শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সম্পাদকীয় লাকসাম, কুমিল্লা ঃ বুধবার, ৩১শে জানুয়ারি ২০২৪ইং মাদককে না বলুন

            সামাজিক বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাদক। সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিও মাদক আসা, বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ করতে পারছে না। বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। কিশোর-তরুণদের কাছে মাদক সহজলভ্য হয়ে উঠছে। তরুণী-কিশোরীদের মধ্যেও এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

            ঢাকা মহানগর পুলিশের তথ্য নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, মহানগরীর প্রতিটি থানা এলাকায় জমজমাট মাদক ব্যবসা চলছে। পাঁচ শতাধিক স্থানে প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য বিক্রি করা হচ্ছে। ডিএমপির আটটি ক্রাইম বিভাগের ৫০টি থানায় গত বছর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১২ হাজারের বেশি মামলা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে গড়ে প্রতিদিন ৩৫টি করে মাদক মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার বেশির ভাগ আসামি গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে এসে তারা একই অপরাধে জড়াচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে ছয়জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জানতে পারে, তারা এর আগে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তিকে অন্তত ৫০ বার গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৩১টি মামলা রয়েছে। এক নারী মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তেজগাঁওয়ের বিভিন্ন স্থানে মাদকদ্রব্য বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। প্রত্যেকে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে বেরিয়ে আসেন। স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যও পরোক্ষভাবে মাদক ব্যবসায় জড়িত।

            শুধু রাজধানী ঢাকা নয়; প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যায়। তরুণসমাজে মাদকাসক্তি ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে মাদক সিন্ডিকেট। মাদকাসক্তরাও জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। মাদকের প্রভাব সামাজিক বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সমাজ ক্রমেই পঙ্গু হয়ে যাবে, সব উন্নয়ন প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই মাদকের এই বিস্তার নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় চলে যাওয়ার আগেই সর্বাত্মকভাবে তা প্রতিরোধের উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ মাদকের অপব্যবহার শুধু মাদকেই সীমিত থাকে না, আরো বহু অপরাধের কারণ হয়। অন্যদিকে মাদকসেবীরা যেমন পরিবারের জন্য, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

            দেশে মাদকের প্রায় সবটাই আসে বাইরে থেকে অবৈধ পথে। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমেই কঠোরভাবে মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। মাদকসংক্রান্ত মামলাগুলো ঝুলে থাকে, অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। তাদের জন্য দ্রæত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

            মাদকের বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অন্যান্য অপরাধও। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে বাড়ছে খুনাখুনি। মাদকের অর্থ সংগ্রহের জন্য কিশোর-তরুণরা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আবার সুযোগসন্ধানীরা সামান্য অর্থের বিনিময়ে মাদকাসক্তদের দিয়ে নানা অপরাধ করিয়ে নিচ্ছে। মাদক ব্যবসা বন্ধ করা না গেলে সামাজিক-অর্থনৈতিক সব ধরনের স্থিতিই বিঘিœত হবে। তাই মাদকের বিস্তার রোধে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। চালাতে হবে অভিযান। মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের মুখোমুখি করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে মাদকের বিস্তার রোধ করা যাবে না। সব ধরনের মাদক প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

Share This