শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এসএসসি-এইচএসসির নতুন শিক্ষাক্রমে থাকছে না জিপিএ-গ্রেডিং

এসএসসি-এইচএসসির নতুন শিক্ষাক্রমে থাকছে না জিপিএ-গ্রেডিং

            বিশেষ প্রতিনিধি\ নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ) বা অন্য কোনো গ্রেডিং থাকছে না। এমনকি ‘ত্রিভুজ’, ‘বৃত্ত’ বা ‘চতুর্ভুজ’ দিয়েও মূল্যায়ন করা হবে না। শুধু বিষয়ভিত্তিক পারফরম্যান্স ইনডিকেটর দেয়া হবে। আর প্রত্যেক বিষয় মূল্যায়নে সাতটি পর্যায় বা স্কেল দেয়া হবে।

            তবে সব বিষয়ের স্কেল মিলিয়ে তা সমন্বিতভাবে প্রকাশ করা হবে না। এ ধরনের বিধান রেখে নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন রূপরেখা ঠিক করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

সূত্র জানায়, নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়নে কোনো নম্বর থাকবে না। মূল্যায়ন হবে সাতটি পর্যায়ে। মূল্যায়নের এ পর্যায়গুলো হচ্ছে- অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক। সবচেয়ে যে ভালো করবে সে ‘অনন্য’ পাবে। এভাবে অন্য পর্যায়গুলো দিয়ে মূল্যায়ন করা হবে।                   শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি বা এইচএসসির মূল্যায়ন পদ্ধতি এই মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে। শিগগিরই ন্যাশনাল কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠকে এই মূল্যায়ন রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ড সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের এসএসসি বা এইচএসসিতে জিপিএ বা অন্য কোনো গ্রেডিং থাকছে না। মূল্যায়নে বিষয়ভিত্তিক পারফরম্যান্স অর্জনে জোর দেয়া হয়েছে। সেখানে সাতটি পর্যায় বা স্কেল থাকতে পারে। মূলত আমরা বিষয়ভিত্তিক পারফরম্যান্স ইনডিকেটর দেব।

শিক্ষার্থীরা একাডেমিক রিপোর্ট কার্ড পাবে। মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত হলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য নৈপুণ্য অ্যাপ প্রস্তুত করা হবে।’

মূল্যায়ন রূপরেখায় প্রতিবছরের এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রæয়ারির পরিবর্তে ডিসেম্বরে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাদের যুক্তি, পুরনো কারিকুলামে দশম শ্রেণি শেষে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় দেয়া হতো। কিন্তু নতুন কারিকুলামে যেহেতু আলাদা করে প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন নেই আর বেশির ভাগই শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের দক্ষতা যাচাই করা হবে, তাই দশম শ্রেণি শেষে ডিসেম্বরেই এসএসসি পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে।

আগামী বছর (২০২৫ সাল) ফেব্রæয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েই শেষ হচ্ছে পুরনো শিক্ষাক্রম। তাই আগামী বছরের ডিসেম্বরেই দশম শ্রেণি শেষে নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন করা যায় কি না সে ব্যাপারে আন্ত শিক্ষা বোর্ডকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় সামষ্টিক মূল্যায়ন বা লিখিত অংশে ৬৫ নম্বর এবং শিখনকালীন মূল্যায়ন বা শ্রেণি কার্যক্রমে ৩৫ নম্বর রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রথম বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ধাপে ধাপে কার্যক্রমভিত্তিক ওয়েটেজ বাড়ানো হবে। লিখিত প্রশ্নপত্র হবে কার্যক্রমের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল রেখে। শ্রেণি কার্যক্রম বলতে বোঝানো হয়েছে অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপন, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, সমস্যার সমাধান, পরিকল্পনা প্রণয়নের মতো কাজ।

সূত্র জানায়, আগে এসএসসি বা এইচএসসিতে তিন ঘণ্টার পরীক্ষা হলেও নতুন শিক্ষাক্রমে প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়ন হবে পাঁচ ঘণ্টায়। দীর্ঘ এ সময়টা পরীক্ষার হলেই অবস্থান করতে হবে পরীক্ষার্থীদের। অবশ্য মাঝে বিরতি পাবে তারা। পাবলিক পরীক্ষায় মোট ১০টি বিষয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। বিষয়গুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্মশিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি।

বিষয়ের চাহিদা ও যোগ্যতা অনুযায়ী প্রকল্পভিত্তিক কাজ, সমস্যা সমাধান, অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদির পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে পরীক্ষার্থীদের। মূল্যায়নে অনুসন্ধান, প্রদর্শন, মডেল তৈরি, উপস্থাপন, পরীক্ষণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয় থাকবে। পরীক্ষার মান ও মূল্যায়নে নিরপেক্ষতা যাতে বজায় রাখা যায়, সে জন্য লিখিত মূল্যায়নে বর্তমান পাবলিক পরীক্ষার মতো খাতা ব্যবহার করা হবে।

এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘এসএসসি বা এইচএসসিতে আগের মতো জিপিএ থাকছে না। সাতটি স্কেলে বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন করা হবে। সরকারের লক্ষ্য সব প্রতিষ্ঠান সমপর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। কেউ ভালো করল, কেউ খারাপ করল তা আর থাকবে না। আমরা চাই সব বাচ্চা উল্লাস করুক। আর এই মূল্যায়ন পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়াসহ সব কিছুতেই পরিবর্তন আনা হবে।’

উল্লেখ্য, গত বছর দেশে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়। বর্তমানে প্রাথমিকে প্রথম থেকে তৃতীয় এবং ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে অধ্যয়ন করছে শিক্ষার্থীরা। আগামী বছর চতুর্থ ও পঞ্চম এবং দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হবে। ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতেও নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হবে।

Share This