা হয়েছে।

            যৌথ অভিযান চলাকালীন আউটার ডিস্ট্রিক্টের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশিদের বাসায় বাসায় গিয়েও তল্লাশিও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। দিল্লি পুলিশ বলেছে, আউটার ডিস্ট্রিক্টের আওতাধীন এলাকায় বসবাসকারী বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এই বাংলাদেশিদের পুঙ্খানুপুঙ্খ জিজ্ঞাসাবাদ, তাদের নথিপত্র সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। পরে তাদের নিজ নিজ এলাকায় স্থানীয় পুলিশের সাথে সমন্বয় করে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

            আসলে ভারতের রাজধানীতে বাংলাদেশিরা অবৈধ উপায়ে বসবাস করছেন বলে দিল্লির গর্ভনরের কাছে দেশটির কিছু গোষ্ঠী চিঠি দেওয়ার পর পুলিশ এভাবে অভিযান জোরদার করেছে। এর আগে, গত ১৫ই ডিসেম্বর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতীশি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটি চিঠি লেখেন। এতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করা ছাড়াই দিল্লিতে ‘‘বিপুলসংখ্যক অবৈধ রোহিঙ্গা অভিবাসীদের’’ বসতি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

            চিঠিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, দিল্লিতে অবৈধ অভিবাসীদের বসবাসের এই ঘটনা বছরের পর বছর ধরে চলছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও তাদের ঠিকানা প্রকাশ করার আহ্বান জানান তিনি। দিল্লির সরকার ও এর বাসিন্দাদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া রোহিঙ্গাদের নতুন করে আর পুনর্বাসন করা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন অতীশি।

            এদিকে, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) দিল্লি সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেবা ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির (এএপি) বিরুদ্ধে নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক সুরক্ষিত করতে দিল্লিতে অবৈধ রোহিঙ্গা অভিবাসীদের বসতি স্থাপনের সুযোগ দিয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন। দেশটির বার্তা সংস্থা এএনআইর সঙ্গে আলাপকালে দিল্লি বিজেপির সভাপতি সচদেবা বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিরা দিল্লির নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।’’

            উল্লেখ্য, গত ৫ই আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ করে ভারতে পালানোর পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে অবৈধ বাংলাদেশিদের শনাক্ত করতে কোমর বেঁধে নেমেছে ভারতের কয়েকটি রাজ্য। তদুপরি, দিল্লি, মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি আসামেও চলছে অভিযান।

            মঙ্গলবার ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত কয়েকদিনের অভিযানে এখন পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশিকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে।

            মহারাষ্ট্র পুলিশ ২৩শে ডিসেম্বর জানিয়েছেন, গত দুই দিনের অভিযানে ৮ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, থানেতে অবৈধভাবে থাকছিলেন তারা। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে সোমবার ৩ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধেও অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগ রয়েছে। সোমবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা জানান, রাজ্য থেকে ৬ জন অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে আটক করা হয়েছে।

            অন্যদিকে, দেশব্যাপী পৃথক এক অভিযানে সম্প্রতি বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন আসরুল্লাহ বাংলা টিমের একাধিক সদস্য আটকের পর অবৈধ অনুপ্রবেশের ওপর নজরদারি আরও বাড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতেও।

            মহারাষ্ট্র পুলিশ সোমবার (২৩শে ডিসেম্বর) জানিয়েছে, গত দুই দিনের অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেশ ক’জন জন বাংলাদেশিকে। পুলিশ জানিয়েছে, থানেতে অবৈধভাবে থাকছিলেন তারা। গোপন সূত্রের খবর অনুযায়ী পুলিশ গত শনি ওরোববার অভিযানে নামে। কালহার এবং কোনগাঁওতে তল্লাশি চালানো হয়। এরপর এক মহিলাসহ মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদের সবারই বয়স ২২-৪২ বছরের মধ্যে। ভারতে থাকার জন্য কোনো বৈধ নথি দেখাতে পারেননি তারা। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৩ জন ভাঙা-লোহালক্কড় বিক্রির ব্যবসা করতেন। ২ জন শ্রমিকের কাজ করতেন। একজন রাজমিস্ত্রিও একজন কলমিস্ত্রি ছিলেন।

            তাছাড়া, ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে সোমবার ৩ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধেও অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগ রয়েছে। আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। কেরালায় ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় কর্মচারীদের মজুরি কিছুটা বেশি হওয়ায় কাজের প্রলোভন দেখিয়ে মাঝে মধ্যেই সেখানে অবৈধ বাংলাদেশিদের নিয়ে আসার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি আনসাউল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য গ্রেপ্তারের পর অবৈধ বাংলাদেশিদের শনাক্তকরণে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে কেরালা রাজ্যে সরকার। তবে সোমবার এই রাজ্যে একজনও গ্রেপ্তার হয়নি।

            সোমবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা জানান, রাজ্য থেকে ৬ জন অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে আটক করা হয়েছে। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। তবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কোনো অংশ দিয়ে অনুপ্রবেশ হচ্ছিল, সেই বিষয়ে বিশদভাবে কিছু জানাননি তিনি। এদিন এক্স পোস্টে হেমন্ত বিশ্বশর্মা লিখেন, ‘আসামে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কোনো নমনীয়তা দেখানো হবে না। অনুপ্রবেশেরকারীদের ওপর কড়া নজর রাখছে আসাম পুলিশ। ৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ধরে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।’

            প্রকাশ থাকে যে, ভারতের উত্তর-পূর্বে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৮৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে উঠলে এই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদাড়ি বাড়ায় বিএসএফ। বিএসএফ জানায়, আগাস্ট মাস থেকে এখনও পর্যন্ত ১৭০ জনেরও বেশি অনুপ্রবেশকারীকে আসামে আটকানো হয়েছে।তাদের অধিকাংশকেই ফের বাংলাদেশেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Share This