মঙ্গলবার, ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অপ্রাপ্ত বয়স্ক ইজিবাইক চালকরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়ক

অপ্রাপ্ত বয়স্ক ইজিবাইক চালকরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়ক

Views

 নিজস্ব প্রতিনিধি\ দেশব্যাপী অপ্রাপ্ত বয়স্ক ইজবাইক চালকরা দাফিয়ে বেড়াচ্ছে সড়ক। এসব চালকদের দেখলেই আঁতকে উঠতে হয়। যে বয়সে স্কুলে থাকার কথা সে বয়সে ড্রাইভিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত তারা। অবাক করার মতো কথা হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন সড়কে অপ্রাপ্ত বয়স্করাই চালাচ্ছে ইজিবাইকসহ ঝুঁকিপূর্ণ সব যানবাহন।

কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার ৯টি ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় সব সড়কেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক। মূলত ইজিবাইকই তারা চালাচ্ছে বেশি। যে বয়সে খেলার মাঠে থাকার কথা তাদের, সেই বয়সে এখন তারা হয়েছে রাস্তার রাজা। শিশুরা এসব যানবাহনের চালকের দায়িত্বে থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গ্রামীণ সড়ক থেকে শুরু করে মহাসড়ক এখন ইজিবাইকের দখলে। চালকরা কোনো নিয়মনীতি না জেনে ও না মেনে চালাচ্ছে এসব ইজিবাইক। যেখানে সেখানে তাদের বাইক থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। চলাচলরত অসংখ্য ইজিবাইকের কারণে সড়কের মধ্যে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। এছাড়া চালকদের মধ্যে অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হওয়ায় হরহামেশায় ঘটছে দুর্ঘটনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভরাসার বাজার, বুড়িচং বাজার, বারেশ্বর চৌমুহনী, শংকুচাইল বাজার, কালিকাপুর বাজার, ফকির বাজার, ব্রাহ্মণপাড়া সদর বাজার, বড়ধুশিয়া, চান্দলা, সাবের বাজার, কংশনগর, দেবপুর, ভারেল্লা মাজার এলাকা ও নিমসার ফাঁড়ি রোডে ইজিবাইকের দাপটে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয় প্রতিদিন। যারা ইজিবাইক চালাচ্ছে তাদের মধ্যে ১২-১৩ বছরের কম বয়সের কিশোররাও রয়েছে। এখন প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ইজিবাইক সড়কে নামানো হচ্ছে। আর এসব ইজিবাইক দিয়ে তারা যাত্রী নিয়ে সড়কে দ্রæতগতির যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে যাত্রী বহন করছে। এসব চালকের মধ্যে কেউ কেউ মাঠের কৃষিশ্রমিক অথবা আগে রিকশা বা ভ্যান চালাতো। আবার কেউ কেউ বয়সে কিশোর। এদের শতকরা ৮০ জন চালকই জানে না কিভাবে রাস্তায় ইজিবাইক চালাতে হয়। তারপরও তারা নিয়মিত গ্রামাঞ্চলের সড়কে ৫ জন করে যাত্রী নিয়ে দ্রæতগতিতে চালিয়ে যাচ্ছে।

আমির হোসেন নামে এক ইজিবাইক চালক জানান, তিনি ৪ বছর ধরে ইজিবাইক চালিয়ে ৫ সদস্যের সংসারের জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, যে হারে প্রতিদিন নতুন নতুন ইজিবাইক রাস্তায় নামছে তাতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তার অভিযোগ নতুন ইজিবাইক চালকরা আইন কানুন মানে না। কে কত টাকা আয় করবে তারা সেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত।

সচেতন মহলের অভিযোগ- এই অপ্রাপ্ত বয়স্ক ইজিবাইক চালকদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ এই পেশা থেকে অন্য পেশায় নিয়োজিত করতে হবে। অথবা তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ চালক তৈরি করে সড়কে ইজিবাইক চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া করোনা মহামারীর পর থেকে ইজিবাইক চালকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার সময় অনেক কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই সব কল-কারখানা ও গার্মেন্টসের কর্মীরা উপায়ান্তর না পেয়ে কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই ইজিবাইক কিনে অথবা ভাড়া নিয়ে সড়কে চালাতে শুরু করে।

এছাড়া কিছু প্রবাস ফেরত লোকজনও রয়েছে। যারা প্রবাস থেকে দেশে ফিরে এসে ইজিবাইক চালানোর পেশায় নিয়োজিত হয়েছে। তাদের হাতে নগদ টাকা থাকায় তারা নিজেরাই একটি ইজিবাইক ক্রয় করে প্রশিক্ষণ ছাড়াই সড়কে ইজিবাইক নিয়ে নেমে যায়। এতে অদক্ষ ড্রাইভারদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলশ্রæতিতে সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইজিবাইক চালাতে কোনো ধরনের লাইসেন্স লাগে না, আবার ইজিবাইকের কোনো নাম্বারও লাগে না। তাই সহজেই যে কেউ ইজিবাইক কিনতে পারে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া চালাতে পারে। এতেই অনেক অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেরা পরিবারের চাহিদা মেটাতে সহজেই এই ড্রাইভিং পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করে ফেলে।

স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে একটু নজরদারি বৃদ্ধি করলে শিশুচালকের সংখ্যা এবং অদক্ষ চালকের সংখ্যা কমে যাবে এবং সড়কে দুর্ঘটনার হারও কমে যাবে বলে মনে করেন সচেতনমহল।

Share This

COMMENTS