শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজ আর মাদরাসায়  নিয়োগ পদ্ধতিতে থাকছে না শিক্ষক নিবন্ধন

দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজ আর মাদরাসায় নিয়োগ পদ্ধতিতে থাকছে না শিক্ষক নিবন্ধন

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ দেশব্যাপী বদলে যাচ্ছে বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি। শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে নয়; বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ হবে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে সরকারি কর্ম কমিশনের আদলে একটি কর্তৃপক্ষ। এ জন্য নতুন আইন তৈরির কাজ চলছে।

            বর্তমানে সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য পদের বিপরীতে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নিবন্ধন সনদ নিতে হয়। পরীক্ষা নিয়ে এই সনদ দেয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এরপর নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন নিয়ে শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে।

            বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন আইন তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এস এম মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, আইনটি পাস হলে শিক্ষক নিয়োগে নিবন্ধন সনদের প্রয়োজন হবে না। শুধু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের সুপারিশ করা যাবে।

            বর্তমানে দেশে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার। এগুলোর মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০ হাজার ৩১৬টি, কলেজ ২ হাজার ৬৬৪টি, আলিয়া মাদরাসা ৯ হাজার ২৯২টি। বাকিগুলো কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

            গত ১২ই ডিসেম্বর এনটিআরসিএর জন্য নতুন আইন তৈরি-সংক্রান্ত সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান।

            এনটিআরসিএ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, গত বছরের ২৮শে মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এনটিআরসিএ আইন, ২০০৫ সংশোধনের প্রস্তাব দেয়া হয়। আইনটি সংশোধন শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হলে ৩০ শতাংশের বেশি সংশোধনী থাকায় নতুন আইন তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর ‘বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগ সুপারিশ কর্তৃপক্ষ’ নামে নতুন আইনের খসড়া তৈরি করা হয়। খসড়াটি সংশোধনী শেষে চূড়ান্ত করে তা পাসের উদ্যোগ নেয়া হবে। নতুন আইন কার্যকর হলে এনটিআরসিএ বিলুপ্ত হবে। এর পরিবর্তে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আদলে ‘বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগ সুপারিশ কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হবে। এটি চালাবে ১৪ সদস্যের নির্বাহী বোর্ড।

            এনটিআরসি এর একাধিক কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগ সুপারিশ কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করবে। তবে নতুন আইন কার্যকর হতে দেড়-দুই বছর লাগবে। এ সময়ে আগের মতো নিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ হবে। তাঁরা আরও জানান, এখন শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের পর সুপারিশ পান। এতে অনূর্ধ্ব-৩৫ অথবা নিবন্ধন সনদের মেয়াদ ৩ বছর আছে, এমন প্রার্থীরা আবেদন করতে পারেন। এ কারণে অনেকে বঞ্চিত হন। কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বয়স উল্লেখ থাকবে বলে কাউকে বঞ্চিত হতে হবে না।

            বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবীর। তিনি বলেন, স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে যেন শিক্ষক নিয়োগ হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।

            এনটিআরসিএ এরই মধ্যে ১৭টি নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে। ১৮তম নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া চারটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গত ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ১৩ হাজার ৩১২ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে এনটিআরসিএ।

            জানা যায়, ২০০৫ সাল থেকে এনটিআরসিএ নিবন্ধন সনদ দিচ্ছে। তবে শুরুর ১০ বছর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির হাতে। ২০১৫ সালের ৩০শে ডিসেম্বর সরকার এতে পরিবর্তন আনে। এনটিআরসিএকে সনদ দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতাও দেয়া হয়।

            শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক অনুবিভাগ-২) মো. রবিউল ইসলাম আরো বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন আইন তৈরির কাজ চলছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে আইনটি পাসের জন্য তোলা হবে বলে আশা করছি।’ সুত্র: আজকের পত্রিকা

Share This