শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি লাঘবে  কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের নানা প্রস্তুতি

ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি লাঘবে কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের নানা প্রস্তুতি

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ ঈদযাত্রায় যানজটের কারণে মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। সেই ভোগান্তি থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিতে দেশের লাইফ লাইন খ্যাত ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানুষের যাত্রা নিরাপদ রাখতে সব প্রস্তুতি নিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। ঢাকা থেকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ অন্তত ১০ জেলার যানবাহন চলাচল করে মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ দিয়ে। গত কয়েক দিনের গরম উপেক্ষা করে ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে মহাসড়কে অবিরাম কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ।

            কুমিল্লার হাইওয়ে পুলিশের সূত্রমতে, মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রæত যান চলাচল স্বাভাবিক করতে অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি প্রস্তুত রয়েছে বিশেষ কুইক রেসপন্স টিম। সড়ক জুড়ে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে কমিউনিটি পুলিশ। এবার যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে প্রতিযোগিতাহীন গাড়ি চালানোর পাশাপাশি সড়ক পারাপারে পথচারীদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।

            এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৩১ কিলোমিটার ভোগান্তিমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কুমিল্লা রিজিয়নে হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, সড়কে একটি কন্ট্রোলরুম থাকবে। ৩৫টি অস্থায়ী কন্ট্রোলরুম বা ওয়াচ টাওয়ার থাকবে। মোট ৬৮০ জন পুলিশ ও ৩৫০ জন কমিউনিটি পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মহড়া দেবে। মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইরোধে বিশেষ সতর্কতা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

            মহাসড়কের কুমিল্লার অংশ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে যানজটপ্রবণ ২৬টি স্থান। সূত্র মতে, মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্ল­াজা, গৌরীপুর বাজার, বুড়িচংয়ে নিমসার বাজার, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, ক্যান্টনমেন্ট মোড় ও চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকায় যানজট প্রায় লেগে থাকে। তাছাড়া এ সড়কে দুর্ঘটনায় শিকার গাড়ি সরাতে দেরি হলে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে যানজট। এতে নারী-শিশুসহ বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে পড়তে হয় বিপাকে।

            অধিক গুরুত্বপূর্ণ ১২টি স্থান হলো- মহাসড়কের বলদাখাল বাসস্ট্যান্ড, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, নিমসার বাজার ও ইউটার্ন, ক্যান্টনমেন্ট মোড় (উভয়মুখী), আলেখারচর বিশ্বরোড, বিসিক মোড়, চৌদ্দগ্রাম বাজার, লালপোল, ভাটিয়ারি পয়েন্ট, ফৌজদারহাট ইউটার্ন, সীতাকুন্ড বাসস্ট্যান্ড, বড় দারোগারহাট স্কেল। এসব স্থানে অতিরিক্ত টহল ও বাড়তি নজরদারি রাখা হবে।

            কম গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি স্থানের মধ্যে রয়েছে- শহীদনগর বাসস্ট্যান্ড, আমিরাবাদ বাসস্ট্যান্ড, ইলিয়টগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড, কোটবাড়ি ইউটার্ন, জাগুরঝুলি কাটা, নুরজাহান হোটেলের সামনের ইউটার্ন, সদর দক্ষিণ থানার সামনের ইউটার্ন, সুয়াগাজী বাজার (উভয়মুখী), নাজিরা বাজার ইউটার্ন, বারবকুন্ড বাজার, ছোট কুমিরা, কেডিএস মোড়, ফুটলিং এলাকা।

            এছাড়াও মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি প্রস্তুত রয়েছে বিশেষ কুইক রেসপন্স টিম। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সড়কে কাজ করবে কমিউনিটি পুলিশ। কুমিল্লা রিজিয়নে হাইওয়ে সেক্টর থাকবে দু’টি ও সাব সেক্টর ২১টি, মোবাইল ডিউটি থাকবে ৩৪টি, পিকেট ডিউটি ১৫টি, কুইক রেসপন্স টিম মোটরসাইকেলযোগে থাকবে ১৫টি, পিকআপ যোগে ১৫টি, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ একটি, রেকার ডিউটি সরকারি পাঁচটি ও বেসরকারি ছয়টিসহ ১১টি, অ্যাম্বুলেন্স ডিউটি দু’টি, কন্ট্রোলরুম একটি, অস্থায়ী কন্ট্রোলরুম বা ওয়াচ টাওয়ার থাকবে ৩৫টি।

            কুমিল্লা রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, মহাসড়কে কোথাও হাইওয়ে পুলিশ চাঁদাবাজি করলে তা প্রমাণিত হলে তাকে ক্লোজ করা হবে। কোনো প্রকার যানবাহন দাঁড় করে হয়রানি যাবে না। মহাসড়ক এলাকায় বাজার ও বাসস্ট্যান্ড রয়েছে, সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিষিদ্ধ তিন চাকার গাড়ি আটক হলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কুমিল্লার অংশে দাউকান্দিসহ একাধিক স্থানে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সড়কের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে।

            তিনি আরও বলেন, কুমিল্লা অঞ্চলের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে কিছুটা যানজট রয়েছে। নির্বিঘেœ সকলে বাড়ি গিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারবে। কোনো দুর্ঘটনাজনিত কারণে কিংবা টোলপ্ল­াজায় যদি যানবাহনের জটলা তৈরি না হয়, সেজন্য হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নানা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।      পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম বলেন, যাত্রীদের বিড়ম্বনা কমাতে এবার হাইওয়ে পুলিশ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামার বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সড়ক ও জনপদ বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে। মহাসড়কের যে সব এলাকায় বাজার ও বাসস্ট্যান্ড রয়েছে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিষিদ্ধ তিন চাকার গাড়ি আটক হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এতে কোনো সুপারিশ নেয়া হবে না।

            সড়ক ও জনপদ অধিদফতর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, ঈদ পর্যন্ত মহাসড়কে উন্নয়ন বা সংস্কার কাজ হবে না। এছাড়াও সড়কের কোথাও হঠাৎ কোনো সমস্যার সৃষ্টি হলে সেটি সমাধানে দু’টি টিম প্রস্তুত রয়েছে।

Share This

COMMENTS