রবিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ঘোষিত নীতিতে অনেকেই ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারানোর সম্ভাবনা!

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ঘোষিত নীতিতে অনেকেই  ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারানোর সম্ভাবনা!
২৮ Views

            বিশেষ সংবাদদাতা\ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস নাগরিকত্ব বাতিল বা ‘ডিন্যাচারালাইজেশন’ প্রক্রিয়াকে তাদের অন্যতম শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে। গত ১১ই জুন জারি করা একটি অভ্যন্তরীণ স্মারকে সিভিল ডিভিশনকে প্রমাণ ও আইনের আওতায় থাকা সব কেসে নাগরিকত্ব বাতিলের পদক্ষেপ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ও সম্পূর্ণতার সঙ্গে গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নীতির আওতায় এখন শুধু নাগরিকত্ব অর্জনের সময় করা জালিয়াতি নয় বরং নাগরিক হওয়ার পর সংঘটিত অপরাধও নাগরিকত্ব হারানোর কারণ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নাগরিকত্ব বাতিলের নতুন নীতির ঘোষণা সারা যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিচার বিভাগের সিভিল ডিভিশনের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রেট শুমেট স্বাক্ষরিত এই নির্দেশনায় নাগরিকত্ব বাতিলকে সিভিল ডিভিশনের শীর্ষ ১০টি অগ্রাধিকারভুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিচার বিভাগের সিভিল ডিভিশনের সেকশন ৮ ইউএসসি ১৪৫১-এর আওতায় ডিন্যাচারালাইজেশনের জন্য উক্ত যেই ১০টি অগ্রাধিকারের তালিকা প্রকাশ করেছে- তা হলো: (১) প্রথমত, যেসব ব্যক্তি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি যেমন সন্ত্রাস, গুপ্তচরবৃত্তি বা স্পর্শকাতর প্রযুক্তি অবৈধভাবে রফতানির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। (২) যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন: নির্যাতন, নির্বিচারে হত্যা বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্তরা। (৩) আন্তর্জাতিক অপরাধচক্র ও গ্যাং সংশ্লিষ্টতা: মাদক চোরাচালান বা আন্তর্জাতিক গ্যাং সদস্যরা। (৪) গোপন ফৌজদারি অপরাধ: যারা নাগরিকত্বের সময় অপরাধ লুকিয়ে ছিলেন। (৫) মানব পাচার, যৌন অপরাধ ও সহিংসতা: যারা এসব অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। (৬) সরকারি আর্থিক প্রতারণা: যেমন পিপিপি লোন জালিয়াতি, মেডিকেয়ার/মেডিকেইড প্রতারণা। (৭) ব্যক্তিগত প্রতারণা: প্রাইভেট ফান্ড, ব্যক্তি বা কোম্পানির বিরুদ্ধে জালিয়াতি। (৮) সরকারি দুর্নীতির মাধ্যমে নাগরিকত্ব অর্জন। অন্য কোনো ফৌজদারি মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা যা ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস প্রাধান্য দেয় বা ডিপার্টমেন্টের বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো কেস। (৯) এই ক্যাটাগরিতে রয়েছে, ইউএস অ্যাটর্নির অফিস থেকে রেফার করা মামলাগুলো; এমনকি যদি সেগুলো অন্যান্য অগ্রাধিকার তালিকার সঙ্গে সরাসরি মেলে না এবং (১০) যে কোনো অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ কেস, যা সিভিল ডিভিশনের বিবেচনায় তদন্তের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

