শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাজস্ব হারাচ্ছে সরকারঃ সেবা থেকে বঞ্চিত যাত্রীরা জনবল ও ট্রেন সংকটে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের ১৬ স্টেশন বন্ধ

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ জনবল ও ট্রেন সংকটে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় ১৬টি স্টেশন বন্ধ দীর্ঘদিন থেকে। এতে একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, অন্যদিকে যাত্রীরা সেবা থেকে রয়েছে বঞ্চিত।

            জানা গেছে, গত কয়েক বছরে লাকসাম থেকে নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও আখাউড়া রেলপথে ১৬টি স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ স্টেশনের আশপাশ দখল করে গড়ে উঠছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পাঁচটি স্টেশনকে আধুনিকায়ন করা হলেও ধুঁকছে জনবল সংকটে। তবে পূর্বাঞ্চল রেল বলছে দ্রæত চালু করা হবে স্টেশনগুলো।

            সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ধুলো জমেছে টেলিফোনে। যন্ত্রাংশে ধরেছে জং। দখল, দূষণে রেললাইন এবং স্টেশন প্ল­্যাটফরম। প্রবেশমুখে সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড। ডান পাশে মাছের আড়ত এবং বাম পাশে মাছ, মাংস, সবজি ও ফলমূলের খুচরা বাজার। এটি কুমিল্লার লাকসাম দৌলতগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের চিত্র। মালামাল ও যাত্রী ওঠানামায় দিনরাত সরগরম থাকা একসময়ের দৌলতগঞ্জ স্টেশনের সব কক্ষে এখন ঝুলছে তালা। স্টেশনের এমন ভগ্নদশায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।

            এদিকে লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথের নাথেরপেটুয়া স্টেশনটিও বন্ধ হওয়ার পথে। প্ল্যাটফরম দখলে নিচ্ছে মার্কেট কিংবা খাবার হোটেলসহ নানান ব্যবসা। বৃষ্টির যাত্রীছাউনি চুয়ে পড়ছে পানি। তবে এখানে মাস্টার থাকলেও তিনি অনেকটাই অসহায়। উপকূল এক্সপ্রেস নামে দিনে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু থাকলেও নেই টিকিটিং ব্যবস্থা। বিনা টিকিটে যাত্রী বহনে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এ পথের ১০টি স্টেশনেরই প্রায় একই অবস্থা। দৌলতগঞ্জ, খিলা, বিপুলাসার, মাইজদী, হরিনারায়ণপুর ও বজরা বন্ধ রয়েছে কাগজে-কলমে। এ পথের যাত্রীরা বলছেন, ট্রেন সংকটেই একে একে বন্ধ হচ্ছে স্টেশনগুলো। ট্রেন সংকট কাটিয়ে স্টেশনগুলো পুনরায় চালুর দাবি তাদের। মোশাররফ হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, দৌলতগঞ্জ স্টেশনে যে ডাবল রেললাইন ছিল, সেটা এখন বন্ধ। যাত্রীদের ভিড়ে মুখরিত ছিল স্টেশনটি। সে চিত্র এখন আর দেখা যায় না। জনৈক যাত্রী বলেন, এখন বন্ধ স্টেশনগুলোয় যাত্রীদের ভিড়ের বদলে দেখা যায় মাদকসেবীদের ভিড়। মিজানুর রহমান নামে আরেক যাত্রী বলেন, আমরা চাচ্ছি বন্ধ স্টেশনগুলো চালু হোক। তাহলে এ এলাকার যাতায়াতের সুবিধা হবে। শুধু লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথ নয়। কুমিল্লা অঞ্চলে বন্ধ রয়েছে ১৬টি রেল স্টেশন। এসব স্টেশনে লোকাল কিংবা আন্তঃনগর কোনো ট্রেনেরই যাত্রাবিরতি নেই। যেমন ময়নামতি রেলওয়ে স্টেশন। দৃষ্টিনন্দন স্টেশনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি টাকা। নির্মাণের ছয় বছরেও যাত্রীসেবায় আসতে না পারায় পরিণত হচ্ছে পরিত্যক্ত ভবনে।

            একই দশা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের আলীশ্বর ও নাওটি স্টেশনেরও। ভিআইপি গেস্টরুম, হলরুম, সিগন্যালিং রুম, স্টেশন মাস্টারের কক্ষসহ ৫ কক্ষ বিশিষ্ট এমন সুন্দর ও আধুনিক স্টেশন সচরাচর চোখে পড়ে না।

            কুমিল্লার মানবাধিকারকর্মী আলী আকবর মাসুম বলেন, চাঁদপুর, নোয়াখালী অঞ্চলে ট্রেনের যোগাযোগব্যবস্থা যতটা উন্নয়নের কথা ছিল তা হয়নি। লাকসাম থেকে চাঁদপুর ও নোয়াখালী রেলপথের স্টেশন বন্ধে জনবল ও ট্রেন সংকটের কথাই বলছেন রেল কর্তৃপক্ষ। দেশে নতুন ইঞ্জিন এলেই ট্রেন ও জনবল সংকট কাটিয়ে আবারও চালু হবে বন্ধ স্টেশনগুলো। কুমিল্লা রেলের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, এরই মধ্যে বেশকিছু ইঞ্জিন আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলো এলেই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে এই রুটে। পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম জানান, তাদের জনবল সংকট রয়েছে। নতুন লোকবল ও সহকারী স্টেশন মাস্টারদের প্রশিক্ষণ শেষেই গুরুত্ব বুঝে পর্যায়ক্রমে কুমিল্লা অঞ্চলের বন্ধ সব স্টেশন চালুর ব্যবস্থা করা হবে।

Share This

COMMENTS