শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মনোহরগঞ্জে এলজিইডি রাস্তার উন্নয়ন কাজে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ !

১৩ Views

            মীর শাহ আলম\ কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) অধীন পৌনে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন কাজ করছে আত্মগোপনে থাকা ঠিকাদারের লোকজন। তাতে রাস্তার উন্নয়ন ও প্যালাসাইডিং ওয়াল নির্মাণে স্থানীয় প্রকৌশলীর যোগসাজশে অত্যন্ত নিম্ন মানের ইট-সুরকি ও নির্মাণ-সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

            অধিকাংশ সময় রাতের বেলায় কাজটি করা হচ্ছে এবং প্রকাশ্যে এমন নি¤œমানের কাজের বিষয়ে অভিযোগ করা হলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। এ ব্যাপারে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন।

            খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা ইউনিয়নের সিকচাইল-ঠাকুর বাজার এবং লৎসর ব্রিজ-লৎসর বাবুল মেম্বার বাড়ি পর্যন্ত মোট ১ দশমিক ৪৭৬ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়নের পৌনে ৩ কোটি টাকার কাজ পায় মাস্টার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের উন্নয়ন সমন্বয়কারী কামাল উদ্দিনের।

            তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত বছরের ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ওই ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে গেছেন। পরে ইসমাইল হোসেন বাবুল নামে এক ব্যক্তি স্থানীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ের এক শ্রেণির দুর্নীতিপরায়নদের সাথে আঁতাত করে দিনে-রাতে তড়িঘড়ি করে কাজটি শুরু করেন। এরই মধ্যে পৌনে ৩ কোটি টাকার কাজের বিপরীতে ১ কোটি ১৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা বিল উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।

            সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার লৎসর ব্রিজ থেকে লৎসর বাবুল মেম্বার বাড়ি পর্যন্ত গ্রামীণ সড়কটির পাকাকরণের কাজ চলছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ‘পলাতক ঠিকাদারের লোকজন নি¤œমানের ইট ও ইট ভাটার পরিত্যক্ত খোয়া দিয়ে কাজটি করছেন। রাতের অন্ধকারে ট্রাক্টরযোগে সড়কটিতে খোয়া ফেলা হয়, এসব খোয়ায় দিনের বেলায় পানি স্প্রে করে ইটের কালার আনা হয়।

            এ ছাড়া রাস্তাটির পাশে সিসি ঢালাই ছাড়াই বেজমেন্টে পলিথিন বিছিয়ে যেনতেনভাবে প্যালাসাইডিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়, যা এখনই অনেকটা হেলে পড়েছে। অত্যন্ত নি¤œমানের কাজ হওয়ায় যে কোনো সময় ওয়ালটি খালে ধসে পড়ার আশংকা রয়েছে। পলাতক ঠিকাদারের লোকজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে দিনে-রাতে অত্যন্ত নি¤œমানের কাজ করে সরকারি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

            এদিকে রাস্তাটি পাকাকরণ ও ওয়াল নির্মাণে নি¤œমানের কাজের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে জসিম উদ্দিন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা গত ৭ই এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করেন। কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

            এসব বিষয়ে ঠিকাদার কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি। তবে মনোহরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহ্ আলম বলেন, ‘কাজ পেয়েছে মাস্টার এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখন তাদেরকে দেখা যাচ্ছে না। কারা কাজটি করছে জানি না। কাজের মান নিয়ে অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, নিম্ন মানের কাজ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঠিকাদারের লোকের সঙ্গে প্রকৌশল অফিসের কারও যোগসাজশের অভিযোগ সঠিক নয়।’

Share This

COMMENTS