রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সোনাইমুড়ীতে গ্রামীণ সড়ক  নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

সোনাইমুড়ীতে গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

Views

            নিজস্ব প্রতিনিধি\ সোনাইমুড়ী উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অধীন গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে গ্রামীণ রাস্তাসমূহ সংস্কার ও নির্মাণে সরকারি দরপত্রে উল্লিখিত নির্মাণসামগ্রী (ইট, খোয়া, বালি, পাথর ইত্যাদি) বিধি মোতাবেক ব্যবহার না করে অফিস কমিশন বাণিজ্যের ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাম সর্বস্ব ও দায়সারা কাজের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী সোনাইমুড়ী অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৫% কমিশনের বিনিময়ে ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদেরকে টাকার বিনিময় ম্যানেজ করে জাতীয় অর্থের শতভাগ লুটেপুটে সর্বনাশ করছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সমূহের স্বত্বাধিকারীদের বেশির ভাগই সরকারদলীয় হওয়ায় রাজনৈতিক প্রভাবে এহেন জবাবদিহিতা হীন দায়সারা কাজ করে জনগণের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

            সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে গ্রেটার নোয়াখালী প্রকল্প (জেএনপি) থেকে প্রায় ১৭টি গ্রামীণ সড়ক পাকা করার জন্য দরপত্র আহ্বান করে। এর মধ্যে নাটেশ্বর ইউনিয়নে ৪টি, অম্বর নগর ইউনিয়নে ১টি, বারগাঁও ইউনিয়নে ২টি, বজরা ইউনিয়নে ২টি, সোনাপুর ইউনিয়নে ৩টি, জয়াগে ২টি ও আমিশাপাড়া ইউনিয়নে ১টি সড়ক উন্নয়ন কাজে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অসচ্ছতা হয়েছে। যে কারণে নির্ধারিত সময়ের ৫ মাস বিলম্বে ঠিকাদারের অনুকূলে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার পরেও বিভিন্ন গড়িমশি, কালক্ষেপণে অধিকাংশ সড়কে বর্ষা মৌসুমে বক্স কাটিং করে কাজে বিলম্বিত করায় জন দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের বক্স কাটার পর বেডে (সাবগ্রেড ও আইএসজি) যথাযথ এবং আর এ স্যান্ড ফিলিং করার সময় রোলার ব্যবহার ও রোলিং কাজ করেনি। বিধি মোতাবেক ১ নম্বর ইট, পিকেট ইটের খোয়া ব্যবহার করার কথা থাকলেও ব্যবহার করা হয়েছে ইট ভাটার বাদ পড়া কমদামি ও নিম্নমানের ইট ও খোয়া।

এছাড়া ৩৮ মিলিমিটার ডাউন মাপের খোয়ার স্থানে ব্যবহার করা হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৬ মিলিমিটার আয়তনের খোয়ার সঙ্গে আধলা ইট দিয়ে রোলিং করে ঢেকে দেয়া হচ্ছে পুরো কার্পেটিংয়ের নিম্নাংশ। বিভিন্ন স্থানে রাস্তার গাইড ওয়ালগুলো করা হয়েছে যেনতেনভাবে। কোনো প্রকার বেইজমেন্ট ছাড়া কাদা মাটির উপর বালি ও সামান্য পরিমাণ সিমেন্ট ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অনিয়মের বিষয়ে স্থানীয় একাধিক ঠিকাদার বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরের কর্মকর্তারা ১৫% কমিশন ছাড়া ফাইল সই করেন না, যে কারণে ঠিকাদাররা সঠিকভাবে কাজ সমাপ্ত করতে পারেনা।

            এ ঘটনায় সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রকৌশলী ইমদাদুল হক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে অনিয়ম, দায়সারা গোছের হওয়ায় ঠিকাদারদের বার বার সতর্ক করার পরও অজ্ঞাত কারণে ও নেপথ্যে থাকা কোন খুঁটির জোরে ঠিকাদাররা দাপ্তরিক কোনো আদেশ মানছে না। কাজ তদারকির জন্য ২-৩ জনকে প্রতিনিয়ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অনিয়মের বিষয়ে মুঠোফোনে নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) আজহার উদ্দিনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন, কাজে কোথাও অনিয়ম হচ্ছে না। যে সকল মালামাল ব্যবহার হচ্ছে তার গুণগত মানের দিক থেকে বিশ্বের এক নম্বর।

Share This