শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সহমর্মিতা শিক্ষা দিতে আসে রমজান

সহমর্মিতা শিক্ষা দিতে আসে রমজান

            অধ্যক্ষ মোঃ ইয়াছিন মজুমদার\ আমি আমার মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গক্রমে জিজ্ঞাসা করলাম আজ ভোর রাতে গোশত অথবা মাছ দিয়ে রান্না করা তরকারি দিয়ে ভাত খাওয়া ছাড়া কেউ আছো কিনা? আমার ধারণা অন্তত রোজার মাসে সেহরিতে ছোট মাছের তরকারি হলেও না খেয়ে শুধু নিরামিষ বা একেবারে দুর্বল তরকারি দিয়ে কেউ সেহরি খায় না। কিন্তু পাঁচ জন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে গেল। একজনের পরিবারে শুধু আলুভর্তা ও ডাল, আরেক জনের করলাভাজি ও ডাল, দু’জন শুধু ডিম, আরেকজন সব্জি। পরে বুঝতে পারলাম এ রকম আরো আছে কিন্তু লজ্জা মনে করে হয়তো প্রকাশ করেনি। গত এসএসসি পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থী সকাল বেলায় হেলেনছার শাক কুড়িয়ে এনে দেয়ার পর মা তা রান্না করে দেয় তা খেয়েই সে পরীক্ষা দিতে যায়। ক্ষুধার জ্বালা অভাবীর অভাব অনুভব করে অভাবি মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া রোজার শিক্ষা। নবী সঃ বলেছেন যে তৃপ্তি সহকারে খায় আর তার প্রতিবেশি ক্ষুধার্ত থাকে সে আমার উম্মত নয়। সাধারণত যাদের পড়ার খরচ চালানোর মতো সামর্থ্য আছে তারা লেখা পড়া করে। একেবারে হতদরিদ্র যারা তারা শিশুদেরকেও কাজে লাগিয়ে দেয়। ৮ম শ্রেণীতে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের পরিবারের যদি এ অবস্থা হয় তাহলে সারা দেশে কত মানুষ অভাবে দিনযাপন করছে তা চিন্তা করুন। পত্র পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী বর্তমান সরকার ক্ষমতায় যখন আসে তখন মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ ছিল ৬ হাজার টাকা, বর্তমানে সে ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে মাথাপিছু এক লাখ বিশ হাজার টাকা। বৈদেশিক ঋণ নিয়ে উন্নয়ন করা হয়। সে ঋণ পরিশোধ করতে রিজার্ভ তথা ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে পণ্য আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় এলসি খোলা যাচ্ছে না এবং আমদানি কম হওয়ায় পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে সাথে ভ্যাট ট্যাক্স বৃদ্ধি, সিন্ডিকেট করে মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তৈলের মূল্যবৃদ্ধি, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ইত্যাদি কারণে জণগণ অভাবে পড়ছে। রমজান সহমর্মিতার মাস। সামর্থ্যবানরা অন্তত রমজানে আপনার এলাকার অভাবীদের খোঁজ নিন, তাদের প্রতি সহমর্মিতা হোন, তাদের সহযোগিতা করুন।

            অপরদিকে, মিডিয়ায় দেখা যায় গাজায় মুসলিম শিশুরা ক্ষুধার জ্বালায় ঘাস চিবিয়ে খাচ্ছে। ত্রাণের একটি রুটির জন্য কাড়াকাড়ি করছে। ইসরাইলের বর্বর ইহুদিরা বোমা মেরে তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে,  প্রায় পরিবারের কেউ না কেউ মারা গেছে, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। যারা বেঁচে আছে তাদের খাদ্য বাসস্থান পানি, বিদ্যুৎ, রান্নার সামগ্রী কিছুই নেই। তাদেরও রমজান চলছে, তারা কিভাবে রোজা রাখছে কল্পনাও করা যায় না। নবী সঃ বলেছেন, সারা বিশ্ব মুসলিম একটি দেহের মতো, দেহের কোন অংশে আঘাত পেলে সারা দেহে ব্যথা অনুভব হয়,  তেমনি বিশ্বের কোন প্রান্তে কোন মুসলিম অসুবিধা ভোগ করলে সকল মুসলিম তা অনুভব করবে, যথাসাধ্য তাদের সহযোগিতা করবে এটাই ঈমানের দাবি।

লেখকঃ অধ্যক্ষ, ফুলগাঁও ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, লাকসাম, কুমিল্লা। মোবাইলঃ ০১৯৭১-৮৬৪৫৮৯

Share This

COMMENTS