৩১ শয্যার জনবল দিয়ে ৫০ শয্যার কার্যক্রম চলছে কুমিল্লা সদর দক্ষিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

আবদুল মান্নান মজুমদার\ কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা কার্যক্রম চলছে ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৫৯টি পদের মধ্যে ১৭টি পদ শূন্য রয়েছে। ফলে উপজেলাবাসী কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ২০২০ সালে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগ চালু করা হয়েছে। ২০২১ সালের নভেম্বরে আন্তঃবিভাগ চালু করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা শাখা-১ এর স্মারক নং ৪৫.০০.০০০০.১৬০.৯৭.০০৪.২০.১০ তারিখঃ ৪ঠা জানুয়ারি ২০২২ খ্রি. মোতাবেক কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ ও বর্ধিত শয্যায় সেবা কার্যক্রম চালুকরণের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ২০শে মে তৎকালীণ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিন্হা উপজেলার উত্তর রামপুর গ্রামে সাবেক কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌর উন্নয়ন কমিটির সদস্য হাজী আনোয়ার উল্লাহ’র বাড়িতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর অস্থায়ী কার্যালয় উদ্বোধন করেন। পরে একই বছরের ১৭ই অক্টোবর শ্রীমন্তপুর এলাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্থায়ী ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন চারদলীয় জোট সরকারের তৎকালীণ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ও বর্তমান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি ও কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য এবং বর্তমান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জননেতা মনিরুল হক চৌধুরী।
২০০৭ সাল থেকে সীমিত পরিসরে জরুরী বিভাগ ও আউটডোর বিভাগে রোগীদের সেবা প্রদান করে আসছে উক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অস্থায়ী কার্যালয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম শুরু হওয়ার ১৫ বছর পর ২০২১ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে আন্তঃবিভাগ চালু করা হয়। যার ফলে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড ও উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৪ লক্ষাধিক জনসাধারন চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশর্^বর্তী এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হওয়ার ফলে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রæত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।
উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ২০২৩ সালে ২ হাজার ৫৭৭ জন রোগী ইনডোর, ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৭২ জন রোগী আউটডোর, ১০ হাজার ৬৭ জন রোগী জরুরী বিভাগ থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। এসময় ইউজার ফি আদায় হয়েছে ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭২ টাকা। ২০২৪ সালে ৩ হাজার ২৬ জন রোগী ইনডোর, ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৬ জন রোগী আউটডোর, ১০ হাজার ৬৪৯ জন রোগী জরুরী বিভাগ থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। এতে ইউজার ফি আদায় হয়েছে ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৫ টাকা। যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। অর্গ্রানোগ্রাম অনুযায়ী ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মোট পদ সংখ্যা ৫৯টি। এর মধ্যে ১৭টি পদশূন্য রয়েছে। আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ১টি, মেডিক্যাল ট্যাকনোলজিস্ট ২টি, স্বাস্থ্য সহকারীর ১টি পদ শূন্য রয়েছে। কুক পদ ২টি শূন্য থাকলেও আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সুইপার ও ঝাড়ুদারের পদ ৫টি। এর মধ্যে ৩টি পদ শূন্য রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যকম শুরু হওয়ার প্রায় ১৯ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত এক্স-রে মেশিনের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। যার ফলে রোগীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এসব শূন্যপদ পূরন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জনবল পদায়ন করার জোরদাবী দাবী জানিয়েছেন উপজেলাবাসী।
কুমিল্লা সদর দক্ষিন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দীন জানান, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ ও বর্ধিত শয্যায় সেবা কার্যক্রম চালুকরণ করা হলেও ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জনবল দিয়েই স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দ্রæত জনবল পদায়ন করা হলে সেবা প্রত্যাশি নাগরিকদের আরও উন্নত সেবা প্রদান সম্ভব হবে।