প্রেমের জালে ফেলে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া ৭ প্রতারক গ্রেপ্তার
ষ্টাফ রিপোর্টার\ প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে বø্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। প্রতারণার সময় তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিশাল অঙ্কের টাকা আদায় করে। এ ঘটনায় মূলহোতাসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গত শনিবার (৪ঠা মে) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- কুমিল্লা সদরের সুবর্ণপুর এলাকার সৈয়দ আব্দুর রউফের ছেলে সৈয়দ আয়াত উল্লাহ (৩৭), বালুতোপা গ্রামের মো. ইসহাক মিয়ার ছেলে ইমরান হোসেন (৪০), একই এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে মো. কবির হোসেন (২৮), বরুড়া উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মো. আব্দুল মালেকের ছেলে মো. মোজাম্মেল হক (৩৬), গালিমপুর গ্রামের মো. আলী আজগরের ছেলে মো. আব্দুর রহিম, চান্দিনা উপজেলার কেশরা গ্রামের মৃত শফিকুল ইসলামের মেয়ে তাসনুবা আক্তার (২৩), লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা গ্রামের মো. মোস্তফা কামালের ছেলে মো. সাখাওয়াত হোসেন (২৮) ও ফাঁদে ফেলা বাসার মালিক মোহাম্মদ কোভিদ হোসেন।
পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, প্রতারকচক্রটি টার্গেট করে লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা গ্রামের মো. মারুফকে (ছদ্মনাম)। এক পর্যায়ে চক্রের সদস্য তাসনুবার মাধ্যমে ভুক্তভোগীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা হয়। পরে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ভুক্তভোগীর সঙ্গে প্রতারক তাসনুবার অশ্লীল ও অনৈতিক কাজের ভিডিও চিত্র ধারণ করে। ধারণকৃত ভিডিও চিত্রের ভয় দেখিয়ে তারা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। পরে ডিবি ও সাংবাদিক পরিচয়ে আগমন ঘটে আরো কয়েকজন প্রতারকের। ভুক্তভোগীকে থানায় মামলা দেয়ার ও মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকচক্রটি।
পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে শনিবার রাত দেড়টায় আসামি সৈয়দ আয়াত উল্লাহকে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় টাউন হলের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে অলিখিত ৭টি স্ট্যাম্প, ভিকটিমের স্বাক্ষরিত ৭টি চেক, চাঁদাবাজির নগদ ২৪ হাজার টাকা এবং অপরাধে ব্যবহৃত একটি বাটন ফোনসেট উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীকে মোবাইল ফোনে কল করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাসনুবা আক্তার।
পরিকল্পনা করে ওই ব্যক্তিকে কুমিল্লা সদর উপজেলার বালুতোপা এলাকার কোভিদ হোসেনের বাসায় নিয়ে শারীরিক সম্পর্কের সময় ভিডিও চিত্র ধারণ করে। এ সময় ঘটনাস্থলেই ডিবি পুলিশ ও সাংবাদিকের উপস্থিতি দেখিয়ে শুরু হয় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের কৌশল। প্রতারণার ভিডিও ভুক্তভোগীর মোবাইলে পাঠিয়ে মোটা অরঙ্কর চাঁদা দাবি করে প্রতারকচক্র। সম্মানহানির কথা চিন্তা করে নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে প্রতারকচক্রকে ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা চাঁদা দেন তিনি। পরে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় এই প্রতারকচক্রকে। তারা এর আগেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানা গেছে।
সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মংনেথোয়াই মারমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক ও ডিবি) নাজমুল হাসান রাফি, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাজেস বড়–য়া প্রমুখ।