যানজটমুক্ত ও চলাচলযোগ্য ক্লিন লাকসাম চাই


\এম এস দোহা\
আমার বিরুদ্ধেও নিরপেক্ষতার অভিযোগ। তাও আবার সুদূর ট্রাম্পের দেশ মার্কিন মুল্লুক থেকে! এই অভিযোগ সাপ্তাহিক লাকসামবার্তা সম্পাদক বন্ধুবর শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া’র।
আমি লাকসাম থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সাপ্তাহিক পত্রিকায় বিশেষ সংখ্যার জন্য মাঝে মাঝে লিখি। কিন্তু লাকসামবার্তা’র অপরাধটা কী? তাছাড়া লাকসামবার্তা’র কার্যালয়ে দীর্ঘদিন কেন যাওয়া হয় না? এসবের যৌক্তিক ব্যাখ্যা দাবি করেন তিনি। যুক্তি-তর্কের শেষ নেই। উনাকে বোঝানোটা কষ্টকর। যাকে বলে মাথাভাঙ্গা ব্যর্থ প্রচেষ্টা!
অভিযোগটা অবশ্য মোটেও অমূলক নয়! কারণ ‘লাকসামবার্তা’র সাথে কেন জানি আমার দূরত্ব ও যোগাযোগহীনতা চলমান। অবশ্য এর যথাযথ কারণও বিদ্যমান। পত্রিকাটির প্রাণপুরুষ শহীদ ভাই জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে স্বপরিবারে আমেরিকায়ও আরেক বসতি স্থাপন করেছেন। প্রতি ৪/৬ মাসে দেশেও আসা-যাওয়ায় থাকেন। কিন্তু টের পাই না! আবার টের পেলেও সিডিউল মিলে না। এর সাথে আরেকটি বিশেষ কারন লক্ষনীয়। তাহলো দৌলতগঞ্জ ব্যাংক রোডে যানজট। যেখানে শহীদুল্লাহ ভুঁইয়া’র লাকসামবার্তা’র ঐতিহাসিক ও স্মৃতিবিজড়িত আস্তানা।
আসলে অপ্রিয় হলেও সত্য যে, লাকসাম বাজারে এখন চলাফেরা ও যাতায়াত করাটা বেশ কষ্টসাধ্যই। শহর জুড়ে অটো রিক্সা স্ট্যান্ড। ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। আর ব্যাংক রোডের কথা না বললেই নয়! এ যেন ট্রাক, পিকআপ ও ভ্যানগাড়ির স্ট্যান্ড। সারাদিন গুরুত্বপুর্ন এই রোডটি দখল করে চলতে থাকে হরেক রকমের মালামাল লোড আনলোড। অথচ এই কাজটি রাতে হওয়ারই কথা? তাই চলাচলের ক্ষেত্রে অনেকেই এ রোডটি এখন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে থাকেন। যা আমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। শুধু ব্যাংক রোড নয়; আমি লাকসাম বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো সময় বাঁচাতে এড়িয়ে চলি। ঢাকা থেকে লাকসাম বাইপাস নেমে সোজা বাতাখালী। অধিকাংশ সময় বাতাখালী হাফিজিয়া মাদ্রাসা এতিমখানা ও বাড়িতে অতিবাহিত। তারপর কাজকর্ম সেরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রাজঘাট হয়ে সোজা চাঁদপুর রেলগেট। তাই লাকসাম বাজার খুব একা টাচ করা হয় না। যার ধারাবহিকতায় ব্যাংক রোড ও লাকসামবার্তা’র কার্যালয়ও।
উল্লেখ্য, লাকসাম বাজারের অধিকাংশ স্থান এখন অটো রিক্সার দৌরত্ব্য। তারা নিয়ম-নীতি মানতে নারাজ। অনেকের মাঝে ন¤্রতা ভদ্রতা লেস মাত্র নেই। তাদের কিছু বলাটাও বিপদজ্জনক! পৌরসভার পক্ষ থেকে অটোরিক্সা নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও নীতিমালা প্রণীত না হওয়ায় দিন দিন এ পরিস্থিতি অবনতির চরম পর্যায়ে। লাকসাম বাজার বনিক সমিতির এ ব্যাপারে কোনো মাথা ব্যথা আছে বলে মনেই হয় না। কেন জানি মনে হয়- বণিক সমিতির কর্মকান্ড অনেকটাই সীমাবদ্ধ থাকে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে প্রটোকল ও খুশি করার ক্ষেত্রেই। আর মাঝে মাঝে বৃষ্টির দিন খিচুড়ি ও সন্ধ্যায় ঝাল মুড়ি খাওয়ার মধ্যেই সমিতি’র কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ রাখা। এর সাথে কতেক কিসিমের দরবার কারবারতো আছেই। তাই বাজারের পরিচ্ছন্নতা ও যানজট নিরসনের বিষয়ে নজর রাখায় তাদের সময় কোথায়?
