শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য বরুড়ার সোনাইমুড়ি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল এখন ভুতুড়ে বাড়ি  ৩ লক্ষাধিক জনগণের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা অনিশ্চিয়তায়

৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য বরুড়ার সোনাইমুড়ি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল এখন ভুতুড়ে বাড়ি ৩ লক্ষাধিক জনগণের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা অনিশ্চিয়তায়

            নিজস্ব প্রতিনিধি\ কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থিত আদ্রা ইউনিয়নের সোনাইমুড়ি গ্রাম। চারিদিকে সবুজ শ্যামলিমায় ভরা মনোরম পরিবেশ। আর এখানেই গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০০৩ সালের দিকে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরে ২০ শয্যার হাসপাতাল নিমার্ণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। হাসপাতালটির প্রায় ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্নের পর হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে পড়ে নির্মাণ কাজ। সেই থেকে ২০ বছর ধরে হাসপাতালটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ভবনের গায়ে জন্মেছে আগাছা। নির্মাণ কাজ দীর্ঘ বছর ধরে বন্ধ থাকায় স্থাপনাগুলোর ভেতরের-বাইরের দেওয়াল ও ছাদের আস্তর খসে পড়ে প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। চুরি হয়ে গেছে নির্মাণ সামগ্রীও। সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকার এই প্রকল্প এখন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। সোনাইমুড়ি গ্রামসহ আশপাশের পাঁচটি ইউনিয়নের লাখো মানুষের দাবি অবিলম্বে হাসপাতালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে জনগণের সেবায় তা চালু করা হোক।

            জানা গেছে, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থিত আদ্রা ইউনিয়নের উত্তরে রয়েছে আড্ডা ইউনিয়ন, পূর্বে ভাউকসার ইউনিয়ন, দক্ষিণে পয়ালগাছা ইউনিয়ন এবং পশ্চিমে চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার আশরাফপুর ইউনিয়ন। এই পাঁচটি ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার ৩ লক্ষাধিক জনগণের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রয়াত এ কে এম আবু তাহের আদ্রা ইউনিয়নের উন্নত যাতায়াতসমৃদ্ধ সোনাইমুড়ি এলাকায় একটি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এরপর প্রকল্প গ্রহণ করার মাধ্যমে সেখানে নির্মাণ করা হয় হাসপাতালের ২ তলা ও এক তলাবিশিষ্ট বিশাল আয়তনের একাধিক ভবন। এরপর ২০০৬ সালের দিকে প্রায় ৭০ ভাগ সম্পন্নের পর হঠাৎ করেই নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন থেকেই হাসপাতালের জন্য নির্মিত ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।

            আদ্রা, সোনাইমুড়ি, নলুয়া, রাজাপুর গ্রামের লোকজনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তারা জানান, সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থব্যয়ে নির্মিত হাসপাতালটির স্থাপনাগুলো জনগণের ন্যূণতম কোনো কাজে আসছে না। জনবল না থাকায় তার কার্যক্রমও চলছে না। নিরাপত্তাপ্রহরী না থাকায় হাসপাতাল আঙ্গিনায় এখন গরু-ছাগল চড়ে। ভবনের দরজা-জানালার কাঠ, ইট-বালুসহ নির্মাণ সামগ্রীর অধিকাংশই চুরি হয়ে গেছে। দিনে-রাতে সেখানে নেশাখোর, জুয়ারি ও বখাটেদের আড্ডা হয়। সরকারি নজরদারির অভাবে হাসপাতালের স্থাপনাগুলো এখন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। সরকারি সম্পদের চরম ক্ষতি হচ্ছে এবং এলাকার মানুষও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

            আদ্রা ইউপি চেয়ারম্যান মো. রাকিবুল হাসান লিমন জানান, হাসপাতালটি চালু করা গেলে তার ইউনিয়নসহ আশপাশের ইউনিয়নের লাখো মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পেতো। কিন্তু এভাবে ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় জনগণের কোন উপকারে আসছে না।

            বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মো. আবদুল মজিদ জানান, ২০০৩ সালে ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সোনাইমুড়ি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় এবং ওই সময় এর প্রায় ৭০ ভাগ কাজও সম্পন্ন হয়েছে। জানা গেছে, হাসপাতালের ভূমি নিয়ে বিরোধে উচ্চ আদালতে মামলা ও আইনী জটিলতার কারণে নির্মাণ কাজ আটকে রয়েছে।

Share This

COMMENTS