বৃহস্পতিবার, ৮ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সম্পাদক পরিষদের আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বিএনপি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল, থাকবে

<span class="entry-title-primary">সম্পাদক পরিষদের আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল</span> <span class="entry-subtitle">বিএনপি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল, থাকবে</span>
Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ বিএনপি সরকারে থাকুক বা না থাকুক, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে থাকবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

            গত রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে সম্পাদক পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদকরা অংশগ্রহণ করেন।

            প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্দ্বিধায়, দৃঢ়চিত্তে, স্পষ্ট করে বলতে পারি, আমরা বরাবরই সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতে থাকব। সেটা আমরা সরকারে থাকি আর না থাকি, যেখানেই থাকি। এ ব্যাপারে আমরা আপনাদের (সাংবাদিকদের) নিশ্চিত করতে পারি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি শুধু নয়, এটা আমাদের আস্থা। আমরা যদি কখনো সরকারিভাবে সুযোগ পাই সেখানেও আমরা এটাকে প্রতিষ্ঠা করব। বিরোধী দলে থাকলে সেখানেও আমরা এটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাব।

            গণমাধ্যমের ওপর অতীতে নিপীড়ন-নির্যাতন এবং বিভিন্ন কালা-কানুনের বিরুদ্ধে আমরা ছিলাম। এ ব্যাপারে আমরা লড়াই করে চলেছি। খুবই স্পষ্ট ভাষায়, দৃঢ়তার সঙ্গে আমরা বলতে চাই, আমরা কখনোই অন্যায়ভাবে অন্যের মতকে চাপিয়ে দেয়াকে সমর্থন করব না।’

            তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে এক রকম প্রচারণা চালানো হয়, আমরা নাকি সংস্কারের বিরুদ্ধে। প্রায় বলা হয় আমরা সংস্কার না, নির্বাচন চাই। অথচ সংস্কার বিষয়টা শুরু হয়েছে আমাদের দ্বারা। আমরাই একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে দেশকে বহুদলীয় শাসনব্যবস্থায় নিয়ে গেছি। আমরাই সংসদীয় ব্যবস্থায় নিয়ে গেছি, অনেক আপত্তি সত্তে¡ও আমরা তত্ত¡াবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে নিয়ে এসেছি। এগুলো বাস্তবতা।

এই বাস্তবতা থেকে অযথাই আমাদের আবার প্রশ্নবিদ্ধ করে অন্য পথ দেখানোর চেষ্টা করার পেছনে কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও  থাকতে পারে। চারটি সংবাদপত্র ছাড়া সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।’

            রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় এলেন, তিনি নিষিদ্ধ সংবাদপত্রগুলো চালু করেছেন, স্বাধীনতা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যম সেবার কাজে নিয়োজিত। আমরা দেশপ্রেমিক, সমাজকে উন্নত করতে চাই। আমরা বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশে বিশ্বাস করি। আমাদের সব কাজ সমাজকে, জনগণকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।’

            তিনি বলেন, ‘আমি উদ্বেগ প্রকাশ করছি, ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা অথবা ভায়োলেন্ট কোনো অপরাধের মামলা চলছে। এটা কিভাবে সম্ভব? ডিজিটাল আইনেও ২০০ জনের মতো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এখন ২৬৬ জন সাংবাদিক হত্যা বা বড় অপরাধের মামলার আসামি। এটা আমাদের অসম্মানের কারণ। এটার অর্থ এই নয় যে কেউ কোনো দোষ করেনি। দোষ করে থাকলে সঠিকভাবে মামলা করে তাঁকে শাস্তি দেন এবং সেই সাংবাদিকের পক্ষে আমরা দাঁড়াব না, যদি তাঁর সত্যিকার অর্থে সমাজের বিরুদ্ধে বা জুলাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান থাকে। কিন্তু আজ ছয়-সাত মাস হয়ে গেছে তাঁরা এই মামলায় জড়িয়েছেন। তদন্তের ব্যাপারে এক কদমও এগোয়নি। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই তাঁদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। কিন্তু তাঁরা তো সম্মানহানির মধ্যে পড়েছেন। তাঁরা ভয়ের মধ্যে থাকেন। তাঁরা মব আক্রমণের ভয়ে থাকেন।’

            জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেন, ‘ফিলিস্তিনে ১৮ মাসে দুই শতাধিক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪২ জন কর্তব্যরত অবস্থায় মারা গেছেন। বাংলাদেশেও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের রক্ত ঝরেছে। দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধেও সাংবাদিকরা প্রাণ দিয়েছেন। সুতরাং গণমানুষের মুক্তির জন্য আমরা আছি। স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়। আমরা যেন দায়িত্বশীল হই, আমরা যেন গণআস্থা ফিরিয়ে আনতে পারি। সেই চেষ্টা আমাদের করতে হবে। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদের কবলে পড়ে অনেক গণমাধ্যম বন্ধ হয়েছে, অনেকে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। এগুলো আমরা ভবিষ্যতে চাইব না। নতুন রাজনৈতিক দল যারা জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে, আমরা আশা করব তারা মুক্ত গণমাধ্যম নিশ্চিত করবে।’

            নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘গত ৫৪ বছরে বর্তমান সরকারের মতো গণমাধ্যমের প্রতি উদার দৃষ্টিভঙ্গি কোনো সরকারের ছিল না। ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় যাবে তাদের উচিত, এই নীতি কিভাবে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে তা পরিষ্কারভাবে বলা। এখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনলাইনে গ্রæপ বৈঠক করে তাঁর কর্মীদের নির্দেশনা দেন, সরকার তা বন্ধ করছে না। অথচ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাগুলো এখনো প্রত্যাহার হয়নি। ড. ইউনূস বা আগের দায়িত্বশীলরাও এগুলো করেননি। অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা প্রয়োজন, তবে এর সীমা থাকা উচিত। কারণ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ।’

            গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে সংগ্রাম, অঙ্গীকার আছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ লড়াইটা করব। রাষ্ট্রের এমন কোনো আইন থাকা চলবে না, যাতে সরকার গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরতে পারে।’

            জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক ও সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণমাধ্যম বিভিন্ন সময় সরকারি চাপের মধ্যে পড়েছে। তবে আমি মনে করি, গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের পরিমাণ অনেকটাই কমে গেছে। বিশেষত আমার সময়েও সেটা অনেক কম ছিল। আমরা কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করার পক্ষে নেই। কিন্তু তাদের ভেতরকার ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলেছি। গণমাধ্যমের কথা এলেই অনেক আলোচনা-সমালোচনার বিষয় চলে আসে। যেটা বিগত সরকারের সময়ও ছিল, আমি উপদেষ্টা থাকাকালীনও ছিল। ফ্যাসিস্ট সরকার গত ১৬ বছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর যে দলীয়করণ নীতি চালিয়েছে, গণমাধ্যমও তার বাইরে ছিল না। সুতরাং গণমাধ্যমকে এই ফ্যাসিজমের ভেতর থেকে বের করে আনতে আমাদের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রয়োজন। কারণ বিগত সময়ে মিডিয়া ও ফ্যাসিজমের যে সম্পর্ক ছিল, সেই আধিপত্য থেকে যদি মিডিয়া বের না হয়, তাহলে জুলাই-পরবর্তী যে মুক্ত গণমাধ্যমের চিন্তা আমরা করছি, তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।’

            মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘যে দেশে প্রশ্ন করার জন্য সাংবাদিকের চাকরি যায়, সে দেশে আমরা মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালন করছি। এর দায় সরকারকে দেব, নাকি কাকে দেব জানি না। গণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়। আমাদের কথা বলতে দিতে হবে, লিখতে দিতে হবে, প্রশ্ন করতে দিতে হবে। তাহলেই গণমাধ্যম মুক্তির স্বাদ পাবে।’

            সূচনা বক্তব্যে নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, ‘সারা বিশ্বে যখন ঘটা করে গণমাধ্যম মুক্ত দিবস পালন করতে হয়, তখন বুঝতে হবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন খর্ব হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে বিগত সময়ের চেয়ে এখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে পার্থক্য সূচিত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে সূচক, বাংলাদেশ এখনো সেই সূচকে অনেক নিচে অবস্থান করছে। গণমাধ্যমকে বাধাগ্রস্ত করার প্রধান শক্তি রাজনৈতিক দলগুলো।’

            অনুষ্ঠানে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকবৃন্দ।

Share This

COMMENTS