অস্থির মসলার বাজার
ষ্টাফ রিপোর্টার\ কোরবানির ঈদের বাকি মাত্র ৪ দিন। তার আগে প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। বেড়েছে মসলা জাতীয় পণ্যের দামও। গত এক বছরে রসুন, হলুদ ও এলাচির দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া অন্যান্য মসলার মধ্যে দারুচিনি, লবঙ্গ, ধনে, তেজপাতা, শুকনা মরিচ ও পিয়াজের দামও গত বছরের তুলনায় বাড়তি। সব মিলিয়ে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে মসলার বাজারে।
বিভিন্ন বাজারের মসলা পণ্যের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২ মাসের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে এলাচির দাম। রমজানের আগেও স্বাভাবিক ছিল এলাচির দাম। বর্তমানে খুচরা বাজারে এলাচি বিক্রি হচ্ছে ৩২০০ থেকে ৪০০০ টাকায়। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবি’র হিসাবে গত বছর এলাচির দাম ছিল ১৬০০ থেকে ২৮০০ টাকা। এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৬৪ শতাংশ।
এলাচির দাম হঠাৎ বাড়ার কারণ হিসেবে আমদানিকারকরা বলছেন, এলাচির বড় একটি অংশ আসে ইন্ডিয়া থেকে। এবার গরমের কারণে এলাচির উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে। ডলারের দাম, এলসি খুলতে না পারাসহ ডিউটি ফি বাড়ার কারণে বেড়েছে এলাচির দাম। সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলছেন, আমদানিকারক থেকে নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এলাচি মজুত করে বেশি মুনাফা করছেন। কয়েক হাত বদলের পরে খুচরা বাজারে আসায় আমদানি খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বছর ঘুরে আদা, রসুন ও পিয়াজের দামও বেড়েছে। বাজারে দেশীয় রসুনের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা। টিসিবি’র হিসাবে- গত বছরে এর দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। এক বছরে দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। আমদানিকৃত রসুন বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে। গত বছরে এই রসুনের দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। এক বছরে আমদানিকৃত রসুনের দাম বেড়েছে প্রায় ৬১ শতাংশ। বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। টিসিবি’র হিসাবে, গত বছর এই পিয়াজের দাম ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। এক বছরে পিয়াজের দাম বেড়েছে ৩.২৩ শতাংশ। বাজারে প্রতি কেজি দেশীয় আদার দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। টিসিবি’র হিসাবে, গত বছর দাম ছিল ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। আমদানিকৃত আদা ২২০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরে এর দাম ছিল ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা।
বাজারে দেশীয় হলুদ ৩১০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরে এর দাম ছিল ২৩০ থেকে ২৮০ টাকা। টিসিবি’র হিসাবে, এক বছরে হলুদের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৯ শতাংশের বেশি। আমদানিকৃত হলুদের কেজি ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা। গত বছর ছিল ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। এক বছরে দাম বেড়েছে ৪৬ শতাংশের বেশি।
বাজারে দারুচিনি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি’র হিসাবে গত বছরে এর দাম ছিল ৪৫০ থেকে ৫২০ টাকা। বছর ঘুরে দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। বাজারে লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৫৫০ থেকে ১৮০০ টাকা কেজি দরে। টিসিবি’র হিসাবে, গত বছরে এর দাম ছিল ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এক বছরে বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি।
জিরার দাম সামান্য কমেছে। প্রতি কেজি জিরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা। টিসিবি’র হিসাবে, গত বছরে এর দাম ছিল ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। বছর ঘুরে দেশীয় জাতের শুকনা মরিচের দাম কমলেও বেড়েছে আমদানিকৃত মরিচের দাম। দেশীয় জাতের শুকনা মরিচ ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরে এর দাম ছিল ৪০০ থেকে ৪৬০ টাকা। আমদানিকৃত শুকনা মরিচের কেজি ৪২০ থেকে ৫০০ টাকা, গত বছর ছিল ৪০০ থেকে ৪৬০ টাকা। এক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৭ শতাংশ।
প্রতি কেজি ধনের বাজারমূল্য ২০০ থেকে ২৬০ টাকা, গত বছর এর দাম ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এক বছরে ধনিয়ার দাম বেড়েছে ২.২২ শতাংশ। তেজপাতার কেজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, গত বছর ছিল ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। এক বছরে ৬ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, মানভেদে প্রতি কেজি এলাচি ৩৩০০ থেকে ৪০০০ টাকা, দারুচিনি ৫০০ টাকা, লবঙ্গ ১৫০০ টাকা, গোলমরিচ ৯০০ টাকা, জিরা ৭০০ টাকা, তেজপাতা ১২০ টাকা, কিশমিশ ৬৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কালো গোলমরিচ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২৭৫০ টাকা, কিশমিশ ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, যায়ফলের পিস ৮ টাকা, কাঠবাদাম ১০৮০ টাকা, কাঁচাবাদাম ১৬৫ টাকা, মরিচের গুঁড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, হলুদের গুঁড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, ধনের গুঁড়া ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ার কারণ কী- এমন প্রশ্নের জবাবে বিক্রেতা সোহেল বলেন, এলাচের কেজিতে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যাদের জায়গা আছে মজুত করে রাখে। দাম বাড়লে বেশি দামে বিক্রি করে। এভাবে সিন্ডিকেট করে মসলার দাম বাড়ানো হয়।