শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লার ১৪ উপজেলায় পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ

কুমিল্লার ১৪ উপজেলায় পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ

ষ্টাফ রিপোর্টার: স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলাই এখনো বানের পানিতে নিমজ্জিত। পানিবন্দি অন্তত ১৫ লাখ মানুষ। চারদিকে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগের চিত্র। ত্রাণসামগ্রী ও সুপেয় পানির অভাবে তাদের ভোগান্তির অন্ত নেই। আকস্মিক বন্যার আঘাতে প্রথমে প্লাবিত হয় জেলার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও লাকসাম উপজেলা। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য উপজেলা প্লাবিত হয়। জেলার অন্যান্য উপজেলায় কমবেশি ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হলেও খাদ্য সহায়তা পৌঁছেনি মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলায়। এ কারণে এই দুই উপজেলার বানভাসি মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, মনোহরগঞ্জ উপজেলার গাজিয়াপাড়াসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে সরকারি বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। খাবারের কষ্টে মানুষ হাহাকার করছে। দোকানপাটেও তেমন খাবারসামগ্রী নেই, থাকলেও দাম অনেক বেশি নেয়া হচ্ছে। ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকার গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়।’
নাঙ্গলকোট থেকে সংবাদদাতা সাইফুল ইসলাম জানান, উপজেলার সাতবাড়িয়া এলাকা কয়েক দিন ধরে পানির নিচে। এলাকাটা অনেক ভেতরে হওয়ায় কেউই সেখানে যাচ্ছে না। এ কারণে তাদের খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। অনুরূপ অবস্থা পুরো উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে।

স্থানীয়রা বলেছেন, গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে বুড়িচং উপজেলা প্লাবিত হওয়ার খবর বেশি প্রচার হওয়ায় সারা দেশ থেকে দলে দলে লোক নৌকা ও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে সেখানেই যাচ্ছে। কিন্তু এর আগেই ডাকাতিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডুবে গেছে জেলার দক্ষিণের চারটি উপজেলা। এসব এলাকায় অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সেসব এলাকায় খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছে ওই সব এলাকার বানভাসিরা।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজালা রানী চাকমা বলেন, ‘মনোহরগঞ্জ উপজেলার অনেক দুর্গম এলাকা রয়েছে, যেগুলোতে নৌকা ছাড়া যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে পাঠিয়ে সেসব এলাকায় ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যেন একটা মানুষও অভুক্ত না থাকে।’
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, ‘নাঙ্গলকোটে ত্রাণ সরবরাহে কিছুটা সংকট আছে, আমরা সেটা স্বীকার করছি। এই উপজেলার কিছু জায়গায় একেবারেই পৌঁছানো যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে তাদের কাছে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার।’

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ১৪ উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। তবে স্থানীয়ভাবে ধারণা করা হচ্ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা আরও বেশি। গোমতী নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনো বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোমতীর বাঁধ ভাঙ্গন সবচেয়ে বেশি ভয়াবহতা সৃষ্টি করছে বুড়িচং উপজেলায়। ভেঙে যাওয়া নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ দিয়ে প্রতিনিয়ত ¯্রােতের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বুড়িচংয়ে এখনো লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এরিমধ্যে গত চারদিনে পুরোপুরি প্লাবিত হয়ে পানিতে ভাসছে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। এ উপজেলায় বর্তমানে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার।
এদিকে কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের মনোহরগঞ্জ, লাকসাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে বন্যাার পানি। রবিবার রাত থেকে অনবরত বৃষ্টি হতে থাকায় এসব এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিন পার করছেন। মনোহরগঞ্জ উপজেলায় অনেক আশ্রয় কেন্দ্র এখন পানির নিচে। চারদিকে ত্রাণের জন্য হাহাকার। মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলার বেশিরভাগ প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো পৌঁছায়নি ত্রাণ সহায়তা। রয়েছে বিশুদ্ধ পানিরও চরম সংকট। অপরদিকে চৌদ্দগ্রামে পানি কিছুটা কমলেও ত্রাণ ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ ভয়াবহ কষ্টে রয়েছেন। আর তিতাস উপজেলায় বাড়ছে পানি, তলিয়ে যাচ্ছে নতুন করে আরও গ্রাম ও রাস্তাঘাট।
সোমবার (২৬ আগস্ট) কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, জেলার ১৪টি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় ৯ লাখ ৫১ হাজার ১০৯ জন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। আর আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন ৬৬ হাজার ৯৬৬ জন। জেলার বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর দুর্গত এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে শুকনা খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণও অব্যাহত আছে।
কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান বলেন, গোমতীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি না কমলে বাঁধ মেরামত করা সম্ভব না। পানি না কমা পর্যন্ত নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতেই থাকবে।

Share This