এ নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ক্যাটাগরিগুলো কেবল দিকনির্দেশনা হিসেবে ব্যবহৃত হবে, কিন্তু এগুলো সিভিল ডিভিশনকে অন্য যে কোনো কেস অনুসরণ করতে সীমাবদ্ধ করবে না। এর মানে, বিভাগ চাইলে যে কোনো কেসকেই ডিন্যাচারালাইজেশনের আওতায় আনতে পারবে, এমনকি যদি তা তালিকায় না থাকে। কেস বরাদ্দকরণে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা, বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা ও বিভাগীয় প্রয়োজন বিবেচনায় নেয়া হবে। এ নতুন নির্দেশনার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২৪.৫ মিলিয়ন ন্যাচারালাইজ নাগরিকের (যারা অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এসে নাগরিকত্ব লাভ করেছেন) মধ্যে অনেকেই নিজেদের নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এই নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ন্যাচারালাইজপ্রাপ্ত (নাগরিকত্ব) নাগরিকদেরও স্থায়ী নিশ্চয়তা থাকবে না। সামান্য অপরাধ বা অতীতের ভুল তথ্যও তাদের নাগরিকত্ব হারানোর কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি হাজার হাজার অভিবাসী নাগরিকের জন্য ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি করবে, যারা দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে পরিবার ও পেশা গড়ে তুলেছেন। তবে এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন বলছেন, এটি দেশের সুরক্ষা এবং আইনসম্মত অভিবাসনের ন্যায্যতা বজায় রাখার জন্যই অপরিহার্য।

সেকশন ৮ ইউএসসি ১৪৫১ (এ)-এর আওতায়, কেউ যদি অবৈধভাবে বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নাগরিকত্ব অর্জন করে, তাহলে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস তার বিরুদ্ধে সিভিল মামলা করে নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারবে। এই নীতির মাধ্যমে সরকার যুদ্ধাপরাধ, গোপন হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারবে। একই সঙ্গে, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যুক্ত কিংবা অপরাধমূলক চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে দেয়া সহজ হবে। ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের সিভিল ডিভিশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আইনসম্মত এবং যথেষ্ট প্রমাণভিত্তিক প্রতিটি মামলাতেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ডিন্যাচারালাইজেশন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হবে। ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস বলেছে, এই উদ্যোগ শুধু দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই নয়, বরং নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ার সততা ও ন্যায্যতা রক্ষা করার জন্যও অপরিহার্য।

মূলতঃ নাগরিকত্ব বাতিল সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানিক কাঠামোর মূলভিত্তি গড়ে উঠেছে সুপ্রিম কোর্টের দুটি ঐতিহাসিক মামলার ওপর ভিত্তি করে। ১৯৬৭ সালের অ্যাফ্রয়িম বনাম রাস্ক মামলায় আদালত রায় দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব একটি সাংবিধানিক অধিকার, যা কংগ্রেস জোরপূর্বক কেড়ে নিতে পারে না, যদি না কেউ স্বেচ্ছায় তা ত্যাগ করেন অথবা নাগরিকত্ব পাওয়ার সময় জালিয়াতি করে থাকেন। ২০১৭ সালের মাসলেনজাক বনাম যুক্তরাষ্ট্র মামলায় সুপ্রিম কোর্ট আরো বলেছে, নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ায় কোনো ভুল তথ্য দিলে তা বাতিলের জন্য যথেষ্ট নয়; বরং প্রমাণ করতে হবে যে ওই মিথ্যা তথ্য নাগরিকত্বের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।

যদিও এসব আইনি সুরক্ষা রয়েছে, তবে সিভিল ডিন্যাচারালাইজেশনের ক্ষেত্রে কিছু গুরুতর সীমাবদ্ধতা আছে। এই প্রক্রিয়ায় কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা (স্ট্যাচু অব লিমিটেশনস) নেই, অভিযুক্তদের জন্য সরকারি আইনজীবীর কোনো অধিকার নেই, এবং মামলায় অপরাধমূলক কেসের তুলনায় প্রমাণের মানদন্ড অনেক কম। যদি আদালত নাগরিকত্ব বাতিলের রায় দেয়, তবে অভিযুক্ত তার পূর্ববর্তী অভিবাসন অবস্থায় ফিরে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে নির্বাসনের প্রক্রিয়াও শুরু হতে পারে।

