অপ্রাপ্ত বয়স্কদের হাতে ইজিবাইক সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনাঃ ভয় ও ভোগান্তিতে যাত্রীরা
এমরান হোসেন॥ যে বয়সে শিশু কিশোররা থাকবে মায়ের কোলে অথবা বই খাতা ও কলম নিয়ে স্কুলে সেই বয়সে ড্রাইভিং এর মত ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় অবুঝ শিশুরা। অবাক করার মত কথা হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো কুমিল্লার প্রায় সকল উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে শিশুদের হাতেই চলছে তিন চাকার অটো রিকশা ও ইজিবাইক।
জেলার ১৭টি উপজেলার কাঁচা-পাকা সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তিনচাকার অটোরিকশা ও ইজিবাইক। আর এইসব চালাচ্ছে শিশু-কিশোররা। প্রশিক্ষণ ছাড়াই শিশুরা এসব যানবাহনের চালকের দায়িত্ব থাকায় প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। গ্রামীণ সড়ক থেকে শুরু করে আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়ক এখন অটোরিকশা ও ইজিবাইকের দখলে।
চালকরা কোন নিয়ম-নীতি না জেনে না মেনে মহাসড়ক ও শহরের মধ্যে চালাচ্ছে এসব তিনচাকার অটো, ইজিবাই। যেখানে সেখানে তাদের বাইক থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করছেন। চলাচলরত অসংখ্য অটো, ইজিবাইকের কারণে শহরের মধ্যে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। এছাড়া চালকদের মধ্যে অধিকাংশ অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত না হওয়ায় হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা শহর থেকে গ্রাম এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইজিবাইক আর এইসব চালাচ্ছে অবুজ শিশুরা। রাস্তার মাঝখানে গাড়ি ঘোরানো যত্রতত্র পার্কিং অদক্ষতার কারণে যানজটের শিকার হচ্ছে। পথযাত্রীদের অভিযোগ থানা শহরে চলাচলরত তিনচাকার অটো ও ইজিবাইক চালকরা কোন নিয়ম-শৃঙ্খলা তোয়াক্কা না করে সড়কে ইচ্ছামতো ইজিবাইক ঘুরিয়ে ফেলতে যায়। আবার রাস্তা ভাঙাচুরা অংশে পরিহার করে ভালো অংশ দিয়ে যেতে চায়। যার ফলে তারা ঘন ঘন রাস্তায় এপাশ ওপাশ করে পথ চলে। এমন অবস্থায় মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশাসহ দ্রুতগতির পরিবহন পেছন থেকে আগে উঠতে গেলে ইজিবাইক ধাক্কা লেগে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে।
এসব সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল-কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থী ছাড়াও প্রান হারাচ্ছে শিশুরা। এই ইজিবাইক চালকদের খাম-খেয়ালিতে শহরের মধ্যে সৃষ্ট যানজটের এখন প্রতিদিনের চিত্র। এমন অবস্থায় সঠিক সময়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পৌঁছতে না পেরে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাধারণ পথচারীদের অভিযোগ- ইজিবাইক চালকরা শহরের রাস্তার মধ্য খানে বাইক পার্কিং করার কারণে সৃষ্ট যানজটে ১০ মিনিটের রাস্তা কখনো কখনো ৪০ মিনিট ১ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ২০১১ সালের দিকে প্রথমে উপজেলা শহরে অল্প কিছু সংখ্যক তিনচাকা অটো ও ইজিবাইক দেখা গেলেও বর্তমানে অসংখ্য তিনচাকার অটো ও ইজিবাইক চলাচল করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা ইজিবাইক চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে ১২-১৪ বছরের কম বয়সের কিশোরেরাও রয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন ইজিবাইক সড়কে নামানো হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন এ সব ইজিবাইক শুধুমাত্র শহর এলাকায় চালানোর অনুমতি দিলেও তারা যাত্রী নিয়ে মহাসড়কে দ্রুত গতিতে যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাত্রী বহন করছে। এসব ইজিবাইক চালকদের মধ্যে কেউ কেউ মাঠের কৃষি শ্রমিক অথবা আগে রিকশা ভ্যান চালাতেন আবার কেউ কেউ বয়সে কিশোর এদের শতকরা ৮০ জন চালকেই জানেন না কিভাবে রাস্তায় ইজিবাইক চালাতে হয়। তারপরও তারা নিয়মিত মহাসড়ক ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে দ্রুত গতিতে চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইজিবাইক চালক লিয়াকত হোসেন জানান, তিনি ৫ বছর ধরে ইজিবাইক চালিয়ে ৭ সদস্যের সংসার জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে হারে প্রতিদিন নতুন নতুন ইজিবাইক রাস্তায় নামছে তাতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তার অভিযোগ নতুন ইজিবাইক চালকরা আইন-কানুন মানে না কে কত টাকা ভাড়া আয় করবে তারা সেই প্রতিযোগিায় ব্যস্ত। এ কারণে প্রতিদিন দুর্ঘটনা বাড়ছে।
আবুল কালাম নামে এক পথচারী বলেন, শহরের ভেতরে চলাচলরত তিনচাকা অটো, ইজিবাইক দেখলে মনে হয় এটা যেন ইজিবাইক শহর। তার অভিযোগ এই সমস্ত চালকদের কোন প্রশিক্ষণ নেই যার ফলে রাস্তায় দু’পাশ থেকে আসা যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে চালকদের ইচ্ছাকৃত যানজটের কারণে ভোগান্তিটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু-কিশোরদের কোনো ধরনের যান চালাতে দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে সতর্কতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে।