বৃহস্পতিবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

<span class="entry-title-primary">লাকসাম-মনোহরগঞ্জ-নাঙ্গলকোটসহ জেলার ১৪ উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ</span> <span class="entry-subtitle">কুমিল্লায় শুধু কৃষি মৎস্য ও প্রাণী খাতে ক্ষতির পরিমাণ ১৬৫০ কোটি টাকা</span>

লাকসাম-মনোহরগঞ্জ-নাঙ্গলকোটসহ জেলার ১৪ উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ কুমিল্লায় শুধু কৃষি মৎস্য ও প্রাণী খাতে ক্ষতির পরিমাণ ১৬৫০ কোটি টাকা

২৯ Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ লাকসাম-মনোহরগঞ্জ -নাঙ্গলকোটসহ জেলার ১৪ উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ১০ লক্ষাধিকে পৌঁছেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অপূরনীয় ও অকল্পিত। অথচ, কৃৃৃষিশস্য, মৎস্য এবং গবাদি পশু পালনের ক্ষেত্রে কুমিল্লার মানুষ সব সময় এগিয়ে। কিন্তু এবারের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় এই তিনটি খাতে সম্মিলিতভাবে প্রায় ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি খাতে। এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৮৪৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে মৎস্য খাতে ক্ষতি ৪০৪ কোটি টাকা এবং প্রাণীসম্পদ খাতে ৩০৮ কোটি। সংশ্লিষ্ট তিনটি দফতর থেকে পৃথকভাবে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির এ তথ্য জানা গেছে।

            ভয়াবহ বন্যায় কুমিল্লা জেলার ১৪টি উপজেলা আক্রান্ত হলেও বাকি ৩টি উপজেলার ফসলের মাঠও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টানা ভারি বৃষ্টিপাতে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ৬৩ হাজার ৭৯৪ হেক্টর ফসলি জমি। এখন পর্যন্ত কুমিল্লা জেলাজুড়ে কৃষি খাতে ৮৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যা অতীতে কৃষি খাতের যেকোনো ক্ষতির চেয়ে কয়েকগুন বেশি।

            কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা জুড়ে মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছিল। বন্যায় ৬৩ হাজার ৭৯৪ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ফসলের মধ্যে ২২৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার রোপা আমন বীজতলা, ২৬৯ কোটি ৯৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকার রোপা আমন, ৪৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকার খরিপ শাকসবজি, ২৯৭ কোটি ৮৫ লাখ ৭২ হাজার টাকার রোপা আউশ এবং ৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকার আখ ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, বৃষ্টির পানি ও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির যে চিত্র এখন পর্যন্ত উঠে এসেছে, এটি প্রাথমিক তালিকা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

            মাছ উৎপাদনে কুমিল্লা জেলা বাংলাদেশে তৃৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এখানে নদ-নদী, পুকুর, দিঘী, জলাশয় ও প্লাবন ভূমিতে জেলার চাহিদার দ্বিগুণের বেশি মাছ উৎপাদন হয়। কিন্তু এবারের চলমান বন্যায় মৎস্য খাতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

            মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে প্রাথমিকভাবে এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৪০৪ কোটি টাকা নিরূপন করা হয়েছে। কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলমান বন্যায় কুমিল্লা জেলায় ৫ হাজার ৮৩৫ দশমিক ৬ এক হেক্টর আয়তনের মোট ২৩ হাজার ৪২টি খামার বা পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরুড়া উপজেলায়। এখানে মোট ৩ হাজার ৭৪৯টি মাছের খামার বা পুকুর বিনষ্ট হয়েছে।

অন্যান্য উপজেলার মধ্যে ব্রাহ্মণপাড়ায় ১ হাজার ১০টি, বুড়িচংয়ে ১ হাজার ৮০০টি, নাঙ্গলকোটে ৩ হাজার ১৬২টি, লালমাইয়ে ২ হাজার ৭টি, মনোহরগঞ্জে ২ হাজার ৩৫০টি, আদর্শ সদরে ২ হাজার ৪৫২টি, মুরাদনগরে ৮০০টি, চান্দিনায় ২০০টি, লাকসামে ২ হাজার ৫০০টি, তিতাসে ২২টি, দেবিদ্বারে ৪০০টি, চৌদ্দগ্রামে ১ হাজার ৮৪০টি এবং সদর দক্ষিণে ৬৬০টি মাছের খামার বা পুকুর পানিতে তলিয়েছে।

            এছাড়াও সদরের জাঙ্গালিয়া, দেবিদ্বার, চান্দিনা, বুড়িচং, লাকসাম, হোমনা এবং চৌদ্দগ্রামে মোট ২ দশমিক ৬৯ হেক্টর আয়তনের মৎস্যবীজ খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

            জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, বন্যায় মৎস্য খাতে ৪০৪ কোটি টাকার ক্ষতির পরিমান প্রাথমিকভাবে তালিকা করা হয়েছে। পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা যাবে।

            এদিকে কুমিল্লা জেলায় কৃষি ও মৎস্য খাতের পাশাপাশি প্রাণীসম্পদেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলাজুড়ে এ খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৩০৮ কোটি টাকা। যা আরও বাড়তে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

            প্রাণীসম্পদ কার্যালয় জানিয়েছে, ভয়াবহ বন্যায় জেলাজুড়ে ৪ হাজার ২১৩টি গবাদিপশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২ লাখ ৯ হাজার ৯১৪টি বিভিন্ন শ্রেণির গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে। হাঁস-মুরগির মধ্যে ২ হাজার ২১৮টি খামারে ৩১ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৯টি হাঁস-মুরগির মধ্যে ২১ লাখ ৭ হাজার ৩৫৩টি মুরগী, ৩১ হাজার ৬৯৩টি হাঁস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছে ১০ লাখ ২২ হাজার ৩৪২টি মুরগী এবং ২ হাজার ১৬০টি হাঁস। প্লাবিত হয়েছে ২ হাজার ১ দশমিক ৫ একর চারণভূমি। খাদ্যের মধ্যে ২ হাজার ৬০৩ টন পশুপাখির দানাদার খাবার বিনষ্ট হয়েছে। ৫৫ হাজার ৪৩৪ টন পশুপাখির খড় বিনষ্ট হয়েছে। এছাড়াও ৫৮ হাজার ৭৫১ টন ঘাস বিনষ্ট হয়েছে।

            জেলা প্রানীসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, কুমিল্লায় বন্যায় প্রাণসিম্পদে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। আমরা ৩০৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি।

   এদিকে, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলাই এখনো বানের পানিতে নিমজ্জিত। পানিবন্দি অন্তত ১০ লাখ মানুষ। চারদিকে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগের চিত্র। ত্রাণসামগ্রী ও সুপেয় পানির অভাবে তাদের ভোগান্তির অন্ত নেই। আকস্মিক বন্যার আঘাতে প্রথমে প্লাবিত হয় জেলার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও লাকসাম উপজেলা। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য উপজেলা প্লাবিত হয়। লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা দু’টিতে কমপক্ষে ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধি এবং ১৭২টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩০ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার্তদের সামগ্রিক সেবা প্রদানে উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পানিবন্ধিদের উদ্ধার, আশ্রয়, খাবার ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করছেন।

            মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজালা রানী চাকমা জানান, এ উপজেলার মানুষ অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে খারাপ সময় পার করছে। বন্যার্তদের পাশে উপজেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়তা মূলক কাজ করে যাচ্ছেন। তবে আমি সবাইকে অনুরোধ করছি- যে কোন ব্যাক্তি বা সংগঠন যেকোন সহযোগিতা করেন না কেন অবশ্যই আমাদেরকে একটু অবগত করবেন। পাশাপাশি এই দূর্যোগ সময়ে সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে তিনি বন্যার্তদের পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান।

            অন্যদিকে, আকস্মিক বন্যায় লাকসাম উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার পর পানি আস্তে আস্তে কমতে শুরু করলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এখনো ত্রাণের সংকট রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণের গাড়ি দেখলেই ছুটে যাচ্ছে দুর্ভোগে থাকা বন্যার্তরা। উপজেলায় এখনো দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

         সংবাদদতাতা আবদুল মান্নান মজুমদার জানান, লাকসাম উপজেলার লাকসাম পূর্ব ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে বণ্যার পানি ঢুকেছে। ইউনিয়নের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে পানিবন্দী নারী-পুরুষ আশ্রয় নিয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, মোমবাতি ও কয়েল বিতরণ করা হয়েছে। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল হাই সিদ্দিকী, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মাজহারুল ইসলাম, লাকসাম পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ আলী আহাম্মদ, ইউপি সচিব মোঃ মহিউদ্দিন, প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

