জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসীল ঘোষণা
ষ্টাফ রিপোর্টার\ আবার আসছে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করার পর এবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) ধাপে ধাপে আয়োজন করতে যাচ্ছে এ নির্বাচন। এটি মার্চের প্রথমার্ধেই শুরু হতে পারে। এ ব্যাপারে সময় গণনা শুরু হয়েছে বলে গত শনিবার (১৩ই জানুয়ারি) ইসি সূত্রে জানা গেছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এ মাসের শেষের দিকে তফসিল হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথম ধাপের ভোট মার্চের শুরুর দিকেই অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে গত নির্বাচনে কোন্ উপজেলায় কবে ভোট হয়েছে এবং কবে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে- প্রভৃতি তথ্য দিতে বলেছে সংস্থাটি।
ইসি কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা পরিষদ পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে সময় ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ৪৫৫টির নির্বাচন যথাযথ সময়ে এবং পরবর্তীতে অন্যগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ওই বছর ২০১৯ সালের ১০ই মার্চ প্রথম ধাপে ৮২টি, ১৮ই মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ১২৩টি, ২৪শে মার্চ তৃতীয় ধাপে ১২২টি, ৩১শে মার্চ চতুর্থ ধাপে ১০৬টি এবং ১৮ই জুন পঞ্চম ধাপে ২২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে দেশে বর্তমানে উপজেলার সংখ্যা ৪৯৫টি।
এ ব্যাপারে আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। আর নির্বাচন করতে হয় মেয়াদ পূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাই শপথও হয়েছে পাঁচ বা তার বেশি ধাপে। কাজেই কয়েক ধাপেই শেষ হবে উপজেলা পরিষদগুলোর মেয়াদ। আর সে অনুযায়ী ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় গণনা হবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ইসির মাঠ কর্মকর্তাদেরও একই তথ্য দিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। এ সংক্রান্ত চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকগণের বরাবরেও।
উল্লেখিত নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে যে, উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এর ১৭(১) (গ) ধারা অনুসারে পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে- ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ থেকে পূর্ববর্তী ১৮০ (একশত আশি) দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সেহেতু, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পঞ্চম উপজেলা পরিষদের শপথ গ্রহণ ও প্রথম সভার তারিখের তথ্য প্রেরণের জন্যও সিদ্ধান্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এ প্রসঙ্গে আরো জানা গেছে যে, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে সে সময় বিজয়ীদের শপথ ২০১৯ সালের মার্চেই হয়েছে। অন্য ধাপেরগুলো পরবর্তীতে ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে এপ্রিল ও মে মাসে। সে হিসেবে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় গণনা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন যে, চলতি জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে উপজেলার প্রথম ধাপের নির্বাচনের তফসিল হতে পারে। তবে তফসিল ও ভোট কখন হবে, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।
এখানে আরও উল্লেখ্য যে, ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে প্রথমবার, ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বার ও ২০০৯ সালে তৃতীয়বার, ২০১৪ সালে চতুর্থবার এবং ২০১৯ সালে পঞ্চমবার উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচনে ১৪টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও ট্যাব ব্যবহার করা হয়েছিল।
আর ২০১৪ সালে জুন-জুলাই মাসে সাত ধাপে ৪৮৬ উপজেলার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে সময়কার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফরে গেলে তখন ভারপ্রাপ্ত সিইসির দায়িত্ব পালন করেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক।
তাতে পাঁচটি ধাপের নির্বাচন তার তত্ত¡াবধানেই অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন হলেও দলীয় সমর্থনে ভোট হয়। এতে শতাধিক ব্যক্তি সহিংসতায় প্রাণ হারান।
পঞ্চম ধাপের ভোট শেষে ওই বছরের ৩১শে মার্চ আবদুল মোবারক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রথম নির্বাচনে বড় বড় দলগুলো দলীয়ভাবে হওয়ার ব্যাপারে বিরোধিতা করেছে। এখন তারা আবার দলীয়ভাবে নির্বাচন চাচ্ছে। যদি এমনই চেয়ে থাকেন, তবে আইনের মধ্যে ব্যবস্থা করলে আরও ভালো হতো।
আশাকরি ভবিষ্যতে তারা আইন প্রণয়ন করবেন, তারা এ নিয়ে ভাববেন। কারণ এতে অনেক হানাহানির ঘটনাও ঘটে থাকে এবং সে জন্য নির্বাচন স্থগিত হলে আবার নির্বাচন করতে হয়।
তিনি বলেন, যারা জনমত গঠন করেন, আপনারা এ নিয়ে ভাবুন। যাতে আগামী নির্বাচনে এ নিয়ে বিভ্রান্ত না হয়। অবশ্য দশম জাতীয় সংসদেই স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার আইন হয়। সে অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকেই স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া ইসি সুত্র আরো জানায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের পদত্যাগ করতে হবে কিনা, সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বার, জেলা পরিষদের সদস্য, পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলরদের পদত্যাগ করতে হবে। এছাড়া অনেক কলেজ সরকারি হয়েছে কিন্তু সেখানে যারা চাকরি করেন, তারা এখনও সরকারি হননি। তাদেরও উপজেলা পরিষদে নির্বাচন করতে হলে চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে হবে।