রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত  বদলাচ্ছে পুলিশের পোশাক

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছে পুলিশের পোশাক

Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ বদলে যাচ্ছে পুলিশের বর্তমান পোশাক এবং লোগো। অল্প সময়ের মধ্যে নতুন পোশাক পাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা। গত রোববার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের নির্বিচার গুলি চালানো, লাঠিচার্জ এবং পুলিশের ওপর ব্যাপকভাবে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। তবে নতুন পোশাকের রং ও ডিজাইন কী হবে এবং লোগোতে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে তা চূড়ান্ত হয়নি। ওই বৈঠকে পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টাদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

            এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এবং বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক পুলিশ সদস্য। ওই বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে ১১ দফা দাবি জানানো হয়। এছাড়া বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে হতাহতের ঘটনায় দায়ী এবং নির্দেশদাতা কারা তা তদন্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা এবং মামলা দায়েরের সঙ্গে জড়িত কারা তাও তদন্ত করতে বলা হয়েছে। ওই ঘটনায় ওসিকে ইতোমধ্যে সাসপেন্ডও করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

            পুলিশের পোশাক ও লোগো বদলির বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পুলিশের পোশাক ও লোগা পরিবর্তন হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিবর্তন হবে। পুলিশের অনেকের মন খারাপ, এই পোশাক নিয়ে তারা বের হতে চান না। পোশাকের রং ঠিক হয়নি। সেটা আলোচনা করে নির্ধারণ করা হবে।’ পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি পুলিশ কমিশন গঠন হওয়া উচিত। কমিশনের আওতায় পুলিশ ফাংশন করবে, কোনো রাজনৈতিক দলের নিচে নয়। রাজনৈতিক দল পুলিশকে অপব্যবহার করেছেন।

            ওই বৈঠকে অংশ নেয়া পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধি কনস্টেবল সোয়াইবুর রহমান বলেন, আমি পুলিশ সংস্কারের ডাক দিয়েছিলাম। এতে পুলিশের সব ইউনিট সাড়া দিয়েছে। তারা সাড়া দেয়ায় পুলিশের সংস্কার সম্ভব হচ্ছে। নইলে পুলিশ এখনো পরাধীন থাকত। বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, উপদেষ্টা মহোদয় আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, অবিলম্বে পুলিশের পোশাক পরিবর্তন হবে। যত দ্রæত সম্ভব আমাদের নতুন পোশাক চলে আসবে। তখন নতুন পোশাক পরিধান করে আমরা ডিউটি করব। এখন আমরা সবাই নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দেব।

            ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ই আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ওইদিনই তিনি ও তার বোন শেখ রেহানা ভারতে পালিয়ে যান। গত বৃহস্পতিবার শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টারা শপথ নেন। শপথ নেয়ার পর প্রথম সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। পুলিশ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ওই বৈঠকে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাংগীর হোসেন, পুলিশের আইজি ময়নুল ইসলাম এবং বিজিবি, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

            বৈঠকের পর ড. এম সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনার পর পুলিশের মনোবল নিচু ছিল এবং তাদের কিছু দাবি-দাওয়া ছিল। সেসব বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের দাবি-দাওয়াগুলো পড়েছি। সেখানে অনেক যৌক্তিক দাবি আছে। কিছু দাবি দীর্ঘমেয়াদি এবং কিছু দাবি স্বল্পমেয়াদে পূরণ করা সম্ভব। আমি তাদের প্রতিশ্রæতি দিয়েছি, সবকিছু আমরা দেখব। কিছু দাবি এখনই পূরণ করা যাবে, কিছু পূরণে দীর্ঘ সময় লাগবে। তিনি বলেন, পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশের যতটা দোষ, তার চেয়ে বেশি দোষ হচ্ছে রাজনৈতিক পর্যায় থেকে যারা পুলিশকে ওইসব কাজ করতে কমান্ড (নির্দেশ) দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি। বিষয়টি নিয়ে ক্যাবিনেটেও আলোচনা করব। তিনি আরও বলেন, যেসব পুলিশ এতদিন মাঠে নামেননি, তারা (পুলিশ সদস্যরা) থানায় থাকার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। আমি নাগরিকদের কাছে অনুরোধ করছি, পুলিশের গায়ে হাত দেবেন না। পুলিশ না থাকলে নাগরিকরা নিরাপদ নন। আমরা কোনো অন্যায়কারীকে ছাড় দেব না। আমি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও বলেছে, পুলিশের সঙ্গে আমাদের বিরোধ নেই। যা হয়েছে তা হয়ে গেছে। পুলিশ সদস্যদের ডিউটি করার অনুরোধ করছি।

            পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানরা দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন। তারা কাজে যোগ দিচ্ছেন না-তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এটা নিয়ে সবাই বলেছেন যে যার জায়গায় কাজে যোগ দেবেন। তাদের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে তা দেখার মালিক সরকার। কেউ অন্যায় করলে তদন্ত হবে, যতটুকু শাস্তি হওয়ার তা হবে। তিনি বলেন, রংপুরে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর মামলা দায়েরে যারা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। থানার ওসিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বাকিদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। দু-একদিনের মধ্যে জানতে পারবেন।

            পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হুকুমের আসামি বলে একটা কথা আছে। যে হাইকমান্ড পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছেন তাদেরও হাইকমান্ড ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চেয়ারেও হাইকমান্ড বসেছিলেন। তখন তিনি কী করেছেন? পুলিশ সদস্যদের দোষ দেওয়ার আগে আমি তাকে দোষ দেব। হাইকমান্ডের আদেশ না মানলে পুলিশের চাকরি থাকে না।

            ওই বৈঠকে অংশ নেয়া ঢাকা সিআইডির পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম বলেন, পুলিশের অনেক অর্জন আছে। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কারণে ওই অর্জন ¤øান হয়ে যায়। সেটা যাতে না হয় সেজন্য স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি ছিল। আমরা পুলিশকে স্বপ্নের বাহিনীতে রূপান্তর করতে চাই। আমাদের চাওয়া থেকে বেশি আশ্বাস পেয়েছি। তিনি বলেন, পুলিশ সদর দপ্তরের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আমাদের ১১ দফা দাবি যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেবে।

            পুলিশের ১১ দফা দাবির মধ্যে আরও আছে-সব পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যেসব ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসার ও দুষ্কৃতকারীর কারণে পুলিশ সদস্য ও সাধারণ ছাত্র-জনতা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের গ্রেফতার করে অবিলম্বে প্রচলিত আইনে বিচার করতে হবে। চলমান সহিংসতায় যেসব পুলিশ সদস্য আহত ও নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন থেকে বিরত ছিলেন এবং চলমান পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না মর্মে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে লিখিত আদেশের পরিপত্র জারি করতে হবে। নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতিতে বৈষম্য দূর করতে হবে। নায়েক পদবিকে ১৪তম গ্রেড এবং এএসআইদের ১২তম গ্রেডে রূপান্তর করতে হবে। পুলিশ পরিদর্শক নবম গ্রেড থেকে এএসপি নবম গ্রেডের মধ্যে যে বৈষম্য তা নিরসন করে উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে। সব পদে সর্বোচ্চ ছয় বছরের মধ্যে পদোন্নতির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ সদস্যদের অন্যান্য সংস্থার চাকরির মতো শ্রম আইন অনুযায়ী আট ঘণ্টা কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধ প্রমাণিত ও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো পুলিশ সদস্যকে পুলিশ অফিসার্স স্পেশাল অর্ডিন্যান্স এবং ডিএমপি অধ্যাদেশ ১৯৭৬ অনুযায়ী চাকরিচ্যুত করা যাবে না।

Share This

COMMENTS