শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশের গত ১ মাসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস!

বাংলাদেশের গত ১ মাসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস!

            জান্নাতুল ফেরদাউস পুষ্প\  অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের এক বৈঠক গত সোমবার (১২ই আগষ্ট) বিকালে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের সময় বিকাল ৪টায় নির্ধারিত থাকায় বিকাল পৌণে ৪টায় (৩টা ৪৫ মিনিটে) বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা যমুনায় প্রবেশ করেন।

            উল্লেখ্য, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার পর কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে  এটাই ছিলো তাঁর সর্ব প্রথম বৈঠক।

            বিএনপি’র মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বার্তা সংস্থা বাসস’কে জানান, প্রধান উপদেষ্টা বিএনপির মহাসচিবকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তাঁর আমন্ত্রণে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যান এবং বেঠক করেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে এই বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

            এছাড়া, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নানা সহিংসতা, পত্রিকা আর ইন্টারনেট বন্ধ থাকাসহ গত এক মাসে সারাদেশে যা ঘটে গেলো, সেগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কিছু খন্ডচিত্র এখানে তুলে ধরা হলো।

            গত ১৭ই জুলাই বুধবার রাত থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় মোবাইল ইন্টারনেট। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয় পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর। সেই ইন্টারনেট ফিরতে শুরু করে ২৩শে জুলাই মঙ্গলবার রাতে।

ওদিকে, বিশ্বে বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত ১৯শে জুলাই শুক্রবার আরব আমিরাতের দুবাইসহ বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশের চলমান সংঘাত ও আন্দোলনের সমর্থনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে বাংলাদেশীরা বড় আকারে বিক্ষোভ করায় সে দেশের সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেট থেকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এ বিক্ষোভ আটক হয়েছেন ৫৭ বাংলাদেশি এবং তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়। আটক এই ৫৭ বাংলাদেশির মধ্যে ৫৩ জনকে ১০ বছরের  কারাদন্ড, ১ জনকে ১১ বছরের কারাদন্ড  এবং বাকি তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড  দিয়েছেন আদালত।

            ২৬শে জুলাই শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শুরু হয় কারফিউ, চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। বুধ ও বৃহস্পতিবার কারফিউ শিথিল থাকে পরদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

            ২৫শে জুলাই বৃহস্পতিবার বিকাল ও শুক্রবার দুপুরে মহাখালীর সেতু ভবনে আগুন দিয়ে ৫৫টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। লুটপাট করা হয়েছে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, টেলিভিশন ও আসবাবপত্র। পাশের বিআরটিএ ভবনেও আগুন দেওয়া হয় বৃহস্পতিবার বিকালে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভবনটির পঞ্চমতলা পর্যন্ত। সেদিন বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মহাখালীতেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। সেখানে ৫৩টি গাড়ি ও ১৩টি মোটরসাইকেল পুড়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবারেই রামপুরায় বিটিভি ভবনে আগুন দেয়া হয়। সেখানেও প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আগুন দেয়া হয়েছে মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভবনেও।

            ২৬শে জুলাই শুক্রবার মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ নম্বর স্টেশনে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এই দুই স্টেশন চালু হতে এক বছর বছর সময় লেগে যেতে পারে। একই দিন শুক্রবার বিকালে নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হয় ৮২৬ বন্দিকে। লুটপাট করা হয় ৮৫টি অস্ত্র এবং বিপুল সংখ্যক গুলি। ৩০শে জুলাই মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে শতাধিক বন্দি। ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে দুই ডজন অস্ত্র।

            কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে ২৬শে জুলাই শুক্রবার গভীর রাতে খিলগাঁও এলাকা থেকে তুলে নেয় সাদা পোশাকধারীরা। ২৮শে জুলাই রোববার ভোরে মুক্ত হওয়ার পর তিনি নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

            রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ২রা আগষ্ট শুক্রবার রাতে তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারীদের তিন নেতা। সেখানে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সহসমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম। বৈঠকে সরকারের তরফে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।

            বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেত্রী নিপুণ রায় চৌধুরী এবং গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুর গ্রেপ্তার হন।

এর পর সেতু ভবনে হামলার মামলায় আমীর খসরু, সাবেক ভিপি নূরসহ চারজন ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।

            এছাড়া, কক্সবাজার ও পার্বত্য তিন জেলায় বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়েছেন কয়েক হাজার পর্যটক। তারপর, বুধবার থেকে সোমবার পর্যন্ত ছয় দিনে দিনে ঢাকায় ৭১ মামলা হয়। এর মধ্যে নির্বাহী আদেশে ২১, ২২ ও ২৩শে জুলাই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে বিদেশিদের আশ্বস্ত করেছিলেন ড. হাছান মাহমুদ।

            তাছাড়া, মঙ্গলবার (২৩শে জুলাই) থেকে ঢাকা মহানগর ও জেলা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর জেলার কারফিউয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; অন্যান্য জেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসন।

            সোমবার (২২শে জুলাই) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীবৃন্দ। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মানুষের জানমালের রক্ষায় কারফিউ জারি এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এর পর ৪ দফা দাবি দিয়ে চলমান শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

            এতে করে কয়েক দিনের ভাঙচুরে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রায় এক হাজার কোটি টাকার স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৎকালীন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছিলেন, যে পরিমাণ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা অবর্ণনীয়; জনগণের সহযোগিতা পেলে আগের জায়গায় ফিরে আসতে পারব: বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে জানিয়েছিলেন তখনকার সেনাপ্রধানও।

            ওদিকে, নরসিংদী কারাগারের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন বিজিবি। ২৭শে জুলাই অনুষ্ঠেয় সব নির্বাচন স্থগিত করা হয়।

