ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গীতে ঝড়ে লন্ডভন্ড ১০ গ্রাম, নিহত ৩
৯ Views
মইনুল ইসলাম॥ ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় মাত্র ১০/ ১২ মিনিটের ভারী বৃষ্টি ও তুমুল ঝড়ে ২টি ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। অনেক কাঁচা বাড়িঘরের টিনের চালা উড়ে গেছে। গাছ পালা ভেঙ্গে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। শনিবার (১লা জুন) ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় এ ঝড় হয়।
ঝড়ের কবলে দুই নারী ও জমে থাকা পানিতে ডুবে মারা গেছে আড়াই বছরের এক শিশু। নিহতরা হলেন, উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের শালডাঙ্গা গ্রামের পইনুল ইসলামের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০), একই গ্রামের দবিরুল ইসলামের স্ত্রী জাহেদা বেগম (৫০) ও একই উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের লালাপুর নয়াপাড়া গ্রামের নাজমুল ইসলামের আড়াই বছরের ছেলে নাঈয়ুম। পইনুল ইসলাম জানান, ‘সকালে ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে মসজিদে থাকা অবস্থায় ঝড় শুরু হয়। বাড়িতে ছুটে এসে স্ত্রীকে খুঁজে না পেয়ে ডাকাডাকি শুরু করি। পরে বাতাসে উড়ে এসে বারান্দায় পড়ে টিন ও ছাউনি সরিয়ে দেখি নিচে চাপা পড়ে আছে স্ত্রী।
উদ্ধার করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ এছাড়া, পাড়িয়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের দফাদার আজিজুর রহমান বলেন, ‘ঝড়ের সময় বারান্দায় বসে ছিলেন দবিরুল ইসলাম ওরফে বেকার স্ত্রী জাহেদা। মেঘের গর্জন আর ঝড়ে গাছপালা উড়তে দেখে বারান্দাতেই মৃত্যু হয় তার।’ একই উপজেলার শালডাঙ্গা গ্রামের দবিরুল ইসলাম ওরফে বেকা বলেন, ‘আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিল। ঝড়ের সময় ভয়ে স্ট্রোক করেছে বলে ধারণা করছি।’ লালাপুর নয়াপাড়া গ্রামের নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়ির পাশে গর্তে বৃষ্টির পানি জমে ছিল। খেলতে গিয়ে শিশুটি পড়ে গিয়েছিল। পরে পরিবারের লোকজনের নজরে এলে তাকে উদ্ধার করে।’ ঝড়ে পাড়িয়া ইউনিয়নের তিলকড়া, শালডাঙ্গা, বঙ্গভিটা, লোহাড়া, বামুনিয়াসহ ৬টি গ্রাম, বড়বাড়ী ইউনিয়নের বেলহাড়া, বেলবাড়ী, বটের হাট, হরিপুরসহ ৪টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশির ভাগ কাঁচাবাড়ির টিনের চালা উড়ে গেছে। গাছ ভেঙে পড়েছে ঘরের ওপর। বড়বাড়ী ইউনিয়নের আধারদিঘী বাজারে ৫টি দোকান ও ২টি হোটেলে গাছ ভেঙে পড়েছে। ঘরের টিন নষ্টসহ সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী ও সিমেন্টের ব্যবসায়ীর ৫ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে। আধারদিঘী বাজারের ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, ‘বাজারে শতবর্ষী কিছু আমগাছ ছিল দীর্ঘদিনের। ঝড়ের কারণে সেই গাছের বড় ডাল ভেঙে পড়েছে দোকানগুলোর টিনের ছাউনির ওপর।
এতে দোকানগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’ লোহাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘ঝড়ে স্কুলের হলরুম টিনের ছাউনি পড়ে মাঠে এসে পড়েছে। বিদ্যালয়টির প্রবেশদ্বারে গাছ ভেঙে পড়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটির ওপর। এ ছাড়া লোহাড়া থেকে বঙ্গভিটা যাওয়ার রাস্তায় একাধিক গাছ ভেঙে রাস্তায় পড়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।’ ওদিকে, বড়বাড়ী ইউনিয়নের আধারদিঘী থেকে হরিণমারী যাওয়ার রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়ে চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘটনার পর থেকে এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকের মোবাইল ফোনও বন্ধ হয়ে গেছে চার্জের অভাবে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বালিয়াডাঙ্গী জোনাল অফিসের এজিএম কামরুল হাসান বলেন, ‘ঝড়ে ৩০টির বেশি বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে ও ভেঙে গেছে। এ ছাড়া অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক তারের ওপর গাছ ভেঙে পড়েছে। বালিয়াডাঙ্গী বাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি সব এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ। সকাল থেকে আমাদের লোকজন মাঠে কাজ করছে।’
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সোহেল বলেন, ‘ঝড়ে মরিচ, বোরো ধান, পটলসহ বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিসংখ্যান সংগ্রহে মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।’ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফছানা কাওছার বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান ও আমাদের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে কাজ করছেন।’ ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মাজহারুল ইসলাম সুজন ঝড়ে ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি, সহায়তা করা হবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও।’