
জাদুঘর সংরক্ষণে লাকসামে রাজনৈতিক ঐক্যমত ভুমিদস্যুদের কবল থেকে নওয়াব ফয়জুন্নেছার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রক্ষা এখন সময়ের দাবী

ষ্টাফ রিপোর্টার\ কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার প্রাণকেন্দ্র নবাব ফয়জুন্নেছার স্মৃতি বিজড়িত জাদুঘর সংরক্ষনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্ধ ঐক্যমত। পশ্চিমগাও মৌজার প্রতœতত্ত¡ সম্পদ হিসেবে সরকারি গেজেটভুক্ত ওয়াকফ রাহে লিল্লাহ সম্পদ ঘিরে নওয়াব ফয়জুন্নেছা জাদুঘরের পুর্বদিকের প্রবেশ পথটি এখন ভুমিদস্যুদের কবলে। এনিয়ে মিডিয়ায় লেখালেখি হলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নড়েচড়ে বসে। এনিয়ে কেউ যেন রাজনৈতিক দলকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করতে না পারে এব্যাপারে প্রশাসনকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারা।
এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা কর্ণেল (অবঃ) আনোয়ারুল আজিম বলেন, নওয়াব ফয়জুন্নেছার এই ঐতিহ্য লালন করার দায়িত্ব আমাদের সবার। এনিয়ে কেউ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করলে ভুল করবে। বিএনপির নাম ভাংগিয়ে কেউ অনৈতিক কাজ করতে চাইলে পুলিশে সাপর্দ করুন।
বিএনপি কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো: আবুল কালাম বলেন, দখলবাজ ভুমিদস্যুদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তার আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা।
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ এর সাধারণ সম্পাদক ড. সৈয়দ এ কে এম সারওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, বিষযটি নিয়ে মিডিয়ার লেখালেখি হয়েছে। প্রশাসনের উচিত এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যাবস্থ গ্রহন করা।
উল্লেখ্য, উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম মহিলা নবাব ফয়জুন্নেছা চেীধুরানীর জনকণ্যানে ২১,১৪৮ শতক জায়গা ওয়াকফ রাহে লিল্লাহ দলিল করে যান। যার অধিকাংশ মোতয়ালীদের কারসাজিতে বেহাত হয়ে গেছে। কখনো মোতয়ালী ওয়াকফ দলিল গোপন করে মালিক সেজে বিক্রি করেছেন। আবার কখনো অন্যকে মোতয়ালী বানিয়ে নিজেই ওয়াকফ সম্পদের মালিক হয়েছেন। মুলত এসব কারনে হারাতে বসেছিলো পশ্চিমগাও নবাব বাড়ির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। বাধ্য হয়ে সরকার ২০১৭ সালে গেজেটের মাধ্যমে নবাব ফয়জুন্নেছা বাড়ির ৪.৫৫ একর জায়গা প্রতœতত্ত¡ সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে। যা ভুমিদস্যুদের মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘদিন বিভিন্ন জটিলতার কারনে সংস্কার, অযতœ ও অবহেলার কারনে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে নওয়াব ফয়জুন্নেসার স্মৃতিবিজড়িত পশ্চিমগাঁয়ের বাড়িটি। অধিকাংশ দরজা জানালা উধাও। ১০ বছর যাবত পুর্ব দিকের প্রবেশ গেট বন্ধ করে দেয় ভুমিদস্যুরা। বেদখল হয়ে গেছে ওয়াকফ এস্টেটের অনেক জায়গা। লুটপাট হয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ও মুল্যবান নিদর্শন। ধীরে বাড়ির ইট বালু খুলে নেয়ার প্রস্তুতি চলছিলো। তৎকালীন সাংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে.এম.খালিদ গত ২রা জুন ২০২৩ নবাব ফয়জুন্নেছার বাড়ী পরির্দশন করেন এবং যাদুঘর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। সর্বশেষ ওয়াকফ প্রশাসনের সাথে জাতীয় জাদুঘরের সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে সকল প্রতিবন্ধকতার অবসান হয়। যাতে মোতয়ালী সৈয়দ মাসুদুল হকের ক্ষমতা খর্ব করে নওয়াব ফয়জুন্নেছা ওয়াকফ এস্টেটের সার্বিক তত্ত¡াবধানে জন্য জাদুঘরকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
সম্প্রতি ভূমিদস্যুতা, পুলিশের নিস্ক্রিয়তা ও ভুমি অফিসের সঠিক তদারকির অভাবে সরকার গেজেটেড চৌহদ্দির জায়গা ও ওয়াকফ এস্টেটের সম্পদ দখল উৎসবে মেতে ওঠে।
অতি সম্প্রতি নওয়াব ফয়জুন্নেছা জাদুঘরের পূর্ব দিকে ঐতিহাসিক গেইটটি বেআইনীভাবে বন্ধ করে দেয় ছৈয়দ আলী মিয়া। যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কায়সার হামিদের তদন্ত প্রতিবেদনে ধরা পড়ে। আরএস নকশায় দেখা যায়, নওয়াব বাড়ীর পুর্বদিকে পাকা স্থাপনা ও গেইট দৃশ্যমান। সৈয়দ রফিকুল হককে মালিক বানিয়ে সম্পাদিত দলিলের হিস্যায় দেখা যায় তর্কের খাতিরে তিনি ১ ডিং জায়াগার দাবিদার। অথচ ছৈয়দ আলীকে রেজিস্টি দিয়েছেন ৫ ডিং। চৌহদ্দি উত্তরে উল্লেখ থাকলেও ছৈয়দ আলী দখল করতে এসেছে দক্ষিণ প্রান্তে। পৌরসভা থেকে প্লান পাস করিয়েছেন ২০১৬ সালে। যার মেয়াদ ৫ বছর পূর্বে বাতিল হয়ে গেছে। তদপরি এনিয়ে আদালতে মামলা চলমান। কিন্তু বিচারাধীন বিষয়ে আইন অমান্য করে গায়ের জোরে নবাব ফয়জুন্নেছা জাদুঘরের পুর্ব দিকের গেইট বন্ধ করে দৃষ্টতা দেখিয়েছে। যা দন্ডনীয় অপরাধও বটে।
বিয়ষটি তদন্ত করে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কায়সায় হামিদ সাংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের সচিব, জেলা প্রশাসক ও লাকসাম পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। পৌরসভার পক্ষ থেকে এসব অবৈধ স্থাপনা নোটিশ পাওয়া মাত্র উচ্ছেদের জন্য সৈয়দ আলী ও আমীর হোসেনকে নির্দেশ দিলেও রহস্যজনক কারনে নবাববাড়ির পুর্বদিকের গেইটটি এখনও উম্মুক্ত করা হয়নি।
উল্লেখ্য, পশ্চিমগাঁও মৌজায় অবস্থিত উপজেলা পরিষদের আশেপাশে অসংখ্য সরকারী সম্পদ বেদখল হয়ে গেছে। কোন অভিযোগ উঠলে ভূমি অফিস, তহশিল ও পৌরসভা উদোঁড় পিন্ডি বুদোঁড় ঘাড়ে চাপায়। কাজের কাজ কিছু ই হয়না।
পশ্চিমগাঁও মৌজার যাবতীয় আরএস রেকর্ডপত্র চুরির সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভুমিদস্যুরা ভুয়া বিএস করে সরকারি খাস ও নবাব ফয়জুন্নেছা ওয়াকফ রাহে লিল্লাহ সম্পদ দখল বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। যা দেখার কেউ নেই। এলাকাবাসী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানাচ্ছে।