অথচ, বণিক সমিতির শাখা ইউনিটগুলো সজাগ থাকলে ক্লিন ও যানজটমুক্ত লাকসাম প্রতিষ্ঠা খুব কঠিন ব্যাপার না! এতো হতাশার মাঝে গত কোরবানির ঈদের পূর্বে জামাত সমর্থিত বণিক সমিতি লাকসাম বাজারে যানজট নিরসনের জন্য গৃহীত প্রশংসনীয় উদ্যোগ একটা আশার সঞ্চার করে। তারা যানজটের ভোগান্তি লাঘবে কয়েকদিন যথেষ্ট কষ্ট করে। ফলে ঈদের আগে লাকসাম বাজার ছিলো চলাফেরার ক্ষেত্রে মোটামুটিভাবে যানজটমুক্ত। যা একটি দৃষ্টান্ত হয়েই থেকেছে। আমার মনে হয় এই কর্মসূচি চলমান রাখাটা বণিক সমিতির নৈতিক কর্তব্য।
উল্লেখ্য, লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক কাউছার হামিদ ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে যানজট নিরসন ও ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রায়ই অভিযান চালিয়ে থাকছেন। উপরন্ত, বাজারের ড্রেনেজ পরিষ্কার ও যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলতে ব্যবসায়ীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকাও রেখে আসছেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি প্রায়ই লাকসাম বাজারে শৃংখলা বজায় রাখতে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। সুষ্ঠু, পরিচ্ছন্ন ও যানজটমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে তিনি অত্রাঞ্চলে জনগণের হৃদয়ের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। জনতার ইউএনও (নির্বাহী অফিসার) খ্যাত কায়ছার হামিদ-এর বলিষ্ঠ তৎপরতায় আগের তুলনায় বর্তমানে লাকসাম বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই ইতিবাচক ফলাফলই দৃশ্যমান!
অথচ, বনিক সমিতির উদ্যোগে এ ব্যাপারে আশানুরূপ কর্মতৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ দোকানের চারপাশ ক্লিনিং ও নির্দিষ্টস্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে সংশ্লিষ্ট সকলকে উৎসাহিত করা হলে ‘লাকসাম’কে একটি ক্লিন শহর হিসেবে উপহার দেয়াটা আসলে বিরাট কঠিন ব্যাপার নয়!
আবার এ প্রসঙ্গে বাইপাসের কথা না বলেই নয়। এখানেও একই দশা। কুমিল্লা-নোয়াখালী মহাসড়কের ৫৯ কিলোমিটার ফোরলেন রাস্তার মধ্যে বৃহত্তর লাকসাম অংশের ৮ কিলোমিটার এখনো আদিকালের সেই দু’লেন। নোয়াখালী অংশে এই সড়কটির চারলেনের কাজ সম্পন্ন হলেও লাকসাম ও বাগমারায় এসে এটি থমকে যায়।
অথচ, সড়ক ও জলপথ বিভাগ চেয়েছে ক্ষতিপুরণ দিয়ে চলমান রাস্তা প্রশস্ত করতে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের দাবী বাইপাসের আরেকটি বাইপাস। এই ঠেলাঠেলিতে প্রকল্প থেকে ৮ কিলিমিটার ফোরলেন থেকে ছিটকে পড়ে। ফলে লাকসাম অঞ্চলের মানুষের যেই কপাল সেই মাথা’ই। যার দায়ভার স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসাবে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ও সাবেক এলজিডিআরডি মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম এড়াতে পারেন না!