            লাকসাম উপজেলার ৪নং কান্দিরপাড় ইউনিয়নের আবেদ নগর ছুফী আবেদিয়া ডি এইচ দাখিল (প্রস্তাবিত আলিম) মাদ্রাসায় বণ্যাকবলিতদের আশ্রয়  কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ কেন্দ্রে এলাকার নারী-পুরুষ, শিশুসহ ২৫০ জন আশ্রয়  গ্রহণ করেছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বাংলাদেশ লাকসাম শাখার নেতৃবৃন্দ এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন আশ্রয় কেন্দ্রে খাবার বিতরণ ও বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছেন। এখানে সার্বিক তত্ত¡াবধানে দায়িত্ব পালন করছেন আলহাজ মুফতি এম এ তাহের আবেদী প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আবেদ নগর কমপ্লেক্স। এছাড়া, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বাংলাদেশ লাকসাম শাখার পক্ষ থেকে লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন।

            লাকসাম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, বন্যার্তদের জন্য এই উপজেলায় ৪০ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ টাকা নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তবে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।

            লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আবদুল হাই সিদ্দিকী জানান, গোমতীর পানির প্রবাহের প্রভাব পড়েছিলো লাকসাম এবং পার্শ্ববর্তী মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলায়। তবে এখন উন্নতির দিকে। ধীরগতিতে হলেও পানি কমতে শুরু করেছে। আর বৃষ্টি না হলে  পানি কমে যাবে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ নিজ ঘরে ফিরতে পারবে।

            নাঙ্গলকোট উপজেলা সংবাদদাতা তাজুল ইসলাম জানান, নাঙ্গলকোটের কিছু এলাকায় পানি কমতে শুরু করলেও অনেক এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার রায়কোট উত্তর ও মৌকরা ইউনিয়নে পানিতে ডুবে ২ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অনেক এলাকায় অতিরিক্ত পানির কারণে উদ্ধারকারী, ত্রাণ বিতরণকারী, মেডিকেল টিম ওই সকল এলাকায় পৌঁছাতে কষ্ট হচ্ছ। ফলে কিছু এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, জরুরী ঔষধ ও খাদ্য সংকট রয়েছে। সংকটাপন্ন এলাকাগুলো হলো, রায়কোট উত্তর, রায়কোট দক্ষিণ, মৌকারা, ঢালুয়া, বক্সগঞ্জ ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল।

            উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকি বলেন, নাঙ্গলকোটে ত্রাণ সরবরাহে কিছুটা সংকট আছে, আমরা সেটা স্বীকার করছি। এই উপজেলার কিছু জায়গায় একেবারেই পৌঁছানো যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে তাদের কাছে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার।’ আর যে সকল এলাকায় এখনো জরুরী ঔষধ, বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট রয়েছে ওই এলাকাগুলোতে ত্রাণ বিতরণকারী ও মেডিকেল টিমের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছি। এছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়নে পরিষদের মাধ্যমে চালসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছি।

            জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ১৪ উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। তবে স্থানীয়ভাবে ধারণা করা হচ্ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা আরও বেশি। বুড়িচংয়ে এখনো লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এরিমধ্যে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। এ উপজেলায় বর্তমানে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার।

            কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, জেলার ১৪টি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় ৯ লাখ ৫১ হাজার ১০৯ জন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। আর আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন ৬৬ হাজার ৯৬৬ জন। জেলার বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর দুর্গত এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে শুকনা খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণও অব্যাহত রয়েছে।       কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান জানান, উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবাহ কমে এমশঃ নি¤œাঞ্চলের পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।

            উল্লেখ্য, চলতি সেপ্টেম্বর মাসেও দেশের কিছু অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে এর মধ্যেও এক থেকে দু’টি মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

            চলতি বছর বর্ষার শুরুতে জুনের দ্বিতীয়ার্ধে দেশে ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে বন্যার কবলে পড়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চল। ঈদের উৎসবের আগে ও পরে দুই সপ্তাহ দুর্ভোগে কাটে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ আশপাশের জেলার বাসিন্দাদের। সেসময় উত্তরাঞ্চলেও পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। উজানের ঢলে জুলাইয়ের শুরুতেও দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। এর ফলে প্লাবিত হয় অনেক গ্রাম।

            আর অতি ভারি বৃষ্টির পাশাপাশি ভারত থেকেও নেমে আসা তীব্র ঢলের কারণে গত ২০শে আগস্ট থেকে দেশের দক্ষিণ ও উত্তর পূর্বাংশের ১১ জেলায় মারাত্মক বন্যা দেখা দেয়।

            সর্বশেষ, ১লা সেপ্টেম্বর (রবিবার) আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দুই-তিন দিন মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে তিন-পাঁচ দিন হালকা বজ্রঝড় হতে পারে।

            এ মাসে এক থেকে দু’টি মৃদু তাপপ্রবাহ (৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি থাকতে পারে। এছাড়াও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু জায়গায় ফের স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অফিস।

Share This