মনোহরগঞ্জে খাদ্য গুদাম না থাকায় সরকারি নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারছেনা কৃষকরা


আবদুল গাফফার সুমন\ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে বোরো ধানের বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। উপজেলায় খাদ্যগুদাম না থাকায় পার্শ্ববর্তী উপজেলায় গিয়ে ধান বিক্রয় করতে নানা বিড়ম্বনায় পড়ছেন এ এলাকার কৃষকরা। সরকারিভাবে মনপ্রতি ১,৪৪০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির ধান। এতে ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এখানকার কৃষকরা। স্বল্পমূল্যে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতেই যাচ্ছে কৃষকের এ ধান।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ এলাকায় একমাত্র ফসল বোরোর উপর নির্ভরশীল তারা। সারা বছরের খোরাকির ব্যবস্থা করে মজুরি খরচ ও আর্থিক সংকটে পড়ে ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি করে ফেলেন অধিকাংশ কৃষক। বীজ বপন থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত সবকিছু উচ্চ মূল্যে পরিশোধে এ এলাকার কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিয়ে হতাশ। কৃষকরা জানান, স্থানীয় হাটে নেই ন্যায্যমূল্যের প্রভাব, সেখানে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে মনপ্রতি প্রায় ৫০০ টাকা কমমূল্যে বিক্রি করতে হয় ধান। একমন ধান বিক্রি করে একজন শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করতে হিমশিম খাওয়ার কথা জানান তারা।
উপজেলার লৎসর গ্রামের কৃষক ইউনুস আলীর সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ডিজেল, বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি বেড়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি। সবমিলিয়ে বেড়েছে বোরো ধান উৎপাদনের খরচ। এবার ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু হাটে পাওয়া যাচ্ছেনা ধানের ন্যায্যমূল্য। সেখানে (হাটে) সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি হয় না। মধ্যস্বত্তভোগীদের নিকট স্বল্পমূল্যে ধান ছেড়ে দিতে হয় কৃষককে। তাছাড়া এ উপজেলায় খাদ্যগুদাম না থাকায় ১২ কি.মি. দুরে লাকসাম উপজেলায় খাদ্যগুদামে গিয়ে ধান বিক্রয় করতে যাতায়াত, বাড়তি খরচসহ নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ফলে তৃণমূলের অধিকাংশ কৃষক এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সরোয়ার তুষার জানান, এবার এ উপজেলায় ৯ হাজার ৯শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। আবাদকৃত জমির ৯৫ শতাংশই হাইব্রিড জাতের ধান। এ উপজেলায় প্রায় ৭২ হাজার ৩শ’ ৯০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হওয়ার কথা। এবার সরকারিভাবে প্রতি কেজি ধানের মূল্য ৩৬ টাকা ও প্রতিমণ ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪শ’ ৪০ টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় একটু বেশি।
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ বলেন, এ উপজেলায় সরকারিভাবে ৮শ’ ১১ টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিক্রয়কেন্দ্র (খাদ্যগুদাম) না থাকায় এখানকার কৃষকরা পার্শ্ববর্তী লাকসাম উপজেলায় গিয়ে ধান বিক্রয় করতে হয়। ফলে অধিকাংশ সময় ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। দূরত্ব, খরচ ও যাতায়াত বিবেচনায় কৃষকরা মনোহরগঞ্জ থেকে লাকসাম উপজেলায় এসে ধান বিক্রয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, বরাদ্দের অতিরিক্ত চাহিদা থাকলেও সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।