ওদিকে, আওয়ীলীগের প্রয়াত নেতা এডভোকেট বাসেত মজুমদার এক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছেন। তিনি হরিশ্চর এলাকার রাস্তাটির কাজে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে হাইকোর্টে মামলা ঠুকে দিয়েছেন। যা এখনো চলমান। এসব প্রতিবন্ধকতা ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বাগমারা ও লাকসাম বাইপাসের যানজট এখন এই মহাসড়কটির গলার কাঁটা। তদুপরি, সহসায় এই ৮ কিলোমিটার ফোর লেনে উন্নীত হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কারণ বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় আমারও দৌড়াদৌড়ি করার সুযোগ হয়েছিল। যা থেকে বুঝতে পেরেছি ডাকসাইটের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া এ সমস্যা সমাধান হবে না। এহেন প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে বিষয়টি শক্ত হাতে হেন্ডেলের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের ম্যানেজ ও মন্ত্রনালায়ের যোগাযোগ করার জন্য চৌকশ সমন্বয়কের বিকল্প নেই বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
তদুপরি, আমি মনে করি এক্ষেত্রে লাকসামের প্রথম সারির ও প্রাচীন সংবাদপত্র হিসেবে ‘লাকসামবার্তা’ সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারেন। যদি ফোরলেন নিয়ে মাথা ঘামানো সম্ভব না হয়, তবে যানজটমুক্ত ও চলাচলযোগ্য ক্লিন লাকসাম বাজার নিয়ে সরব থাকাটা কঠিন কিছু নয়।
পত্রিকাটির নিজস্ব কার্যালয় পুরাতন দৈনিক বাজার ও ব্যাংক রোডে। এখানকার যানজটের চিত্র তাদের নাকের ডগায়। কিন্তু কেন জানি তাদের চোখ বন্ধ করে থাকার ভাবসাব মনে হচ্ছে। পত্রিকাটিতে এ সম্পর্কিত সংবাদ খুব একটা চোখে পড়েনা। যদিও দু’একদিন করে থাকেন। কিন্তু পরবর্তীতে আর ফলোআপ নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মোবাইল কোটের সচিত্র সংবাদ লিড অথবা ব্যানার হেডিং প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তাও চোখে পড়েনা।
পত্রিকাটির পক্ষ ব্যাংক রোডের যানজট নিরসনে প্রতিদিন পৌর প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও বনিক সমিতির কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের সমুহ সুযোগ আছে। কিন্তু এ কাজটিকে দৃষ্টান্ত বা মিশন হিসেবে যিনি গ্রহণ করার কথা, তিনিতো জীবিকার তাগিদে এখন আমেরিকায়। আমার বিশ্বাস শহীদ ভাই দেশে থাকলে পুরো লাকসাম বাজার না পারলেও ব্যাংক রোডকে যানজটমুক্ত রাখতে আদাজল খেয়ে মাঠে ও লেখালেখিতে অবশ্যই সক্রিয় থাকতেন।
আবার এটাও ঠিক যে, এখন লাকসামের মত জায়গায় নিরপেক্ষভাবে বা বিপ্লবী হয়ে লেখালেখি করাটাও ঝুকিপূর্ণ ও বিপজ্জনকই বটে! কারণ সমাজে এখন দুষ্ট লোকদের সংখ্যাই বেশী। আবার তারা সুসংগঠিতও।
নিজেদের সুবিদার জন্য কানকথা জায়গামতো সাপ্লাই করতে তারা দারুণ পটু। ঘটনাকে নিজেদের সুবিধামতো ভিন্ন খাতে চাপিয়ে দেয়ার দুষ্ট লোকদের ভক্ত সমর্থকের অভাব নেই।
তবে আমিও লাকসামের অনেক বিষয় পারতো পক্ষে এড়িয়ে চলি। কারণ ভালো কাজের জন্য দোয়া পাওয়া যায়, বাহবা পাওয়া যায়। কিন্তু প্রকাশ্যে সমর্থন পাওয়া যায়না। বিপদের সময় পিছনে কেউ পাশে থাকেনা।
অবশ্যই রাজধানীর ঢাকায় এক্ষেত্রে লেখালেখি করাটা অনেকটা নিরাপদ। জাতীয় বিষয় নিয়ে লেখালেখি করতে রিক্স নেই। কারণ সরকার ও জাতীয় রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকদের নিয়ে আলোচনা সমালোচনা তো সাংবাদিকতার স্বাভাবিক কর্মযজ্ঞ। যদিও গণতন্ত্রের মুক্তবাসে এখানো ‘সেলফ সেন্সরশীপ’ করতে হয়।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।