মঙ্গলবার, ৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লায় দূর্নীতি দমন কমিশনের উদ্যোগে গণশুনানী অনুষ্ঠিত

কুমিল্লায় দূর্নীতি দমন কমিশনের উদ্যোগে গণশুনানী অনুষ্ঠিত
৯৯ Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ কুমিল্লায় দূর্নীতি দমন কমিশনের উদ্যোগে গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বুধবার (২৯শে জানুয়ারি) কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা মিলনায়তনে দুদকের এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে হয়রানি, দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষ নেয়াসহ নানা অভিযোগের তোলেন সেবাগ্রহীতারা। গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

            সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলে দুদকের ওই গণশুনানি। সেখানে বেশ কয়েকটি সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধশতাধিক অভিযোগ করেন সেবাগ্রহীতারা। অধিকাংশ অভিযোগ তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয়। আর কয়েকটি অভিযোগ অনুসন্ধান করতে দুদককে নির্দেশনা দেয়া হয়। এ সময় একটি অভিযোগে তাৎক্ষণিক দুদকের মামলা দায়ের করা হয়।

            এ সময় যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়, পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়, নির্বাচন কার্যালয়, বিআরটিএ, কালিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ভূমি অফিস, জোনাল সেটেলমেন্ট কার্যালয়, সদর হাসপাতাল, ডিএসবিসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

            এ সময় গণশুনানীতে বিআরটিএ কুমিল্লার বিরুদ্ধে করা অভিযোগে মালপাড়া চন্ডীপুর এলাকার বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, আমি লাইসেন্সের ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম ২০২০ সালে। আমাকে ২ মাস পরে আসতে বলে আমাকে রানার কার্ড দিয়েছে। ৬ মাস পরে কার্ড দিবে বলে আমাকে কার্ড দেয় নি। আমি কার্ড নিতে আসলে বারবার আমাকে রেন্যু করে দেয়, আমাকে লাইসেন্স আর দেয় না। আমি কার্ড নিতে আসলে তারা আমাকে বারবার ঘুরায়। কার্ড দিবে এই কথা আমাকে কখনো বলে না।

            কোতওয়ালীর ইলাশপুর এলাকার কামাল হোসেন বলেন, আমি ২০২০ সালে আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স রেন্যু করার জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিই। এরপর থেকে আমি যখনই বিআরটিএ অফিসে যাই আমাকে বলে যে কয়দিন পর আসেন। এমন করতে করতে ৪ বছর পার হয়ে গিয়েছে, আমার কার্ড আর আমি রেন্যু করতে পারিনি। পরে ২০২৪ সালে এসে আমাকে কার্ড দিবে বলে কাউন্টারে যেতে বলে। সেখানে আমার কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা বেশী দিতে বলেছে তারা।

            পূবালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে করা অভিযোগে কাপ্তার বাজার এলাকার নাসিমা আক্তার বলেন, পূবালী ব্যাংকে আমার যৌথ একাউন্টে ৪০ লাখ টাকার এফডিআর করি। ম্যানেজারের কথা শুনে আমরা সিঙ্গেল সিঙ্গেল একাউন্ট করে টাকা জমা করি। এভাবে করলে কেউ টাকা নিতে পারবে না এই শর্ত সাপেক্ষে এফডিআর করি। পরে ব্যাংক কর্মকর্তারা আমাকে না জানিয়ে আমার ছোট ভাইকে টাকা লোন দিয়ে দেয়। ম্যানেজার চালাকি করে আমাকে দিয়ে সিঙ্গেল একাউন্ট খুলিয়েছিলো।        কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এর বিরুদ্ধে করা অভিযোগে ২৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, ২০২২ সালে জানতে পারলাম আমার ব্যক্তি জায়গায় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের টেন্ডার হয়েছে। আমি এর বিরুদ্ধে ৩টা অভিযোগ করি। তাও তারা কোনো কাজ করেনি। তারা উলটো আমার ছাদের নিচ দিয়ে রাস্তা ও ড্রেন করে। এতে আমার ৬০-৭০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমি এর নিষ্পত্তি চাই। এছাড়াও, আমার জায়গা দখল করে আমার প্রতিবেশী অননুমোদিত নকশা অনুযায়ী ভবন তৈরী করে। এতে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাই নি। ভবন তৈরী করে ফেলেছে তারা।

            কুসিকের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগে ৪নং ওয়ার্ডের কাজী আনিস আহমেদ বলেন, সিটি কর্পোরেশন অহরহ ইমারত আইন লঙ্গন করে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিচ্ছে। এতে আমি ভুক্তভোগী। যেকোনো সময় এতে বিপদ ঘটতে পারে।

            আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস কুমিল্লার বিরুদ্ধে করা এক অভিযোগে খোরশেদ আলম গাজী নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, গত ১০ই ডিসেম্বর আমার মাকে হজ্বে পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট নিতে যাই। সেখানে আমাদের সিরিয়াল ১২টায় থাকলেও বিকাল ৫টায়ও আমি পাই নি। পরে দেখি যে ৫০০ টাকা দেয়, তার ফিঙ্গার নিয়ে নেয়া হচ্ছে। আমি অভিযোগ দিলেও আমাকে বলা হয় ৫০০ টাকা দিয়ে ফিঙ্গার দিয়ে দিতে। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একে একে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

            জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছারের সঞ্চালনায় ও সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ ইসমাইল হোসেন, কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ এবং মহাপরিচালক (প্রতিরোধ ও গণসচেতনতা) মোঃ আক্তার হোসেন। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রধানগণ, জনপ্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

Share This

COMMENTS