            অত:পর, সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী, সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা পুনর্বিন্যস্ত করে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেন সরকার, যাতে সব গ্রেডের নিয়োগে কোটা থাকছে মোট ৭ শতাংশ। এ ফাঁকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে মঙ্গলবার সাক্ষাৎ করে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান।

            ৩রা আগষ্ট শনিবার রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকার পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম। নাহিদ বলেন, আর এক মিনিটও এই সরকার থাকবে না। একদফা এক দাবি। এই সরকারের পদত্যাগ।

            এ ছাড়া সরকারের পদত্যাগ দাবিতে রোববার সারা দেশে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলন শুরু হবে বলেও সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়। এতে করে, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন হাজার হাজার মানুষ।  এ সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ী, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বাড্ডা, উত্তরা মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়। পরে বেলা দেড়টার দিক থেকে মানুষ রাস্তায় নেমে আসতে শুরু করেন।

            এর আগে অবশ্য খবর আসে যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আজ বেলা ২টায় জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে বিষয়টি  নিশ্চিত করা হয়। তারা বলেছে, সে সময় পর্যন্ত জনসাধারণকে সহিংসতা পরিহার করে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করা হলো।

            দেড়টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও চালু করা হয়, যা সকালে বন্ধ করা হয়েছিল। মোবাইল ইন্টারনেটও চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে বেলা পৌনে দুইটার দিকে জানা গিয়েছিলো।

            কিন্ত ৫ই আগষ্ট সোমবার বেলা আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাত্রা করে। এসময় তাঁর সঙ্গে তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাও ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেদিন তাঁরা হেলিকপ্টারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন।

            তবে, বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছিলেন যে, শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা গণভবন থেকে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। শেখ হাসিনা যাওয়ার আগে একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্ত তিনি সে সুযোগও পাননি। এতে করে তখন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সভাপতিত্বে অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গভবনে সেনাপ্রধান, নৌপ্রধান ও বিমান বাহিনীর প্রধান এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫ই আগস্ট (সোমবার) রাতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে সর্বসম্মতিক্রমে।

            বঙ্গভবন থেকে পাঠানো এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে খালেদা জিয়ার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এবং সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় আটককৃত সকল বন্দিকে মুক্তি দেয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়।।   সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন কোনভাবেই বিনষ্ট না হয় সে ব্যাপারেও সভায় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সভায় কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করা হয়। পাশাপাশি অনতিবিলম্বে একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্তও হয়।

            অত:পর, ৬ই আগষ্ট মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে শেখ হাসিনার শাসন আমলের সংসদ ভেঙ্গে  দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। সেদিন বিকেল তিনটার দিকে এই ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বলা হয়েছিল, ছাত্র-জনতার গণবিস্ফোরণের মুখে সোমবার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। এমন পরিস্থিতিতে তিন বাহিনী প্রধান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

            ওদিকে, দেশব্যাপী চলমান অস্বাভাবিক অশান্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ইউনিটের কর্মকর্তা ও ফোর্সকে ৮ই আগষ্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম।

            এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পুলিশের উপমহাপরিদর্শক মো. মাইনুল হাসান। সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে সরিয়ে তাঁকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এর বাইরে র‌্যাব-এর মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুর রহমান। মো. হারুন অর রশিদকে সরিয়ে তাঁকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

            তারপর, ৮ই আগষ্ট বৃহস্পতিবার নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ গ্রহণ করেছেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা। এই সরকারে ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১৬ জন উপদেষ্টা রাখা হয়েছে। একইদিন বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথমে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর অন্তর্বতীকালীন সরকারের বাকী ১৬ জন উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ বাক্য পাঠ করান। ১০ই আগষ্ট শনিবার নতুন করে সারা দেশে আরও ১৭৭ থানা সেবা কার্যক্রম শুরু করেছেন। একই দিন পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মুঠোফোনে পাঠানো খুদে বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছিলো। এতে করে পুলিশ সদর দপ্তর বলছিলেন, দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে বেলা ৩টা পর্যন্ত ৫৩৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মেট্রোপলিটনের ১১০টি থানার মধ্যে ৮৪টি এবং জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৪৫৪টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

            “ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে”- এ মন্তব্য করেছিলৈন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে মহাজাগরণের উন্মেষ ঘটিয়েছেন। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ফলে আমার কাঁধে যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তা আমি পালন করে যাব। ১৩ই আগষ্ট সোমবার তাকে দেয়া এক সংবর্ধনার জবাবে তিনি এসব মন্তব্য করেছিলেন।

            তখন, খুলনায় সেনাপ্রধান থাকাকালে তিনি বলেছিলেন, ‘পুলিশ বাহিনী যখন সুন্দরভাবে কার্যক্রম শুরু করবে, তখন আমরা সেনানিবাসে ফেরত যাবো।’ খুলনায় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন।

            সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘খুব শিগগির পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পুলিশ বাহিনী যখন আবার সুন্দরভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে, তখন আমরা সেনানিবাসে ফেরত যাবো। এতে করে শেষ রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশের ওপরে থানাগুলো কার্যক্রম শুরু করেছেন। আর ঢাকায় ৮৫ শতাংশের বেশি থানায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি আশাব্যঞ্জক।’ সোমবার বিকেলের দিকে খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় সেনাপ্রধান এ সব কথা বলেন। এর আগে তিনি খুলনা বিভাগীয় ও জেলার শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেন।

            প্রকাশ থাকে যে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতায় প্রথম মৃত্যু হয় ১৬ই জুলাই। এরপর বাড়তে থাকে সহিংসতা। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, গত ৫ই আগষ্ট পর্যন্ত এ আন্দোলনে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪৫০ জনের।

Share This