চৌদ্দগ্রামে হোটেল কর্মচারীকে হত্যার দায়ে একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড


নিজস্ব প্রতিনিধি\ ২০১৮ সালের ২৮শে এপ্রিল দিবাগত-রাতে হোটেল কর্মচারী বদিউল আলমকে (৩০) পথরোধ করে হত্যার দায়ে মোঃ জাফর নামের এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত। গত বৃহস্পতিবার (৬ই জুন) কুমিল্লার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক মোছা. ফরিদা ইয়াসমিন এ রায় দেন। দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ জাফর চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোষতল গ্রামের মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মোঃ জাফর (২৮)।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৮শে এপ্রিল দিবাগত-রাত পৌনে ১০টায় বদিউল আলমকে (৩০) কে বা কারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ডিমাতলী গ্রামের জামে মসজিদের সামনে ফেলে রাখেন। বাদিনী সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। স্বজনরা উদ্ধার করে জিজ্ঞাসা করলে সে শুধু ঘোষতলের জাফর বলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশংকাজনক দেখে কুমেক হসপিটালে রেফার্ড করলে অ্যাম্বুলেন্সযোগে নেয়ার পথে মারা যায়।
এ ব্যাপারে ২০১৮ সালের ২৯শে এপ্রিল নিহতের মা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার উত্তর কেচকিমুড়ার মৃত ইসলাম মিয়ার মেয়ে হালিমা বেগম (৭০) বাদী হয়ে একই উপজেলার ঘোষতল গ্রামের জাফরকে একমাত্র আসামি করে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলঅর তদন্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে একই উপজেলার ঘোষতল গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে আসামি মোঃ জাফর (২৮) ও একই উপজেলার কেচকিমুড়ার আঃ লতিফ এর ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন (২৬) ও ফেনী জেলার সদর উপজেলার বগইড় গ্রামের মোঃ সিরাজ উদ্দিনের ছেলে আসামি মোঃ এনামুল হক বাবুলকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে। পরবর্তীতে আসামি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারার বিধানমতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ মনিরুল কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোষতলের মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে আসামি মোঃ জাফর (২৮) ও একই উপজেলার কেচকিমুড়ার আবদুল লতিফের ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন এবং ফেনী সদর উপজেলার বগইড় গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ এনামুল হক বাবলুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দন্ডবিধির ৩৪১/৩০২/৩৪ ধারার বিধানমতে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তৎপর মামলাটি বিচারে আসলে ২০২০ সালের ১৪ই জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ গঠনক্রমে রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে আসামি মোঃ জাফরকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং অপর দুই আসামি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন ও মোঃ এনামুল হক বাবলুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালত। রায় ঘোষণাকালে দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ জাফর আদালত কাঠগড়ায় অনুপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি অ্যাডভোকেট মোঃ জাকির হোসেন বলেন, আমরা আশা করছি উচ্চ আদালত এ রায় বহাল রাখবেন।