শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তি চরমে ৫০ শয্যার চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সেবা বিঘিœত

১৫ Views

            আবদুল মান্নান\ জনবল সংকট, কম শয্যা, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবসহ নানা কারনে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সেবা থেকে বঞ্চিত উপজেলার গ্রামীন জনপদের লাখ লাখ মানুষ।

            একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় প্রায় ৫ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য রয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে প্রতিদিন বহিঃর্বিভাগ ও জরুরী বিভাগে ৫ শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতির অভাবে চিকিৎসা ছাড়াই তারা ফিরে যেতে হয়।

            সপ্তাহ যাবত সরজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সরকারি হাসপাতালটিতে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা দেয়ার নিয়ম থাকলেও বেলা ১০টার আগে চিকিৎসকদের দেখা মিলেনা। আবার দুপুর ১টা বাজার সাথে সাথেই দেখা যায় চিকিৎসকরা তাদের নির্ধারিত চেম্বার থেকে চলে যান। এতে বর্হিঃবিভাগে আগত রোগীরা তাদের কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

            বর্হিঃবিভাগে টিকিট কাউন্টারে টিকেটের মূল্য ৩ টাকা নির্ধারিত থাকলেও ভাংতি নাই বলে রোগীদের  নিকট থেকে ৫-১০ টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে রোগীদের বিভিন্ন প্যাথলজি পরীক্ষা বিশেষ করে এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাফির জন্য হাসপাতালের প্যাথলজিতে প্রেরণ না করে দালালদের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রেরণ করেন। এতে গরিব রোগীরা সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং সরকারও রোগীদের প্যাথলজি সেবার মাধ্যমে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়ে প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিন গড়ে ৩০/৪০ জন বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে আসেন। এক্সরে মেশনটি ২০২৪ সালের আগস্টে বন্যায় নষ্ট হয় যায়। এই পর্যন্ত ৯ মাস পার হয়ে গেলেও মেশিনটি অকেজো অবস্থায় রয়েছে। হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণে এম্বুলেন্স থাকলেও চালকের অবহেলায় রোগীরা অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাচ্ছে না। বারবার ফোন দিলেও চালককে পাওয়া যায় না। এতে প্রাইভেট এম্বুলেন্স এর মালিক ও চালকরা সিন্ডিকেট তৈরি করে রোগীদের নিকট থেকে বেশি টাকা আদায় করছে।             হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য রয়েছে মাত্র ৫০টি শয্যা। কিন্তু প্রায় ৫ লাখ জনসাধারনের জন্য অত্যন্ত অপ্রতুল। এতে করে রোগীদেরকে ফ্লোরে ও বারান্দায় অবস্থান করে সেবা নিতে দেখা যায়।  হাসপাতালে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিভিন্ন জায়গায় অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।

            অন্যদিকে, হাসপাতালে ৩০ জন  নার্সের মধ্যে ৩ জন বিএসসি নার্সিং শিক্ষার জন্য হাসপাতালের বাইরে রয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী ভর্তি হলেও কোন কোন সময় শতাধিক রোগী এসে জমা হয়। এদের মধ্যে ডায়রিয়া ও শিশুদের মধ্যে ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। হাসপাতালের ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, এখানে খাবারের মান অত্যন্ত নিম্ন মানের এবং নিয়মিত ডাক্তারও আসে না। নার্সরাই কোনমতে সেবা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। হাসপাতাল থেকে কোন প্রকার ওষুধই দেয়া হয় না। রোগীদেরকে ছোট ছোট ¯িøপ লিখে বাইরে থেকে সকল ওষুধ কিনে আনতে বলা হয়। এমনকি হ্যান্ড গøাভস পর্যন্ত রোগীদেরকে বাইর হতে কিনতে হয়।

            হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে  বহিঃবিভাগে ২২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও মাত্র ১৫ জন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন।  এদের মধ্যে ৬ জন ডাক্তার সংযুক্তিতে রয়েছে জেলা সদরে সরকারি হাসপাতালে। দিনের বেলা বিভিন্ন ক্লিনিকের প্রতিনিধিরা এখানে রোগীদেরকে ভুল বুঝিয়ে তাদের ক্লিনিকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। সেখানে উপস্থিত ডাক্তাররা রোগীদেরকে দিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করিয়ে অনেক টাকা খরচ করায়। রাতে হাসপাতাল কমপাউন্ড হয়ে উঠে  মাদকাসক্তদের অভয়ারণ্য। ভর্তি থাকা রোগীরা এবং রোগীদের সাথে যারা আসেন এই মাদকাসক্তদের মাধ্যমে তারা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন।

            চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রশিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, দিনের বেলায় রোগীদেরকে আমরা কাউন্সিলিং করছি এবং সকল পরীক্ষা হাসপাতালে করাতে পরামর্শ দিচ্ছি। রোগীরাই অন্য কারো কথায় প্রলদ্ধ হয়ে তারা বাইরে গিয়ে মাঝে মধ্যে পরীক্ষা করাচ্ছে। যে দালাল চক্র রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। মাদকের বিষয়ে আমরা পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করেও কোন কাজ হচ্ছে না। নিয়মিত টহল দিলে এই মাদকসেবিদের দৌরাত্ম হাসপাতাল কম্পাউন্ডে বন্ধ হবে। তিনি আরো বলেন, এখানে চিকিৎসকদের আবাসিক ভবনগুলো  অত্যন্ত পুরাতন হয়ে যাওয়ায় এখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। যার ফলে ডাক্তাররা অন্যত্র ভাড়া বাসায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিজেও একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বাইরে থাকছেন। জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে দিয়ে কত কাজ করানো যায়? ৪ জন কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও এখানে মাত্র ১ জন কর্মচারী দিয়ে পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। তথাপি আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করছি।  উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বারবার অবহিত করেও জনবল সংকট পুরন করতে পারছি না। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মেশিনগুলো অকেজো হয়ে গেছে। এগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছেনা। মুলতঃ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শতভাগ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সহজ হতো।

Share This

COMMENTS