কমছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা


মোঃ জামাল হোসেন\ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশঙ্খাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। কিন্ডার গার্ডেন নূরানী মাদরাসা এবং হিফজখানাতে প্রচুর পরিমাণে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। প্রতিমাসে অভিভাবকেরা তাদের বাচ্চাদের পিছনে মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করছে। অন্যদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সম্পূর্ণ অবৈতনিক। বিনামূল্যে বইপত্র ছাড়াও চক, ডাস্টার, খাতাপত্রসহ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস আনুষাঙ্গিক খরচ মিটানোর একটা অর্থ বরাদ্দ দেয়। বছরের প্রথমে কোমলমতি শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে বই। দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তিও। তারপরেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেই যাচ্ছে। সাধারণ খেটে খাওয়া তৃণমুল পর্যায়ের মানুষ আসলেই শিক্ষা সচেতন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব নেই। প্রাথমিক যুগোপযোগী শিক্ষা সম্পর্কে সিলেবাস প্রণেতাদের প্রকৃত অর্থে কতটুকু ধারণা আছে ? প্রয়োজনীয় বেতন ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেয়া হয়। অন্যান্য সুবিধাসহ প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দেয়ার আলোচনা চলছে। এমনিতেই বেতন ভাতাদিসহ অন্যান্য সুবিধা কম থাকায় মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে অনীহা। শিশুদের প্রতি নারীরা নাকি অধিক ¯েœহশীল। নারীর কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধিক সংখ্যায় তাদের নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জনে বাধার সৃষ্টি হয় বলে মনে হয়। প্রাথমিক শিক্ষার ফলপ্রসূ ইপ্সিত ফল অর্জনে অন্তঃসারশূন্য সুন্দর সুন্দর ভবনগুলো দেখলে নিজের কাছে নিজেকেই অসহায় মনে হয়। সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা এক রকম না হলেও বিগত সরকারের আমলে ঢালাওভাবে অনেক অযোগ্য লোকদের নিয়োগ দেয়া হয়। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ পর থেকে প্রাথমিকসহ সকল স্তরে শিক্ষার মানের অবনতি ঘটেছে। যেন আমরা এক অস্থির প্রজন্ম তৈরি করেছি। যাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই। নেই আদর্শিক কোন মিশন। জ্ঞান অজর্নে নেই কোন আগ্রহ। ক্রীড়ায় অনীহা। শ্রদ্ধবোধ নেই, সম্মানবোধ মূল্যবোধ নেই শৃঙ্খলাবোধও। সকাল-সন্ধ্যা কখন হয় তাদের খবর নেই । উদ্ধত আচরণ সদম্ভে চলাফেরা অন্যকে নাজেহাল করার প্রয়াস। বিনয়াবনত কথনের বড় অভাব। স্মাট ফোনের সংকীর্ণ আবিলতায় চক্ষু আর মস্তিস্ক ক্ষয়ে দিচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। অনলাইনে ক্লাস সেই অবনতিশীল অবস্থার সূচনা করেছে। বার বার শিক্ষা ক্রমের পরিবর্তন, পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটিয়েছে। ক্লাশে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর আনুপাতিক হারও অনুমোদিত মাত্রায় আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম পাঠদান ও পরীক্ষা নিয়ে অনেক কথাবার্তা হলেও মানের কোন উন্নয়ন ঘটেনি। যোগ্যতার ন্যূনতম মানদন্ড ঠিক না রেখে দলীয় নিয়োগ শিশুবৃক্ষে কুড়াল মারার সমান। বিগত পতিত সরকার এমনটিই করেছিল। মাঝে মাঝে সাব ক্লাসটার প্রশিক্ষণে কী শিখানো হয় ? কিভাবে আনন্দ উপকরণের মাধ্যমে বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়া যায় ? আলোচনার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বিনিময়। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিশুরা আমাদের ভবিষ্যতের কর্ণধার। শিক্ষার চরম লক্ষ্য কিন্তু চরিত্র ও নীতি নৈতিকতা গঠন। দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করা। ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে তা অর্জন করা সম্ভব। যদিও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয় না। এ দেশের ৯০% লোক ধর্ম ভীরু আবেগী মুসলমান। সব অভিভাবক চায় তার বাচ্চাটি ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হোক। পবিত্র কোরআন হাদিস শিক্ষার মাধ্যমেও সৃজনশীল কর্মমুখী ধর্মশিক্ষা এবং জীবিকা অর্জন করা সম্ভব। প্রতি ক্লাসে আব্যশিক বিষয়ের মত ২০০ নম্বরের পরীক্ষা রাখা প্রয়োজন। এ জন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।। প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণায় ধর্মীয় বিষয়গুলো উপেক্ষা করা হচ্ছে কিনা, খতিয়ে দেখা প্রয়োজন । এ পযর্ন্ত দুই ধাপে ৬৫ হাজারের অধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় অবৈতনিক ও জাতীয়করণ করা হয়। অবকাঠামো উন্নয়নেও সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচুর ব্যয় বরাদ্দ দেয়। শিক্ষার প্রাথমিক স্তরটি যদি শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত না হয়, পরবর্তী স্তরে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যুগোপযোগী মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য শিখন-শিখানোর কৌশল আপগ্রেট করা প্রয়োজন। কারিকুলামের মানোন্নয়নসহ শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের সাথে অভিভাবকের ভালো বোঝাপড়া থাকতে হবে। প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে অভিভাবক সমাবেশ করা যেতে পারে। শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকের সমন্বয় কাঙ্খিত ফল আনতে পারে। নচেৎ কয়েক বছরের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীর আকালে পড়বে। লেখকঃ শিক্ষক, ফুলগাঁও ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, লাকসাম, কুমিল্লা