নাগরিকত্ব বাতিলের ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাগরিকত্ব বাতিলের ঘটনা অনেক বেশি দেখা যায়। ১৯০৭ থেকে ১৯৬৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ২২ হাজারের বেশি নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিলো। তবে এরপর এটি অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে এবং কেবল নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৯৮১ সালের মাসলেনজাক মামলায় এক নাৎসি ক্যাম্প গার্ডের বিরুদ্ধে নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ দিয়ে আদালত এই নীতির পক্ষে রায় দেয়। ১৯৭৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের অফিস অব ইনভেস্টিগেশনস মাত্র ১৩৭টি নাৎসি সংশ্লিষ্ট ডিন্যাচারালাইজেশন মামলা পরিচালনা করে।

অতপর, আধুনিক যুগে নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়টি আবার মাথাচাড়া দেয় ওবামা প্রশাসনের সময় ২০১০ সালে, যখন অপারেশন জানুস চালু হয়। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির একটি তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে ৮৫৮ জন ব্যক্তি ভিন্ন পরিচয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসে নাগরিকত্ব পেয়েছেন, যদিও তাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই বহিষ্কারের আদেশ ছিল। ৩ লাখ ১৫ হাজারের বেশি ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেকর্ড ডিজিটাল না হওয়ায় ব্যাপক গাফিলতির বিষয়টি সামনে আসে এবং ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা শুরু করে।

পরবর্তী সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনে ডিন্যাচারালাইজেশন প্রক্রিয়াটি আরো আক্রমণাত্মকভাবে পরিচালিত হয়। ২০২০ সালে তারা সিভিল ডিভিশনের অধীনে ডিন্যাচারালাইজেশন সেকশন নামে একটি স্বতন্ত্র ইউনিট গঠন করে। ২০১৬ সালে যেখানে বছরে ১৫টি মামলা হয়েছিল, সেখানে ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০টিতে এবং ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য রেফারেল ৬০০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

তারপর, বাইডেন প্রশাসন শুরুতে একটি ৬০ দিনের পর্যালোচনা চালালেও পরে ট্রাম্পের তৈরি কাঠামো রেখেই ইউনিটটির নাম পাল্টে ‘এনফোর্সমেন্ট সেকশন’ রাখে এবং এর প্রসারিত ক্ষমতা বজায় রাখে।

গত ১১ই জুনের নতুন নির্দেশনা নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষেত্র আরো প্রসারিত করেছে। আগে যেখানে মূলত যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হতো, এখন নাগরিকত্ব পাওয়ার পর যারা অপরাধ করেছেন বা যাদের আচরণ পরবর্তী সময়ে সন্দেহজনক প্রমাণিত হয়েছে, তারাও লক্ষ্যবস্তু হতে পারেন। নির্দেশনায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এমএস-১৩ ও ট্রেন দে আরাগুয়া নামক গ্যাংগুলোর সদস্যদের, যাদের অনেকেই এল সালভাদর ও ভেনেজুয়েলা থেকে আগত। পাশাপাশি মেডিকেয়ার প্রতারণা, কোভিড ত্রাণ ঋণ দুর্নীতি ও অন্যান্য হোয়াইট-কলার অপরাধের কথাও বলা হয়েছে। ‘জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘন’ এবং এমন যে কোনো ঘটনা যা প্রসিকিউটররা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মনে করবেন তা-ও এই নতুন নীতির আওতায় পড়বে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২৫ মিলিয়ন ন্যাচারালাইজেশনপ্রাপ্ত নাগরিক রয়েছেন। ২০২৪ সালে নতুনভাবে নাগরিকত্ব পেয়েছেন আরো ৮ লাখ ১৮ হাজার মানুষ। এই নীতির আওতায় যদি মাত্র ১ শতাংশের নাগরিকত্ব ফাইল পর্যালোচনা করা হয়, তাহলেও প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার কেস রিভিউয়ের মুখে পড়তে পারে!

