কুমিল্লার পাঁচটি সীমান্ত এলাকার অন্তত ৫০ স্পট দিয়ে আসছে মাদকের বহর


সাদিক মামুন॥ রাত যত বাড়ে পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে লাগোয়া কুমিল্লার ৫ উপজেলার সীমান্ত এলাকার অর্ধ শতাধিক স্পট দিয়ে অবাধে আসে মাদকের বহর। দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা মাদক বাণিজ্যের পথ ধরে সীমান্ত এলাকায় গড়ে ওঠেছে মাদক চোরাকারবারিদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সীমান্তে বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযানেও কমছে না মাদক চোরাচালানের ভয়াবহতা। গত ৫ই আগস্টের পটপরিবর্তনের পর অন্তত মাস দু’য়েক সীমান্তে মাদক চোরাচালানে কিছুটা শিথিলতা থাকলেও গত দুই-আড়াই মাসে ফের নড়েচড়ে ওঠেছে সীমান্তের মাদক সিন্ডিকেটগুলো।
জানা গেছে, বিজিবি-বিএসএফের লাইনম্যান নামধারীরা ভারত থেকে কুমিল্লার সীমান্তে মাদক আনার ব্যাপারে বেশ সক্রিয়। মাদক সিন্ডিকেটদের সাথে তাদের সরাসরি যোগাযোগ হয়ে থাকে। সীমান্তের যেসব অংশে কাঁটা তারের বেড়া নেই এসব জায়গা দিয়েই মাদক ঢুকছে কুমিল্লায়। সিন্ডিকেটগুলো চাহিদা অনুযায়ী কুমিল্লার জন্য রেখে বাকি মাদক পাচার করে থাকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বছর ছ’য়েক আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে কুমিল্লার ৮২ জন মাদক কারবারি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকের নাম প্রকাশ হলেও এযাবত তালিকার মাত্র ৫-৬ জন আটক হয়েছে বলে কুমিল্লার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে। তবে তালিকার উল্লেখযোগ্য মাদককারবারি ও পৃষ্ঠপোষক বা গডফাদারদের আটক করতে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেনি তৎকালিন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রাকারি অন্য সংস্থাগুলো।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, চৌদ্দগ্রাম ও সদর দক্ষিণ উপজেলার সীমান্তবর্তী অর্ধশতাধিক পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে অবাধে আসছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, মদসহ নানারকম মাদকদ্রব্য। এ ছাড়া বিয়ার ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন পণ্য ভারত থেকে চোরাকারবারিদের মাধ্যমে কুমিল্লার ওই পাঁচটি সীমান্তের অন্তত ৫০টি পয়েন্ট দিয়ে এখানে ঢুকছে। ভারত সীমান্ত ঘঁষা ওই পাঁচটি উপজেলার উল্লেখযোগ্য ও পরিচিত কয়েকটি পয়েন্ট হচ্ছে বুড়িচংয়ের চড়নল, বারেশ্বর, সংকুচাইল, রাজাপুর, হায়দ্রাবাদনগর। ব্রাহ্মণপাড়ার শশীদল, আশাবাড়ি, নয়নপুর, তেতাভূমি। কুমিল্লা সদরের বিবিরবাজার, বৌয়ারা, গোলাবাড়ি, সাহাপুর, শিবের বাজার। সদর দক্ষিণের একবালিয়া, তালপট্টি, সুবর্ণপুর, চৌয়ারা, যশপুর, শ্রীপুর, কনেশতলা, দড়িবটগ্রাম, রাজেশপুর। চৌদ্দগ্রামের গোমারবাড়ি, আমানগন্ডা, ছফুয়া, জগন্নাথদীঘি, গোলপাশা, বসন্তপুর, সাতবাড়িয়া, পানপট্টি, তারাপুর, কাইচ্ছুটি, কোমারডোগা ও পদুয়া।
ব্রাহ্মণপাড়ার শশীদলের কাছে হরিমঙ্গল, বাগরা, গঙ্গানগর এবং বুড়িচংয়ের রসুলপুর থেকে মাদকের চালান বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লোকাল ট্রেনে হয়ে থাকে। আবার সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রাম সীমান্তে মাদকের ছোট বড় চালান যানবাহনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পথে হয়ে থাকে। আর সন্ধ্যার রাত যত বাড়তে থাকে কুমিল্লা সদরের সীমান্ত এলাকার বিবিরবাজার, বৌয়ারা, গোলাবাড়ি, সাহাপুর, শিবের বাজার হয়ে মাদক আসে এখানকার কারারিদের হাতে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষীবাহিনীর দাবি, মাদক নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। বিভিন্ন সময় অভিযানে মাদক পাচারকারীদের আটক ও বিপুলু মাদক জব্দ করছেন। জেলার বিশিষ্টজনরা বলছেন, মাদকের চাহিদা ও ব্যবসা দুটোই সমানতালে বেড়েছে। মাদকের প্রভাবে সামাজিক অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে, বিপদগামি হচ্ছে তরুণ-যুবকরা। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে মাদককা-ে অশান্তি লেগে আছে। মাদকের ভয়াবহতা কমাতে সীমান্তরক্ষী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষী বাহিনীকে আরও তৎপর ও আন্তরিক হতে হবে।