এতো বিশাল পরিমাণ রিভিউয়ের বাস্তবতাটা নির্ভর করবে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের সম্পদ, রাজনৈতিক চাপ ও বিচারিক বাধার ওপর। নাগরিকত্ব বাতিলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই হতে পারে দীর্ঘ ও জটিল। কারণ এ ধরনের মামলায় অভিযুক্তদের নিযুক্ত আইনজীবী পাওয়ার অধিকার নেই এবং মামলাগুলো সাধারণ সিভিল কোর্টে, কম প্রমাণ-মানদন্ডে নিষ্পত্তি হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নির্দেশনা যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্বকে একটি অধিকারের বদলে যেন একটি শর্তাধীন সুবিধায় পরিণত করছে। সামান্য ভুল, অতীতের অঘটন বা প্রশাসনের চোখে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বিবেচিত কোনো আচরণ নাগরিকত্ব হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে এই নীতির অপব্যবহার রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের হাতিয়ার হয়ে উঠবে কি না, সেটি নিয়েও আশঙ্কা আরও তীব্র হচ্ছে।

আসলে আইনগতভাবে, কংগ্রেস যদি ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের এই নির্দেশনাটি আটকে দিতে বা সীমিত করতে চায়, তবে তাদের একটি বিল পাস করাতে হবে। ২০২০ সালে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটের কংগ্রেসম্যান সালুদ কারবাজাল ডিফেন্ড নিউ আমেরিকানস অ্যাক্ট নামে একটি বিল উত্থাপন করেছিলেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল ডিন্যাচারালাইজেশন ইউনিটের ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধ করা। তবে বিলটি কমিটির স্তরেই আটকে যায় এবং আর অগ্রগতি হয়নি। বর্তমানে রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে এমন কোনো উদ্যোগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। ডেমোক্র্যাটরা চাইলে জরুরি কোনো ব্যয়সংক্রান্ত বিলে সংশোধনীর মাধ্যমে নিরাপত্তামূলক শর্ত জুড়ে দিতে পারে, কিন্তু আলাদা কোনো বিল আকারে পদক্ষেপ নেয়ার বাস্তব সুযোগ তাদের হাতে নেই।

যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব বাতিলের নতুন নীতি অভিবাসীদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নীতি, যা নাগরিকত্ব অর্জনের সময় জালিয়াতি এবং নাগরিকত্ব লাভের পর সংঘটিত অপরাধকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, তা দেশের নিরাপত্তা এবং আইনের শাসন রক্ষার উদ্দেশ্যে প্রণীত হলেও অভিবাসী সম্প্রদায়ের মাধ্যমে বড় ধরনের ঝুঁকি এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই নীতি রাজনৈতিক বিরোধীদের লক্ষ করার জন্যও ব্যবহার হতে পারে এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার, বিশেষ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

অবশ্য, যদিও এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিরোধের জন্য কংগ্রেসে প্রস্তাবিত বিলগুলো আটকে গেছে এবং বর্তমান কংগ্রেসে এর বিরোধিতা করা কঠিন, তবুও এই নতুন নীতি আইনের প্রক্রিয়াকে আরও জটিল এবং সংকটজনক করে তুলেছে। নাগরিকত্ব একটি সাংবিধানিক অধিকার, কিন্তু এই নতুন দৃষ্টিকোণ নাগরিকত্বকে শর্তাধীন সুবিধা হিসেবে উপস্থাপন করছে, যেখানে সামান্য ভুল বা সন্দেহের কারণে নাগরিকত্ব বাতিলের ঝুঁকি রয়েছে। ভবিষ্যতে এই নীতির বাস্তবায়ন এবং এর প্রয়োগের দিকে নজর রাখা জরুরি, কারণ এটি শুধু অভিবাসীদের জন্যই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্যও এক নতুন আইনগত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। Ref: desh

Share This